ASANSOL-BURNPUR

অবশেষে জট খুলল; বাড়ি ফিরলেন আসানসোলের কাছেই পশ্চিমবঙ্গ ঝাড়খন্ড সীমান্তে লক ডাউনের জেরে আটকে থাকা ৪৩ জন

আসানসোল, বেঙ্গল মিরর : ২৬ শে এপ্রিল ২০২০: 
 করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী লকডাউন চলছে। আর এই অচলাবস্থার মধ্যে আসানসোলের কাছে পশ্চিমবঙ্গ – ঝাড়খণ্ড সীমান্তের ডুবুরডিহি চেকপোস্টের কাছে একটি হোটেলে আটকে পড়া প্রায় ৪৩ জন মানুষ অবশেষে কেন্দ্র রাজ্য সহযোগিতায় গতকাল রাজ্যের  নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন। সূত্রের খবর, কেন্দ্রের তরফে এই মর্মে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আলোচনার পর দ্রুততার সঙ্গে ওই হোটেল বন্দী মানুষদের সেফ প্যাসেজ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় ।

ঘটনার সূত্রপাত গতমাসে। বিদেশ ফেরত ওই মানুষেরা কেউ মার্চ মাসের ২০ তারিখ আবার কেউ ২২ তারিখ বিভিন্ন দেশ থেকে এসে দিল্লীতে অবতরণ করেন এবং প্রথা মেনে প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট 
কোয়ারান্টাইন সেন্টারে থাকেন এবং কোয়ারান্টাইন পিরিওড কাটাবার পর তাদের কোভীড -১৯ স্ক্রিনিং টেস্ট করা হয় । এরপর টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর  তারা কেউ সাউথ ওয়েস্ট দিল্লি অথবা কেউ নর্থ দিল্লীর জেলাশাসকের তরফ থেকে ট্রানজিট পাস পান। 
   এরপর তাদের সেখান থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। এরপর কেউ ১২ এপ্রিল এবং কেউ ১৩ এপ্রিল দিল্লী থেকে গাড়ি ভাড়া করে অন্যান্য সমস্ত রাজ্য পেরিয়ে এলেও পশ্চিমবঙ্গ ঝাড়খণ্ড সীমান্ত ডুবুরডিহি চেকপোষ্টে এসে  আটকে পড়েন গত ১৩ ই মার্চ ও ১৪ ই মার্চ। কারণ পশ্চিমবঙ্গ করোনা পরিস্থিতির আবহে সীমান্ত সম্পূর্ণ সিল করে দেওয়া হয়। অনেক চেষ্টা করেও উপায় না দেখে ঝাড়খণ্ডের দিকে ২ নং  জাতীয় সড়কের ধরে হোটেল   সুমনদীপে আশ্রয় নেন। পুলিশের উচ্চ মহলেও খবর যায় যাতে তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। কিন্তু অনুমতি আসতে সমস্যা দেখা দেয়। এই আটকে পড়া মানুষগুলোর পরিবার পরিজনের তরফ থেকেও মুখ্যসচিব  এবং আরও প্রশাসনের ব্যক্তিদের। ওই হোটেলে আটকে থাকা মানুষদের মধ্যে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলা  ছিলেন তার স্বামীকে নিয়ে। তারা হংকং থেকে ২০ মার্চ দিল্লী ফিরেছিলেন। তাদের ওষুধ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল।
   এদিকে আসানসোলে ক্যান্সার আক্রান্ত  মহিলার এই  কোনোভাবে এই খবর তার এক পরিচিত শিক্ষক অনিক মুখার্জির কাছে পৌঁছয় এবং শিক্ষক অনিক ওষুধের ব্যবস্থা করলেও সমস্যা দেখা দেয় জীবনদায়ী ওষুধ ঝাড়খণ্ডে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে এবং অনিক যোগাযোগ করেন শিল্পাঞ্চলের এক সাংবাদিক সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তর সঙ্গে। সাংবাদিক যোগাযোগ করেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের এ সি পি ট্রাফিক- ১ সুকান্ত ব্যানার্জীর সঙ্গে এবং কুলটি ওসি ট্রাফিক শুভেন্দু চ্যাটার্জীর সঙ্গে। এরপর পুলিশের সহযোগিতায় সাংবাদিক ও অনিকবাবু ওই দম্পতির কাছে ওষুধ পৌঁছে দেন এবং সেখানে তারা জীবনদায়ী ওষুধ হাতে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন এবং তিনি যাতে তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে তাদের মধ্যমগ্রামের বাড়িতে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারেন সেই অনুরোধ সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রাখেন।

 আরেকটি সূত্রে খবর ওই অসুস্থ ক্যান্সার রোগীর ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল ওনাদের সাথে যোগাযোগ করে কথা বলেন এবং তারপরই অগ্নীমিত্রা কথা বলেন রাজ্যের চিফ সেক্রেটারি শ্রী রাজিভা সিনহা, আই এ এস এর সঙ্গে। চিফ সেক্রেটারি ব্যাপারটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে আশ্বাস দেন। 
 এরই মধ্যে বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমের খবরের জেরে খবর এই খবর যায় কলকাতায় রাজ্য বিজেপির  স্বাস্থ্য পরিষেবা সেলের কার্য কর্তাদের কাছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে ই মেল করে গোটা ব্যাপারটি জানায় কেন্দ্রীয় স্বরস্ত্র দপ্তর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে। শোনা যাচ্ছে, কলকাতা থেকে এই ই মেল পৌঁছানো মাত্র তৎপরতার সঙ্গে কেন্দ্র সরকারের সংলিষ্ট দপ্তর হোটেল কর্তৃপক্ষ কে ফোন করেন এবং হোটেলে আটকে থাকা মানুষজনকে ফোন করেন এবং সবশেষে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে এই ব্যাপারটি জানিয়ে দেওয়া হয় এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আটকে পড়া মানুষদের বাড়ি পৌঁছে দেবার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

বাড়িতে ফিরে আসার পর ওই সমস্ত মানুষ কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়কেই ধন্যবাদ দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *