বাড়ি থেকে রক্তাক্ত গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার হওয়া আইনজীবীর ১১ দিন পরে মৃত্যু
আসানসোল খুনের মামলা করে তদন্ত শুরু পুলিশে,একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ
বেঙ্গল মিরর,রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত, আসানসোল, ৫ জানুয়ারিঃ আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ আসানসোলের নর্থ হিলভিউ পার্ক এলাকার একটি বাড়ি থেকে গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া আইনজীবির ১১ দিন পরে মৃত্যু হলো। সোমবার রাতে আসানসোল জেলা হাসপাতালের সিসিইউতে ঐ আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছিলো আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ ।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকা ও আইনজীবী মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জানায় , বছর ৪০ এর অম্লান চৌধুরী নামে ঐ আইনজীবীর বাড়ি আসানসোলের চেলিডাঙ্গার সাহানা এ্যাপার্টমেন্টে। তিনি আসানসোল জেলা আদালতের আইনজীবী ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে আইনজীবীর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়।
পুলিশের বিরুদ্ধে ঢিলেমি ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন
এরপরে মৃতদেহ আসানসোল আদালতে বার এ্যাসোসিয়েশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অমিতাভ মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য আইনজীবীরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তারপর মৃতদেহ সৎকারের জন্য শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বার এ্যাসোসিয়েশন ও আসানসোল আদালতের আইনজীবীরা এই ঘটনার তদন্ত করা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ঢিলেমি ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন। পাশাপাশি তারা দূর্গাপুরের যে বেসরকারি হাসপাতালে আহত অবস্থায় ৮ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন অম্লান চৌধুরী, সেই হাসপাতালের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন।
পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করুক
বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এদিন বলেন, পুলিশ কি তদন্ত করছে, আমরা কিছু জানিনা। মামলার তদন্তকারী অফিসার আমাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেননি। আমরা চাই, পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করুক।
অন্যদিকে, আসানসোল দক্ষিণ থানায় পুলিশ ঐ আইনজীবীর এক পরিচিতর করা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৭ নং ধারায় খুনের চেষ্টার মামলা করে তদন্ত করেছিলো। কিন্তু, সোমবার রাতে তার মৃত্যুর পরে ৩০২ নং ধারায় নতুন করে খুনের মামলা করেছে। জানা গেছে, পুলিশ যে বাড়ি থেকে অম্লান চৌধুরীকে আহত অবস্থায় পাওয়া গেছিলো, সেই বাড়ির মালিক সহ একাধিক ব্যক্তিকে এখনো পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু, পুলিশ ঐ আইনজীবীকে খুন করার কোন সূত্র হাতে পায়নি।
এই প্রসঙ্গে এদিন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি ( সেন্ট্রাল) ঈশানী পাল বলেন, এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সবকিছু খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয় নি।
গত, ২৪ ডিসেম্বর রাতে পুলিশ গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছিলো। পরে তাকে জেলা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় দূর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেই হাসপাতাল থেকে গত ২ জানুয়ারি রাতে আবার আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা গেছে, ধারালো ছুরি, ব্লেড বা ক্ষুর জাতীয় কিছু দিয়ে তার গলা কাটা হয়েছিলো।
পুলিশ জানায়, অম্লান চৌধুরীকে রক্তাক্ত অবস্থায় যে বাড়ি থেকে পাওয়া যায়, সেই বাড়ির মালিকের নাম হলো সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনি গত দুবছর ধরে এই বাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে হিলভিউ এলাকায় অন্য একটি বাড়িতে থাকছেন। তার ওই বাড়িটি তালা বন্ধই থাকতো। তিনি এই বাড়িটি বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন। বাড়ির চাবি অম্লান চৌধুরীর কাছে থাকতো। ২৪ ডিসেম্বর রাতে এলাকার বাসিন্দারা দেখতে পান যে, ঐ বাড়ির দরজার তালা খোলা অবস্থায় রয়েছে। বাড়িতে চুরি হয়েছে বলে অনুমান করেন তারা। সঙ্গে সঙ্গে তারা সুশান্তবাবুকে ফোন করেন। সুশান্তবাবু তা শুনে আসানসোল দক্ষিণ থানায় খবর দেন।
পুলিশ এলাকায় এসে বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখে অম্লানবাবু রক্তাক্ত অবস্থায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে। পুলিশ জানায়, ২৩ ডিসেম্বর বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন ঐ আইনজীবী। তার পরিবারের তরফে সে যে নিখোঁজ রয়েছে, তার কোন অভিযোগ থানায় করেনি । মাঝেমধ্যেই ঐ আইনজীবী রাতে বাড়ি আসতো না। বাড়ির মালিক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় পুলিশকে বলেছিলেন, তার বাড়ির দরজার তালা খোলা আছে। পুলিশের অনুমান, চাবি দিয়ে তালা খুলেই বাড়ির ভেতরে ঢোকা হয়েছিলো।