গরু পাচারের মামলা : জামিন নাকচ, মুখ খুললেন এনামুল
সিবিআইয়ের জমা দেওয়া চার্জশিট অসম্পূর্ণ , বিচারকের কাছে দাবি এনামুল হকের আইনজীবীর
পরবর্তী শুনানি ২০ ফেব্রুয়ারি
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১০ ফেব্রুয়ারিঃ এবারেরও জামিন পাওয়া হলোনা গরু পাচারের মামলা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগারে থাকা এনামুল হকের। বুধবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক জয়শ্রী বন্দোপাধ্যায় সওয়াল-জবাবের শেষে গরু পাচারের কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হকের জামিন নাকচ করে দিয়ে আবার জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি। সেদিন আবার এনামুলকে বিচারকের সামনে পেশ করা হবে।
তবে এদিন এজলাসে এনামুল হকের আইনজীবী শেখর কুন্ডু দুদিন আগে এই মামলায় সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিট নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিটকে অসম্পূর্ণ বলেও দাবি করেন বিচারকের সামনে। শেখরবাবুর দাবি মতো, বিচারক তার পেশ করা বক্তব্য নথিভুক্ত করেন। এদিন অবশ্য সিবিআইের এই মামলার প্রধান আইনজীবী আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।
সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে বিচারককে বলা, আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টে অন্য একটি মামলায় ব্যস্ত আছেন। বৃহস্পতিবারও তিনি ব্যস্ত থাকবেন। তাই এদিন শুনানি না করে, তা শুক্রবার করা হোক। কিন্তু শেখর কুন্ডু তা মানতে চাননি। তিনি সওয়াল করার দাবি জানান। একইসঙ্গে তিনি এনামুল হকের জামিনের আবেদন করেন।
আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই
গরু পাচার মামলা তদন্তে গত ৮ ফেব্রুয়ারি আসানসোল সিবিআই আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই৷ সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসাবে পুরানো চারজনের সঙ্গে নতুনকরে আরো তিনজনের নাম যুক্ত করা হয়। এদিন আদালত থেকে আসানসোল জেল যাওয়ার পথে এনামুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই।
গরু পাচারের মামলা ঃ এনামুল হক আপাততঃ আসানসোলের বিশেষ সংশোধনাগারে
প্রসঙ্গতঃ, এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ধৃত এনামুল হক আপাততঃ আসানসোলের বিশেষ সংশোধনাগারে রয়েছে। এই মামলার অন্য এক অভিযুক্ত বিএসএফের কম্যান্ড্যান্ট সতীশ কুমারকেও সিবিআই গ্রেফতার করেছিলো। আপাততঃ সতীশ কুমার জামিনে বাইরে আছেন ।
জানা গেছে এনামূল হক, সতীশ কুমার, গুলাম মুস্তাফা ও আনারুল শেখ সহ আরও তিনজনের নাম রয়েছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে। সেই তিনজন হলেন এনামুল হকের স্ত্রী ও সতীশ কুমারের স্ত্রী ও শ্বশুর। এদিন সিবিআই বিচারকের কাছে আবেদন করে বলেছে , চার্জশিটে যাদের নাম রয়েছে যেন তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক।
উল্লেখ্য গত ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে আত্মসমর্পন করেছিল এনামুল হক। তারপর থেকে সে জেল হেপাজতেই রয়েছে। সেইদিন থেকে ধরলে গত সোমবার পর্যন্ত ৬০ দিন হয়ে গেছে জেলের থাকার মেয়াদ এনামলের। ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দেওয়া না হলে, ১০ ফেব্রুয়ারি বুধবার এনামুলের জামিন পাওয়া একবারে নিশ্চিত ছিল। সেই কারনে জামিন আটকাতেই ঠিক ৬০ দিনের মাথায় গত সোমবার আদালতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। জানা গেছে মামলাটিকে আর শক্তিশালী করতে আরও বেশ কিছু ধারা যোগ করা হয়েছে। তার মধ্যে আছে ভারতীয় দন্ডবিধির ১২০/ বি, ৪২০, ৭, ১১, ১২, ১৩/২ ও ১৩/১/বি।
সিবিআই ৫৪ পাতার যে চার্জশিট পেশ করেছে, সেটি অসম্পূর্ণ – শেখর কুন্ডু
এদিন শুনানির শেষে এনামুল হকের আইনজীবী শেখর কুন্ডু বলেন, সিবিআই ৫৪ পাতার যে চার্জশিট পেশ করেছে, সেটি অসম্পূর্ণ। চার্জশিটের সঙ্গে সিডি বা কেস ডিটেইলস নেই। যা হতে পারেনা। এছাড়াও বলা হয়েছে, এখনো পর্যন্ত এই মামলায় ৯৪ জনের সাক্ষ্য বা ১৬৪ নং ধারায় গোপন জবানবন্দী নেওয়া হয়েছে। কোথায়, কি ভাবে তা করা হয়েছে, তা বিশদভাবে লেখা নেই। বিশেষ আদালত রবিবার বন্ধ থাকে। অথচ সেদিনও ১৬৪ করা হয়েছে। কারোর জবানবন্দীর ভিডিও রেকর্ডিং করা হলে, সেখানে আসামির আইনজীবীর থাকার কথা। এক্ষেত্রে তা হয়নি। যা হতে পারে না। আইনে তা বলেনা। আমার মনে হয়েছে, এই চার্জশিট অসম্পূর্ণ। কোন কেস ডিটেইলস লিপিবদ্ধ নেই। আশংকা, এরপর অনেক কাগজ চার্জশিটে সিবিআই ঢোকাতে পারে। তাই আমি, অন্য মামলার রেফারেন্স দিয়ে মক্কেলকে জামিন দেওয়ার আবেদন করি।