পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুরে ৩০ শে জুন সরকারিভাবে পালিত হলো আদিবাসীদের “হুল উৎসব”; উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক, বিধায়ক, প্রজেক্ট অফিসার, আসানসোল মহকুমাশাসক, বিডিও এবং অন্যান্য
এদিন সালানপুরের জিৎপুর – উত্তর রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘিয়াডোবা ফুটবল ময়দানে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বারাবনি বিধায়ক শ্রী বিধান উপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি, অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের প্রকল্প আধিকারিক শুভজিৎ বসু, আসানসোলের মহকুমাশাসক
উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ মহম্মদ আর্মান , জেলা পরিষদ সদস্য কৈলাসপতি মন্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ফাল্গুনী কর্মকার, জিৎপুর – উত্তর রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তাপস সরকার, সালানপুর থানার আই সি ও আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও গুণী জনেরা। এরই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অনেক সুপরিচিত সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
সালে সেটা বেড়ে হয় ৪৩,৯১৮ টাকা । এ ছাড়া তারা যেসব জীবজন্তু শিকার করত তাদের উদরপূর্তি করতে তা সব মহাজন,জমিদার , দারোগারা কেড়ে নিত । বসতি জমির উপর তাদের কোন মালিকানা দেওয়া হতনা । উপরন্ত ঐ সব জমিতে তাদেরকে দাসের মত খাটিয়ে ফসল উৎপাদন করানো হতো যাতে তাদের কোন অধিকার ছিলনা । মহাজনরা চড়া হারে সুদের কারবার করত তাদের সাথে । জমিদাররা নিপীড়ন করত নানাভাবে । এই অমানবিক শোষণ বঞ্চনা নিপীড়নের বিরুদ্ধে সিদু , কানু, চাঁদু ও ভৈরব – এই চার ভাইয়ের নেতৃত্বে সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নেন । ১৮৫৪ সালের শেষ থেকে ১৮৫৫ সালের শুরু পর্যন্ত বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ব্যাপূ আন্দোলন বিক্ষিপ্ত ভাবে হতেই থাকে । অবশেষে ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ভাগলদিঘি গ্রামে ৪০০ জন সাঁওতাল প্রতিনিধি বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এক সভায় মিলিত হন । সেখানে তারা এই শাসনের শোষণের অবসানের নিমিত্তে স্বাধীনতার দাবি গ্রহন করে এক দাবী সনদ পেশ করেন দারোগা , ম্যাজিস্ট্রেট ,ও জমিদারের কাছে । ১৫ দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয় । আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রায় ৫০০০০ আদিবাসী কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করেন দাবী সনদ নিয়ে । ব্রিটিশ সরকার প্রমাদ গুনে । চারিদিকে থানা, নীলকুঠি ,সৈন্যঘাটি আক্রান্ত ও ধ্বংস করে বিদ্রোহীরা । বড়লাট লর্ড ডালহৌসি মার্শাল ল জারী করে এই সাঁওতাল বিদ্রোহ দমন করার জন্য ১৫০০০ সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে কামান বাহিনি ও হস্তিবাহিনি দিয়ে অভিযান করান । এই অভিযানে ১০০০০ সাঁওতাল প্রাণ হারান । আন্দোলনকারীরা বাহিনীর সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে গভীর জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নেন । এই বিদ্রোহে সাঁওতালদের সঙ্গে তখনকার অনেক শোষিত মানুষও যোগ দেন । বিদ্রোহের আগুন কিন্তু ধিকি ধিকি করে বিহার, মুর্শিদাবাদ , বীরভূমের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে জ্বলতেই থাকে । যা দমন করতে ব্রিটিশ শাসকদের খুব বেগ পেতে হয়েছিল । ভাগলপুরে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে চাঁদ ও ভৈরব নিহত হন । ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিদুকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করা হয় । বীরভূমে কানু ধরা পড়ে । পরে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় । ফাঁসীর মঞ্চে কানু বলেছিলেন -” আমি আবার ফিরে আসব , সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দেব” ।