ASANSOLBengali NewsFEATURED

কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা শ্রমিক বিরোধী আইনের সরাসরি প্রতিবাদ এবার দেখা গেল শিল্পাঞ্চলের ভোটের বাক্সে

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল : কেন্দ্রীয় সরকারের একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বিক্রি করে দেওয়া,  রেল কারখানা বেসরকারিকরণের প্রস্তাব, কয়লা খনি বেসরকারিকরণ, এইসব এবং শ্রমিক বিরোধী কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা আইনের সরাসরি প্রতিবাদ এবার দেখা গেল শিল্পাঞ্চলের ভোটের বাক্সে । লোকসভায় চিত্তরঞ্জন রেল নগরীসহ ইস্পাত এলাকা, কয়লা খনির ভোটাররা যেখানে বিপুল ভোট উজার করে দিয়েছিল বিজেপিকে, এবার সেই বিজেপিকে শ্রমিকরা, মজুররা বড় ধরনের ধাক্কা দিল । তাদের প্রথম পছন্দের তালিকায় উঠে এলো তৃণমূল ।

আর  শ্রমিকদের বেশিরভাগই মনে করলেন নরেন্দ্র মোদির এইসব শ্রমিক এবং শিল্প বিরোধী নীতির প্রতিবাদে লড়াইয়ের অন্যতম  মুখ হতে পারে সারাদেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলকে ভোট দিয়ে প্রথমে তুলে আনা হলো বিভিন্ন শ্রমিক এলাকাগুলোতে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার শ্রমিকরা এবং তাদের পরিবার ও বন্ধ হিন্দুস্থান কেবলসের বাসিন্দারা। চিত্তরঞ্জনে ২০১৪ এবং ২০১৮ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩১ টি বুথে পরপর দুবারই তারা জয়ী হয়েছিল এবং সেখানে তৃণমূল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছিল ।এবার সেই ৩১  টি বুথে চিত্তরঞ্জনের শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের ভোটাররা সবক্ষেত্রেই তৃণমূলকে যথেষ্ট ভোটে এগিয়ে জিতিয়ে দিল এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিজেপি ও তৃতীয় স্থানে পৌঁছেছে । হিন্দুস্তান কেবলসের দুটি এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা সবকটি বুথেই তৃণমূল-বিজেপি কে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে । কারখানা বন্ধের পর এখানেও গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিই এগিয়েছিল।

চিত্তরঞ্জনের আই এন টি ইউ সির নেতা নেপাল চক্রবর্তী বলেন আমরা এই রেল শহরের প্রতিটি রেল আবাসনে একটি প্রচারপত্র দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলেছিলাম  যাকে খুশি ভোট দিন কিন্তু বিজেপিকে একটিও ভোট নয় ।ওরা আমাদের কারখানা কে কর্পোরেটের হাতে তুলে দিতে চেয়েছে। ইতিমধ্যে ৮০% আউটসোর্সিং হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই রেলগাড়ি এবং রেলস্টেশন  বিক্রি করা শুরু করেছে। নিয়োগ বন্ধ। শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই রেল শহরের তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন না থাকলেও এখানকার সব শ্রমিকরা বিশ্বাস করেছেন নরেন্দ্র মোদি  শ্রমিক বিরোধী রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বিরোধী প্রধানমন্ত্রী।তার প্রতিবাদে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকৃত লড়াই করতে পারবেন দেশজুড়ে। তাই তৃণমূল এই শহরের সব জায়গা থেকে জিতেছে। আর এই শহর যেহেতু বারাবনি বিধানসভার মধ্যেই  পরে  এখানে যেহেতু সিপিএমের প্রার্থীর পরিবর্তে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিল তাই বহু সিপিএম সমর্থক এবার ভোট দেননি। আর কেউ কেউ দিলেও তাদের ভোট কিন্তু তৃণমূলে গিয়ে পড়েছে অন্তত তাই মনে হয়েছে।

 এ বিষয়ে এখানকার সিটু ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজিব গুপ্ত বলেন এখনও আমরা ব্যাখ্যা করা শুরু করিনি। তবে এটা সত্যি কেন্দ্রীয় সরকারের বর্তমান  শ্রমিক ও শিল্প বিরোধী নীতি এবং রেম বেসরকারিকরণের বিষয়টিতে  মানুষের হয়তো মনে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখ। সে কারণে অনেকগুলো নির্বাচনের পর চিত্তরঞ্জন এর সমস্ত বুথেই তৃণমূল জিতেছে। তিনি অবশ্য স্বীকার করেন যে চিত্তরঞ্জন একসময় সত্তিকারের লাল দুর্গ ছিল। সিপিএমের অনেকেই। এবার ভোট দেননি এটা  তিনি শুনেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি বাইরে বেরিয়ে এর তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি শারীরিক অসুস্থতার কারণে।

