ASANSOLBARABANI-SALANPUR-CHITTARANJANBengali NewsWest Bengalखबर जरा हट के

বুজিয়ে ফেলা ডোবাকে পুকুরে পরিণত করে প্রাণ ফিরিয়ে দিলেন সালানপুর থানার ওসি ও তার সহকর্মীরা

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল: মাত্র মাস সাতেক আগেই পশ্চিম বর্ধমান জেলায়  এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল  প্রায় চল্লিশটির বেশি  পুকুর বিভিন্ন জায়গায় ভরাট করা হয়েছে। এই নিয়ে  তদানীন্তন জেলাশাসক  অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে জেলার মৎস্য দপ্তরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন  পুকুরগুলোকে পুনরায় উদ্ধার করার জন্য ।চারিদিকে যখন পুকুর বুজিয়ে জমি মাফিয়া রা তা প্রধানত প্রোমোটারদের হাতে তুলে দিচ্ছে তখন তার বিপরীত দিকে হেঁটে সালানপুর থানা চত্বরে অনেক আগে  বুজিয়ে ফেলা ডোবাকে একটি পুকুরে পরিণত করে পুণরায় প্রাণ ফিরিয়ে দিলেন সালানপুর থানার ওসি ইন্সপেক্টর পবিত্র কুমার গাঙ্গুলী  ও তার সহকর্মীরা। শুধু পুকুরটিকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েই তিনি ক্ষ্যান্ত নন, তাতে রীতিমতো মাছের চারা ছেড়ে মাছ চাষের ব্যবস্থাও করলেন নিজের উদ্যোগে। 


পুকুরে মাছ চাষ

নতুন করে কাটানোর ফলে এই পুকুরটির আকারও বিশাল হয়েছে । প্রায় ৫০ ফুট লম্বা, কুড়ি ফুটের বেশি চওড়া এবং সাত ফুটের উপরে গভীর এই পুকুর বর্ষার জলে একেবারে  টইটম্বুর। এই পুকুরে ডিভিসি মাইথনের হ্যাচারি থেকে প্রচুর রুই-কাতলা ইত্যাদি মাছের চারা এনে ফেলা হলো। নিজের উদ্যোগেই তিনি মাছের চারা জোগাড় করেছেন। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জেনেও নিয়েছেন কিভাবে মাছেদের দেখভাল করতে হবে, খাবার-দাবার দিতে হবে, কখন জলে চুন দিতে হবে আবার কখনই বা পোকার উপদ্রব দূর করার জন্য কিছু পরিমাণ কেরোসিন দিতে হবে জলে। এখন তার প্রতীক্ষা কখন মাছের চারাগুলি আপন মনে খেলে বেড়াবে থানা চত্বরের এই নতুন পুকুরে।

পবিত্র বাবু জানালেন এই গ্রীষ্মে তিনি হঠাৎই দেখতে পান থানা চত্বরে একটি বড় পুকুর প্রায় বুজিয়ে ফেলা হয়েছিল।  বিষয়টিকে তিনি মেনে নিতে পারেন নি।  একটি পুকুরের কত যে গুরুত্ব তা তিনি জল কষ্টে গ্রামের দিনে ভালোই উপলব্ধি করেছেন।  ফলে বিলম্ব না করে নিজেই থানার অন্যান্য আধিকারিক, কর্মী অফিসার সিভিক -দের নিয়ে কোদাল হাতে নেমে পড়েন মাটি কাটতে।  তাই দেখে এগিয়ে আসেন আশেপাশের কিছু সামাজিক ব্যক্তি এবং সকলের উদ্যোগে কয়েকদিনের মধ্যেই মজে যাওয়া ডোবাটি একেবারে পুরোদস্তুর একটি পুকুরের চেহারা পেয়ে যায়‌। কিন্তু তাতেও গভীরতা বাড়ানোর সময় মনে হয়েছে পেশাগত কিছু কর্মী নিয়োগ করার দরকার।  এর পরেও পবিত্রবাবু নিজেদের অর্থ খরচ করে কিছু শ্রমিককে এখানে মাটি কাটার জন্য লাগিয়ে দেন এবং চারিদিকে পাড় সমেত রীতিমত একটি পুকুর হয়ে উঠল থানার নিজস্ব সম্পদ। আর এখানে পিএইচইর জলের লাইন করে সম্প্রতি জলের সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছেন আমাদের বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়।

যদিও ব্যতিক্রমি ভাবনা চিন্তার মানুষ পবিত্র বাবু  ভাস্কর্য্য,ছবি আঁকা ,কাটুমকুটুম সহ শিল্পকলায় তার যথেষ্ট জ্ঞান এবং চর্চা তাকে সংস্কৃতি মহলে বিশেষ পরিচিতি দিয়েছে। কলকাতা সহ ভারতের বিভিন্ন বড় শহরে তার ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। বিভিন্ন ফেলে দেওয়া লোহার জিনিস পত্র সংগ্রহ করে তিনি নিজে হাতে একটি অসাধারণ বড় ঘোড়া তৈরি করে থানার সামনে লাগিয়ে রেখেছেন যা সত্যিই দেখার মতো। তিনি বলেন এই পুকুর পাড়ের চারদিকে সুন্দর করে গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন করার চেষ্টা করব। এবার সেই সব দৃষ্টান্তের সঙ্গে যোগ হলো সালানপুর থানা চত্বরে একটি পরিপূর্ণ পুকুর খনন। যেখানে জলের অভাব দূর হওয়ার সঙ্গেই পাওয়া যাবে টাটকা তাজা মাছ। তিনি বদলি হয়ে যাবার পর নতুন কেউ এসে  হয়তো অবৈধ কয়লা আটক করে তা দিয়ে পুকুরটা ভরাট  করে দেবে কিনা  এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যেভাবে এটা তৈরি করা হয়েছে তাতে মনে হয় না কেউ আর পুকুরটি ভরাট করার কথা ভাববেন। প্রকৃতিকে ভালো না বাসলে নিজের কাজকেও ভালোবাসা যায়না। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *