গলসিতে শিশু অপহরণ করে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন, টাকা ন পেয়ে শিশুকে হত্যা
তীব্র উত্তেজনা, গ্রেফতার তিন
বেঙ্গল মিরর, বিজু মন্ডল, গলসি: একটি শিশু (CHILD) কে অপহরণ (KIDNAPPING) করে দুষ্কৃতীরা সাত লক্ষ টাকা ( 7 LAC RUPPES) মুক্তিপণ (RANSOM) দাবি করল শিশুর টির বাবার কাছে। আর এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার সাঁকো এলাকায়। বুধবার রাতে শিশুটির বাবাকে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। বেশ কয়েকবার ফোন করা হয় টাকার জন্য বলে জানিয়েছেন শিশুটির পিতা বুদ্ধদেব দলুই। চরম আশঙ্কা আর আতঙ্কে গলসি থানায় এবিষয়ে অভিযোগ জানানোর পর গলসি থানার পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে তদন্তে নেমে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। বাকি গোটা ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে জেলা পুলিশ। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় তীব্র আলোড়ন পড়েছে এলাকায়।
সাত লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন
পুলিশ সূত্রে খবর, সাঁকো মেটে পাড়ার বাসিন্দা বুদ্ধদেব দলুই-এর ৯ বছরের ছেলে সন্দীপকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বুধবার মনসা পুজো উপলক্ষ্যে সাঁকো গ্রামে উৎসব চলছিল। পরিবারের দাবি, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বুদ্ধদেববাবুর মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণের দাবি করা হয়। জানানো হয়, বুদ্ধদেব বাবুর ছেলেকে অপহরণ (KIDNAPPING) করা হয়েছে। ছাড়াতে ৭ লক্ষ টাকা লাগবে। আর ফোন পেয়ে এরপরই স্বাভাবিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে উঠেন বুদ্ধদেববাবু ও তাঁর স্ত্রী সাত্ত্বনা। শুরু হয় খোঁজখুজি। কিন্তু পাড়ার কোথাও ছেলের সন্ধান পাইনি পরিজনেরা। আতঙ্ক এরপর আরও চেপে বসে পরিবারের সকলের মধ্যে।
সূত্রে খবর, সাঁকো গ্রামের মেটে পাড়ার মনসা মন্দির থেকে ৫০ মিটার দূরে বুদ্ধদেববাবুর নিজের বাড়ি। বুদ্ধদেব বাবু পেশায় ক্ষেত মজুর। পাশাপাশি তিনি গলসি ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ তথা বর্তমানে সাঁকো গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। বুদ্ধদেববাবু জানান, পাড়ার পুজো উপলক্ষ্যে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। ছেলেরা সব মনসাতলাতে ছিল। এমন সময় এক অজনা নম্বার থেকে তাঁর মোবাইলে ফোন আসে। বলা হয়, তাঁর ছেলে তদের কব্জায় রয়েছে। ছেলেকে পেতে হলে সাত লক্ষ টাকা দিতে হবে। আর এরপরই তিনি ও পাড়া প্রতিবেশী খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিন্তু ছেলের সন্ধান পাননি দলুই দম্পত্তি।
প্রথমে মুক্তিপণ সাত লক্ষ টাকা চাওয়া হলেও পরে ৩ লাখ টাকা দাবি করা হয়
পূলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অপহরণের ( KIDNAPPING) মামলা দায়ের হয়েছে। যে মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল সেই নম্বর ধরেই তদন্ত চলছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত পাঁচ বার ফোন করা হয়েছে বুদ্ধদেব বাবুর ফোনে। প্রথমে মুক্তিপণ সাত লক্ষ টাকা চাওয়া হলেও পরে ৩ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বুদ্ধদেববাবুর স্ত্রী সাত্ত্বনাদেবী জানান, অপহরণকারীদের ফোনেই হাতে পায়ে ধরাধরি করে ছেলেকে ফিরিয়ে দেবার কাতর আবেদন জানানো হয়। তাদের এও বলা হয়, তাঁদের এতো টাকা নেই। সব সম্পত্তি বেচে দিলেও এক লাখ হবে না। টাকা দেবো কোথা থেকে। আর এরপর রাতেই মনসা পুজোর সব অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পাড়া প্রতিবেশিরা। তবুও কোথাও ছেলের হদিস পায়নি বুদ্ধদেব বাবু ও গ্রামের মানুষ।
পুলিশের সমস্ত চেষ্টা কে বিফল করে শেষমেষ শুত্রুবার সাতসকালে ক্যানেলের জল থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হল অপহরণ হয়ে যাওয়া গলসি থানা এলাকার সাঁকো গ্রামের ৯বছরের সন্দীপ দলুইয়ের নিথর দেহ (DEAD BODY)।
তিনজন কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ
নৃশংস আর পৈশাচিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ সন্দীপের পরিবার থেকে গোটা গ্রাম। অপহরণ (KIDNAPPING) ও খুনে (Murder) জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে গলসি থানার পুলিশ স্থানীয় সাঁকো মেটেপাড়া এলাকার তিনজন কে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম সুব্রত মাঝি(২০) ওরফে বাদশা, বাড়ি সাঁকো ডোম পাড়া। দ্বিতীয় জনের নাম জয়ন্ত বাগ(২০) ওরফে নিরঞ্জন, বাড়ি মেটেপাড়া। তৃতীয় জনের নাম মঙ্গলদীপ দলুই(১৮) ওরফে বাবু, বাড়ি সাঁকোর মেটেপাড়া।