আদালতে আরো তথ্য প্রমাণ পেশ সিবিআইয়ের, সওয়াল-জবাব শেষে আবার জামিন নাকচ এনামুলের
পরবর্তী শুনানি ১০ ফেব্রুয়ারি, ৭ দিনের জন্য জেল হাজতে গরু পাচার মামলায় ধৃত এনামুল হক
বেঙ্গল মিরর,রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৩ ফেব্রুয়ারিঃ সওয়াল-জবাবের শেষে এবারও জামিন পাওয়া হলো না গরু পাচার মামলায় অন্যতম ধৃত এনামুল হকের। বুধবার তার আরো ৭ দিনের জেল হাজত হয়েছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয়েছে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি। এদিন সিবিআইয়ের তরফে বেশকিছু তথ্য সহ কাগজ আদালতের বিচারকের কাছে জমা দেওয়া হয়। বুধবার সকালে এনামুলকে আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগার থেকে পুলিশের কড়া পাহারায় আসানসোলে বিশেষ সিবিআই আদালতে আনা হয়।
জেরা করে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দেওয়ার মতো কোন তথ্য এখনো সিবিআই আদালতে পেশ করতে পারেনি
সিবিআইয়ের বিচারক জয়শ্রী বন্দোপাধ্যায়ের এজলাসে সকাল থেকে এনামুল হকের আইনজীবী শেখর কুন্ডু তার জামিনের হয়ে জোর সওয়াল করেন। তিনি বলেন, আমার মক্কেল সবমিলিয়ে ৮৪ দিন সিবিআইয়ের কন্ট্রাক্টে রয়েছে। যারমধ্যে ৫৫ দিন জেলে রয়েছে। তাকে জেরা করে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দেওয়ার মতো কোন তথ্য এখনো সিবিআই আদালতে পেশ করতে পারেনি। এই মামলায় ২ জনকে ধরা হয়েছে। আরো ২ জনের নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। সেই দুজনের নামে অন্য মামলাও রয়েছে। তারা কোথাও কেউ জানেনা।
সিবিআই এখনো পর্যন্ত এমন কোন কিছু যোগাড় করতে পারেনি, যা প্রমান হয় যে, এনামুল গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তিনি এজলাসে আরো সওয়াল করে বলেন যে, এখানে কোন গরু পাচার বা স্মাগলিং হয়নি। যে গরু পাচারের কথা বলা হচ্ছে, তার কোন ভিত্তি নেই। গরু নিলাম করা হয়েছে। সেইসব গরু তো চাঁদ আসেনি। রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
সেইসব গরু উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খন্ড থেকে এসেছে। সেইসব জায়গায় কাউকে এই মামলায় ধরা হয়নি। আমার মনে হচ্ছে, ঐসব রাজ্য অন্য একটা দলের সরকার আছে বলে, সেখানে কিছু করা হচ্ছে না। এই পশ্চিমবঙ্গে অন্য একটা রাজনৈতিক দলের সরকার রয়েছে, তাই এই মামলায় এতো তৎপরতা। এমনটা বলা যায় না যে, সিবিআইয়ের উপরে চাপ থাকেনা। শেখরবাবু আবেদন করে বলেন, তার মক্কেল তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করছে ও আগামী দিনেও করবে। তাই তাকে যেকোন শর্তে জামিন দেওয়া হোক।
তাকে জামিন দেওয়া হলে, এই মামলার অনেক ক্ষতি হবে
অন্যদিকে, এনামুল হকের জামিনের বিরোধিতায় সিবিআইয়ের আইনজীবী কালিচরন মিশ্র ও রাকেশ সিং পাল্টা সওয়াল করে বিচারককে বলেন, আমরা অনেক কাগজ জমা দিয়েছি। এখনই তাকে জামিন দেওয়া হলে, এই মামলার অনেক ক্ষতি হবে। সে যথেষ্টই প্রভাবশালী। সে জামিন পেয়ে বাইরে গেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করব প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবে। তাকে ১৪ দিনের জন্য জেলে পাঠানো হোক। তখন এনামুল হকের আইনজীবী শেখর কুন্ডু বলেন, তা কি করে হবে? ৫৫ দিন তো জেল হাজতে থাকা হয়ে গেছে। ৬০ দিন তো নির্দিষ্ট রয়েছে। এরপর বিচারক সিবিআইয়ের জমা দেওয়া তথ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখেন।
শেষ পর্যন্ত সওয়াল-জবাবের শেষে বিচারক জয়শ্রী বন্দোপাধ্যায় এনামুল হকের জামিন নাকচ করে ৭ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। বিচারক বলেছেন, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী দিন শুনানির জন্য ধার্য হয়েছে। সেদিন আবার এনামুল হককে এজলাসে পেশ করা হবে।
আমি নির্দোষ। আমাকে লাইভ করতে দেওয়া হোক -এনামুল
এদিকে, এদিন শুনানির পরে বিচারকের নির্দেশ শেষে যখন এনামুল হককে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, তখন পুলিশের ভ্যানে বসে, সে সাংবাদিকদের বলে, আমি নির্দোষ। আমাকে লাইভ করতে দেওয়া হোক। আধ ঘন্টায় সব বলে দেবো। আমার কাছে সব তথ্য আছে।
প্রসঙ্গতঃ, ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর ৫ দিনের সিবিআই রিমান্ড শেষে আসানসোলের সিবিআই আদালতে এনামুলকে তোলা হয়েছিলো।
তবে সেদিন এনামূলকে সিবিআই আদালতে তোলা হলেও শুনানি হয়নি আসানসোল আদালতের এক আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে । পরে ৩০ ডিসেম্বর আবার এই মামলার শুনানি হয়েছিলো। সেদিনও সিবিআই আদালতের বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় তার জামিন নাকচ করে তাকে জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গতঃ, ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর এনামূল হক আসানসোলের সিবিআই আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলো। সেদিন সিবিআইয়ের আইনজীবী তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু বিচারক সেই আবেদন খারিজ ও জামিন নাকচ করে তাকে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন । এরপর জেল হেফাজতে থাকা এনামূলকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন দায়ের করেছিলো।
সিবিআইয়ের সেই আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ মামলার রায়ে সিবিআইকে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের রিমান্ডের নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তবে এদিনের সওয়াল-জবাবের শেষে একটা জিনিস পরিষ্কার যে, গরু পাচারের মামলায় সিবিআই এনামুল হককে জেলে রাখতে বদ্ধপরিকর। সে যাতে কোনভাবেই জামিন না পায় তারজন্য কোমর বেঁধে নেমেছে সিবিআই ।