ASANSOL

নাবালকের মৃত্যুর পরে গ্রেফতার দম্পতি,বাড়িতে কাজ করানো জন্য নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ

ঠাকুমার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের মামলা / পাশে জেলা চাইল্ড লাইন

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১২ জানুয়ারিঃ বাড়িতে কাজ করানোর নাম করে নিয়ে গিয়ে এক নাবালকের উপরে শারীরিক অত্যাচার ও ঠিক মতো খাবার খেতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠলো আসানসোলের বাসিন্দা এক দম্পতির বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে ঐ নাবালকের মৃত্য হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে।

তারপরই আসানসোলের কুলটি থানার নিয়ামতপুর থানার পুলিশ দম্পতিকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের নাম হলো মনোজ লোহারিকা ও পুনম লোহারিকা। মঙ্গলবার ধৃতদের আসানসোল জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী মনোজ সিং বলেন, আগামী ২৫ জানুয়ারি ধৃতদের আবার আদালতে পেশ করার জন্য বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন।

sample photo


আসানসোলের কুলটি থানার নিয়ামতপুরের বাসিন্দা মৃত নাবালকের নাম শিবপ্রসাদ বর্মন (১৩)।
মঙ্গলবার আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, জেলার চাইল্ড লাইন এই ঘটনার কথা আগে জানায়। তারপর নাবালকের ঠাকুমা কালো দেবী বর্মন আমাদের লিখিত ভাবে অভিযোগ জানান। সোমবার রাতে নাবালকের মৃত্যু পরে অভিযুক্ত দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন, অনিচ্ছাকৃত খুন সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে।


মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাজির নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্টের ভিত্তিতে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নাবালকের দেহর ময়নাতদন্ত করা হয়।


জানা গেছে, নিয়ামতপুরের বাসিন্দা ১৩ বছরের শিব প্রসাদ বর্মনের বাবা আগেই মারা গেছেন। তার মা মানসিক ভারসাম্যহীন। তাকে ঠাকুমা কালো দেবী বর্মন মানুষ করেছেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে লক ডাউনে নিয়ামতপুরের বাসিন্দা এক মহিলার মাধ্যমে নাতিকে আসানসোলের বাসিন্দা দম্পতি মনোজ লোহারিকা ও পুনম লোহারিকার বাড়িতে কাজের জন্য পাঠান। কালো দেবী বর্মন এদিন বলেন, সাতদিন পরে আমাকে নিয়ামতপুরের একটি ঔষধের দোকানে ডেকে নাতিকে দেওয়া হয়। বলা হয়, নাতি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এরপর আমি নাতিকে বাড়িতে নিয়ে আসি। দেখি সে খুব অসুস্থ। তার কথা বলারও ক্ষমতা ছিলোনা। তারমধ্যে আমাকে সে বলে, আমাকে ওরা মারধর করতো। ভালো করে খেতে দিতোনা।


এরপর শিব প্রসাদ একমাস বাড়িতে ছিলো। তারপর প্রতিবেশীরা তার অসুস্থতার কথা জানতে পারেন। তারা তাদের পাশে দাঁড়ান। এরমধ্যে এক ব্যক্তি শিব প্রসাদের শারীরিক অবস্থার ভিডিও তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। সেই পোস্ট দেখে জেলা চাইল্ড লাইন বা চাইল্ড কেয়ার কমিটি পদক্ষেপ নেন। কমিটির তরফে নাবালকের বাড়িতে যাওয়া। তারা অসুস্থ শিব প্রসাদকে ২০২০ সালে ১২ নভেম্বর আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টানা দুমাস চিকিৎসা হওয়ার পরেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি। সোমবার রাতে জেলা হাসপাতালে শিব প্রসাদের মৃত্যু হয়।


একমাত্র নাতির মৃত্যুর পরে কার্যত ভেঙে পড়েন ঠাকুমা কালো দেবী বর্মন। তিনি বলেন, কাজ করতে নিয়ে যাওয়ার নাম ওরা নাতিকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেললো। আমি ওদের শাস্তি চাই।
চাইল্ড লাইনের তরফে বলা হয়েছে, গোটা বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তা দেখছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *