Bengali News

উপঢৌকনের বিনিময়ে রক্তদানের প্রতিবাদে আসানসোলে জীবন সুরক্ষার পক্ষ থেকে পথসভা, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি

আসানসোল মিরর, ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৯, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : স্বেচ্ছা রক্তদান জীবনদান। কিন্তু এই মহৎ কাজেও বর্তমানে কিছু ক্ষেত্রে থাবা বসিয়েছে কিছু পাইয়ে দেবার মানসিকতা।

এই মর্মে গত পরশু আসানসোলের চিত্রা সিনেমা মোড়ের সামনে রক্তদান আন্দোলনের পক্ষে এবং সচেতন আয়োজনের লক্ষ্যে  “জীবনসুরক্ষা ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন এন্ড ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ” এর পক্ষ থেকে একটি পথসভা এবং গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই পথসভায় উপস্থিত ছিলেন দলমত নির্বিশেষে সমাজের বিভিন্ন বর্গের প্রতিষ্ঠিত মানুষজন সহ অসংখ্য  সাধারণ মানুষ। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দুর্গাপুর সাব ডিভিশন ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক এবং ফেডারেশন অফ ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অফ ইন্ডিয়া এর পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক শ্রী কবি ঘোষ, আসানসোল জেলা হাসপাতাল ব্লাড ব্যাংকের মেডিক্যাল অফিসার ডা: সঞ্জিত চ্যাটার্জী, জীবনসুরক্ষার সাধারণ সম্পাদক শ্রী অসীম সরকার, বার্নপুর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার কমিটি অ্যান্ড ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স এর পক্ষ থেকে তঞ্জিমা ধর, বিশিষ্ট সাহিত্যিক অমল মুখোপাধ্যায়, শিক্ষক শ্রী দেবাশীষ চট্টরাজ, শিক্ষক শ্রী বিশ্বনাথ মিত্র এবং সমাজের বিভিন্ন বর্গের প্রতিষ্ঠিত গুনীজনেরা। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আরো রক্তদান আন্দোলনের সাথে যুক্ত অনেক সংগঠন যেমন টিপু সুলতান মেমোরিয়াল সোসাইটি, মুক্তাইচন্ডি প্রমুখ এবং আরও অনেক রক্তদান আন্দোলনের সাথে যুক্ত সমাজকর্মী।

  “জীবনসুরক্ষা”- র সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার বলেন যে, ” স্বেচ্ছায় রক্তদানের সঙ্গে  উপঢৌকনের প্রতিযোগিতাকে তীব্রভাবে বিরোধিতা করছেন এবং এই বিষয়ে গণ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তারা পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে একটি আবেদন আকারে স্বারকলিপি প্রদান করবেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক এবং এ ডি ডি এ        
 চেয়ারম্যান শ্রী তাপস ব্যানার্জির মাধ্যমে। এরই সঙ্গে প্রয়োজনে তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চাইবেন।”
  বস্তুত কিছুদিন আগেই কলকাতার একটি সংগঠনকে  দেখ যায় যে তাদের আয়োজিত রক্তদান শিবিরের স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রত্যেককে একটি করে ইলিশ মাছ এবং ইন্ডাকশন ওভেন   উপঢৌকন হিসেবে দেওয়া হচ্ছে যা সমস্ত ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া তে প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়ে সেই সংগঠনের সদস্যদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা সাবলীল ভাবে জবাব দিয়েছিলেন যে বিগত বছরেও তারা এরকম উপঢৌকন দিয়েছিলেন এবং ভবিষ্যতেও আরো ভালো করে দেবেন। বিষয়টি রক্তদান আন্দোলনের পরিপন্থী কারণ রক্তদান স্বেচ্ছায় দান আর এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়।

   ফেডারেশন অফ ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অফ ইন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ সম্পাদক শ্রী কবি ঘোষ বলেন যে, ” ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে তারা ইতিমধ্যেই অভিযোগ জানিয়েছেন কলকাতায় স্বাস্থ্য ভবনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এবং প্রয়োজনে এরকম কাজে লিপ্ত সংগঠনের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করবেন যাতে তাদের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত হয় কারণ এতে উপঢৌকনের লোভে পড়ে অনেকেই তাদের অসুখ গোপন করে রক্তদান করতে এগিয়ে আসবেন যার পরিণাম মারাত্বক হতে পারে।”
  জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের মেডিক্যাল অফিসার ডা: সঞ্জিত চ্যাটার্জী বলেন, ” একটা সময় আমাদের দেশে প্রফেশনাল ডোনার বা পেশাদার রক্তদাতা বিরাজ করতেন যারা অর্থের বিনিময়ে   অনেক কিছুই গোপন করে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই রক্ত দিতেন। একবার রক্ত দেওয়ার তিন মাস পর স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল হিসেবে আবার রক্ত দেওয়া যায়। কিন্তু উপঢৌকনের লোভে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাগণ সেসব নিয়ম মানবেন না এত বলাই যায়। ফলে সেই রক্ত কাজেই আসবেনা অথবা কোনো রোগ গোপন করে রক্ত দিলে সেটা মারাত্বক আকার নিতে পারে। এ বিষয়ে ২০০৭ সালে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে যাতে অর্থের বিনিময়ে রক্তদানে তিনমাসের  দণ্ডনীয় কারাবাসে বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান উদ্ভুত উপঢৌকনের বিনিময়ে রক্তদান চিকিৎসাক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে কারণ কোনো মানুষ যদি নিজে থেকেই তার অসুখের কথা বলেন যা ক্ষতিকর তাহলে রক্তদাতার তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু এই উপঢৌকনের ধারা শুরু হলে মানুষ তার রোগ গোপন করে রক্ত দেবে।
   এ ব্যাপারে আসানসোলের রক্তদান আন্দোলনের পথিকৃৎ শ্রীযুক্ত প্রবীর ধরের সুযোগ্য কন্যা  তনজিমা ধর বলেন, ” তিনি এবং তার সংগঠন  বার্ণপুর সোশ্যাল ওয়েলফেয়র এন্ড ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স এই উপঢৌকনের বিনিময়ে রক্তদানে রক্তদাতাদের দোষ দেখেন না। কারণ রক্তদাতার স্বেছাতে রক্ত দিতে আসেন কিন্তু তিনি রক্ত দিয়ে যদি দেখেন যে দামী উপঢৌকন দেওয়া হচ্ছে তাহলে নিয়মের পারওয়া না করে রক্তদানের সময় এবং অসুখ গোপন করে রক্ত দিতে উদ্যোগী হবেন যা পড়ে সমাজে মারাত্বক প্রভাব ফেলবে । এ বিষয়ে তিনি সরকারের কাছে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি রাখেন।”
 এরপরেও সাহিত্যিক এবং সমাজের গুনিজনেরা তাদের মূল্যবান বক্তব্য রাখেন এবং সরকারের এই বিষয়ে অবিলম্বে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আবেদন জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *