১৬ ই ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের DA দিতেই হবে
রাজ্যকে চূড়ান্ত সময়সীমা SAT এর নির্দেশ
বেঙ্গল মিরর, কলকাতা, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা মামলায় ফের বড়সড় ধাক্কা রাজ্য সরকারের৷ সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা অবিলম্বে ১৬ ই ডিসেম্বরের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল স্যাট বা স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল৷ বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে রাজ্যকে বড়সড় ধাক্কা দিয়ে স্যাটের তরফে অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে৷
এবার যদি নির্দেশ কার্যকর না হয়, তাহলে পরিবর্তী শুনানিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷
কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পর স্যাটের তরফে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা মিটিয়ে দিতে৷ ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হওয়ার আগে তা মিটিয়ে দিতে হবে৷ কিন্তু, চলতি বছর থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হলেও মেলেনি মহার্ঘ ভাতা৷ স্যাটের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ যদিও সেই আর্জি আগেই খারিজ করে দিয়েছিল ট্রাইবুনাল৷ এবার ফের বকেয়া ডিএ মামলার শুনানিতে আগের নির্দেশ পুনর্বহাল করল স্যাট৷
আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত বকেয়া মেটানো নির্দেশ দেয়া হয়েছে
এর আগে ছ’মাসের বেতন কমিশন কার্যকর হয়েছে ৫০ মাস অতিক্রম করে৷ ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হলেও বর্ধিত বেতন থেকে উধাও ‘মহার্ঘ ভাতা’৷ এই নিয়েও শুরু হয়েছিল বিতর্ক৷ মহার্ঘ ভাতা আদৌ মিলবে কি না, এবিষয়ে গত ২৬ জুলাই ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী পরিষদের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে মহার্ঘ ভাতা মামলার রায় ঘোষণা করে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল৷
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হচ্ছে না৷ এই মামলায় রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল চূড়ান্ত রায় দিয়েছিল গত বছর ২৬ জুলাই৷সেই রায়ে ট্রাইবুনাল বলেছিল, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার আগে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘভাতা দিতে হবে অর্থাৎ নতুন পে কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার আগে৷ কিসের ভিত্তিতে এই মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল তাদের রায়ে উল্লেখ করে দিয়েছিল৷ কিন্তু, রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ কার্যকর করা তো দূরের কথা, এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি৷
সরকারি কর্মীদের দিতেই হবে মহার্ঘ ভাতা
রাজ্য সরকার ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য দেওয়া হয়নি৷ এর ফলে স্যাটের রায় পালন না করার জন্য আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়৷ রাজ্য সরকার স্যাটের রায় পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানায়৷ রাজ্যের সেই আর্জির খারিজ করে আজ স্যাটের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্য সরকারি কর্মীদের দিতেই হবে মহার্ঘ ভাতা৷ বছর শেষেই তা মিটিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল৷ আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এই নির্দেশ এবার যদি কার্যকর না হয়, তাহলে পরবর্তী শুনানিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷
চূড়ান্ত রায়ে স্যাটের তরফে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, গত বছর সেপ্টম্বরের মধ্যে ৩ মাসের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়ে নীতি নির্ধারণ করতে হবে রাজ্য সরকারকেই৷ ৬ মাসের মাধ্যে ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হওয়ার আগে মেটাতে হবে বকেয়া৷ কিন্তু বাস্তবে তা করা হয়নি৷ এরপর অক্টোবর মাসে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে রাজ্য৷ নিয়োগ অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে হয়৷
কিন্তু, তা হয়নি৷ আদালতে সেই মামলা গ্রহণ করা হলেও তা খারিজ করে দেয় স্যাট৷ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফে দিল্লি আদালতের একটি রায় তুলে ধরে জানানো হয়, করোনার জেরে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে৷ফলে এক্ষেত্রে যেন তাই করা হোক৷ কিন্তু, সেই দাবি দাবি গ্রহণযোগ্য হয়নি স্যাটে৷ স্যাটের তরফে জানানো হয়, মূল রায় আগেই দেওয়া হয়েছে৷ তা নিয়ে অনেক শুনানিও হয়ে গিয়েছে৷ ফলে, রায় ঘোষণার পর কোনও মামলার বিবেচনার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না৷
এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের কোনও বক্তব্য থাকে তাহলে তারা উচ্চ আদালতে যেতে পারে৷ গতবছর জুলাই মাসে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, সেই রায় পুনর্বহাল করেছে স্যাট৷ একইসঙ্গে আজ রায় পুনর্বিবেচনা করার আর্জি যেটি আগে জানানো হয়েছিল, তাও খারিজ হয়ে গিয়েছে৷
ফলে এই মুহূর্তে কলকাতা হাইকোর্টে অথবা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ রাজ্য সরকারের হাতে নেই বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল এবং সরকারি কর্মচারীদের একাংশ৷