লকডাউনে আসানসোলে মানবিকতার ছবি ; গরীব , ভবঘুরে এবং আন্ত:রাজ্য বর্ডারে আটকে থাকা মানুষদের জন্য মোটর মেকানীকদের উদ্যোগে করা হলো খাবারের ব্যবস্থা
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, ৩১ শে মার্চ, ২০২০, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত: আবার মানবিকতার নিদর্শন দেখল আসানসোল। দেশব্যাপী ২১ দিনের লকডাউন চলার সময় পথচারী, ভবঘুরে ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করলেন আসানসোল জিটি রোডের ধারে লোরেটো কনভেন্ট স্কুলের উল্টোদিকে মোটরগাড়ির মেকানিকদের একটি দল।
গতকাল একটু বেলা গড়াতেই থেকেই লক্ষ্য করা গেলো পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহরে জিটি রোডের ধারে সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরে রান্নার ঠাকুরকে দিয়ে রান্না করছেন ওই মোটর মেকানিকরা ।
২১ দিনের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বন্ধ করতে দেশব্যাপী লকডাউনের জেরে জরুরী ছাড়া সাধারন সমস্ত পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ । এর সঙ্গে বন্ধ রয়েছে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ।
এই দুঃসময়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীর পরিজনেরা পড়েছেন মহা সমস্যায় । লকডাউন পরিস্থিতিতে খাবারের জন্য ভীষণ সমস্যাই পড়েছেন গরীব মানুষ, পথচারী, ভবঘুরে এবং পরিযায়ী শ্রমিকেরা।
তাদের এই কঠিন পরিস্থিতে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন স্থানীয় ওই মোটর গ্যারাজের মেকানিকেরা।
এ বিষয়ে এই খাবারের ব্যবস্থার আয়োজকদের মধ্যে থেকে গুড্ডু, পাপ্পু, রাজা এবং অমিত বলেন, ” যেদিন থেকে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে সেদিন থেকে আমরা দেখছি প্রচুর ভিন রাজ্যের কাজ হারানো শ্রমিক , পথচারী, ভবঘুরের দল খাবারের সমস্যায় ভুগছেন। সেকারণেই আমরা স্থানীয় মোটর গ্যারাজের মেকানীকেরা তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি এবং সঠিকভাবে ফয়েলের মধ্যে প্যাকেটজাত করে খাবার পরিবেশন করব সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে।
১৫০ প্যাকেট আমরা ২ নং জাতীয় সড়কে এবং ঝাড়খণ্ড পশ্চিমবঙ্গের বর্ডার ডুবুরডিহি চেকপোষ্টে আটকে পড়া ভিন রাজ্যের মানুষদের দেবো এবং বাকি স্থানীয় গরীব মানুষ ভবঘুরের দল কে দেবো। যতক্ষণ আমাদের খাবার থাকবে আমরা দেবো।”
এরপর সফরসঙ্গী হবার ইচ্ছে প্রকাশ করাতে তারা এই সাংবাদিককে সঙ্গে নিলেন এবং ২ নং জাতীয় সড়ক ধরে আন্ত:রাজ্য সীমান্তের দিকে এগোতেই দেখা গেলো একদল যুবক হেঁটে এগিয়ে চলেছেন। গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করাতে সবাইকে অবাক করে দিয়ে যুবকেরা বলল, তারা কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিক। দুর্গাপুর থেকে পায়ে হেঁটে আসছে এবং গন্তব্য বিহারের সমস্তিপুর। বর্ডার সিল থাকা সত্বেও উপায় না দেখে বেরিয়ে পড়েছেন। তাদেরকে ভাত, দল, সবজির প্যাকেট এবং জলের বোতল দেওয়া হয়।
এরপর বর্ডার চেকপোষ্টে দেখা যায় আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা। এসিপি ওয়েস্ট শান্তব্রত চন্দ, ডব্লিউ.বি.পি.এস সহ চৌরঙ্গী আই সি এর ও সি এস আই অনন্ত রায় সহ আরো অফিসারদের দেখতে পাওয়া যায়। বহু রাজ্যের গাড়ি আটকে পড়েছে বর্ডার সব গাড়ির জন্যে সিল করে দেওয়াতে এবং সেগুলিতে বয়স্ক মানুষ, মহিলা এবং বাচ্চারা রয়েছেন। তাদেরকেও জলের বোতল, খাবার দেওয়া হয়।
এরপর রাস্তায় আরো কিছু মানুষকে খাবারের প্যাকেটে ও জল দেওয়া হয়।
নিঃসন্দেহে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে লকডাউনের মাঝেও রাস্তায় ও বর্ডার চেকপোষ্টে আটকে পড়া মানুষ, ভবঘুরেদের জন্যে এই স্থানীয় মোটর গ্যারেজের মেকানিকদের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে দেয় মানবিকতাই সবথেকে বড় ধর্ম এবং এটাই অনুপ্রেরণা যোগাবে সবাইকে।