অন্যদিকে রানীগঞ্জ  বিধান সভাকেন্দ্রে এবার প্রার্থী হয়েছিলেন বল্লভপুরের কাগজ কলের  শ্রমিক ও শ্রমিক নেতা হেমন্ত প্রভাকর। হেমন্তবাবু যে আসন থেকে দাঁড়িয়েছিলেন সেই আসনে গত নির্বাচনে সিপিএমের রুনু দত্ত জিতেছিলেন। এবার সিপিএম এর হাত থেকে ওই  আসন ছিনিয়ে নিয়েছেন তৃণমূলের তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

হেমন্তনাবুর নিজের বাড়ির এলাকায় অর্থাৎ বল্লভপুরের বুথে ও তার দল হেরেছে। শুধু তাই নয় তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গেছেন। এই বল্লভপুর সিপিএমের গড় বলা যায়। সেখানে সবকটিতেই তাদের করুণ অবস্থা। তার ধারণা অসংগঠিত শ্রমিকরা মনে করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে তাদের হয়তো বিনামূল্যে খাবার ,স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তাতে তাদের বেঁচে থাকার একটা রাস্তা হয়তো হবে। তাই তারা বাম ঘেষা হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন ।

একইভাবে তিনি বলেন নরেন্দ্র মোদির শ্রমিক বিরোধী ,,শিল্প বিক্রি করার নীতির  বিরুদ্ধেও শ্রমিক মজুরের হয়তো মনে হয়েছে এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র যিনি তার প্রতিবাদ করতে পারবেন ।সে কারণেই ভোটের ফলে আমি তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গেছি।

সারা রাজ্যে আইএনটিইউসির সম্পাদক এবং ইসকোর এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হরজিৎ সিং বলেন রেল, ইস্কো কারখানা অথবা কয়লা খনির শ্রমিক তারা তাদের চাকরি নিরাপত্তার প্রশ্নে তাদের অধিকার বাঁচিয়ে রাখার প্রশ্নে তারা মনে করেছে তৃণমূলই হচ্ছে বিজেপির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সবচেয়ে শক্তিশালী দল এই মুহূর্তে ।স্বাভাবিকভাবেই শ্রমিকদের বেশিরভাগ অংশের ভোট তৃণমূলের পক্ষে গিয়ে পৌঁছেছে ।শুধু তাই নয় আমার বলতে অসুবিধা নেই আমাদের কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতারা হয়তো এই কথাটা বুঝে ছিলেন বলেই তারা এখানে প্রচারে তেমনভাবে আসেননি। যাতে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট খুব ভাগ না হয়।

 ইসিএলের তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের দীর্ঘদিনের নেতা এবং সাধারণ সম্পাদক হরে রাম সিংহ সিপিএমের হাত থেকে জামুরিয়া আসনটি ৪৪ বছর পর ছিনিয়ে নিলেন এই কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন সর্বভারতীয় ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী ঐশী ঘোষ। এখানে সিপিএম তৃতীয় স্থানে গিয়ে পৌঁছেছে। হরে রাম সিং বলেন আমি ভোটের পর কোথায় কত ভোট পেয়েছি তা দেখতে গিয়ে দেখলাম ডান-বাম সমস্ত শ্রমিক এবং মজুররা কিন্তু আমাদের ঢেলে ভোট দিয়েছে। কেননা তারা বিশ্বাস করেন মোদীর দেশ বিক্রির ,শিল্প ও শ্রমিক নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকে সোচ্চার হয়ে লড়াই করছেন। শ্রমিকরা নিজেদের কর্মসংস্থানের স্বার্থেই আমাকে এবং এই শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন তাই শ্রমিকের স্বার্থ আমাদের দেখতে হবে।

সিটুর জেলা সম্পাদক বংশ গোপাল চৌধুরী এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় দুজনই শ্রমিকদের সিপিএমের শিল্পাঞ্চলের এমন বেহাল অবস্থা কেন হল তা নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে বলেন আমরা সমস্ত দিক গুলো ব্যাখ্যা তারপরেই নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব। 

ভারতীয় মজদুর সংঘের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন সংঘের সাথে দলের সমন্বয়ের অভাব ছিল ।আর কোথাও কোথাও আমরা যে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক বিরোধী কোনো কোনো নীতির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন করছি সেটাও সঠিক ভাবে প্রচার করতে হয়ত ব্যর্থ হয়েছি। সেই কারণেই আমাদের। বাদ দিয়ে তৃণমূলকে মানুষ বেশি বিশ্বাস করেছে।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *