ASANSOLASANSOL-BURNPUR

কোটি টাকা খরচ করে উদ্বোধন হওয়া বার্ণপুরের জাম্বো কোভিড কেয়ার হাসপাতাল তিন সপ্তাহ পরেও চালু হলো না

চিকিৎসা করার জন্য টাকা নেওয়ার বিতর্কে সমস্যা

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ১১ জুনঃ বার্নপুরে ইস্কো কারখানার (SAIL ISP) উদ্যোগে নিউটাউনের ছোটদিঘারি হাইস্কুলে জাম্বো কোভিড কেয়ার হাসপাতাল ( JUMBO COVID CARE HOSPITAL) উদ্বোধনের তিন সপ্তাহ পরেও সেটি চালু হলনা। দূর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সাহায্যে এখানে ভর্তি হওয়া করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বিতর্ক তৈরী হয় এখানে ভর্তি হওয়া করোনা আক্রান্ত রোগীদের থেকে টাকা নেওয়া নিয়ে। সেই বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে সেই হাসপাতাল এখনো চালু না হওয়ায় ইস্কো কারখানা কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে শিল্পাঞ্চলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

jumbo hospital

তাদের অভিযোগ শুরুতেই বলা হয়েছিলো প্রথমে ২০০ শয্যা হবে এখানে। তারপরে তা বাড়িয়ে ৫০০ পর্যন্ত করা হবে। এখন তো ২০০ শয্যার ইউনিট চালু হলো না, ৫০০ তো অনেক দূরের কথা।
একইভাবে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার উদ্যোগেও দুর্গাপুরে একটি কোভিড কেয়ার ইউনিট উদ্বোধন করা হলেও সেটিও চালু হয়নি। কেউ কেউ বলছেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই হাসপাতাল দুটিকে সাদা হাতির মতো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে । করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ইতিমধ্যেই অনেকেই মারা গেছেন। এমনকি ইসকোর আধিকারিক থেকে কর্মী থেকে তাদের পরিবারের সদস্যরাও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন । শুধু বার্নপুর নয়, জেলাজুড়ে অনেক মানুষ করোনায় মারা গেছেন বা আক্রান্ত হয়েছেন। এই ২০০ শয্যার দুটি হাসপাতালে ৪০০ রোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসা করলে অনেক মানুষ হয়তো বাঁচতো। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অনেক মানুষের ভরসার স্থান হতে পারতো এই দুই হাসপাতাল। কিন্তু এখনো বাস্তবে তা হয়নি।


প্রসঙ্গতঃ গত ১৯ মে কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, স্বীকৃত ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে বার্নপুরের ছোটদিঘারী হাই স্কুলে এক কোটি টাকার বেশি খরচ করে এই হাসপাতাল উদ্বোধন করেছিলেন। এই হাসপাতালে ইস্কো কারখানা থেকেই সরাসরি অক্সিজেন যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। সেইদিনই মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান উদ্বোধনী বক্তব্যে ঘোষণা করেছিলেন বিনামূল্যে এখানে চিকিৎসা হবে। কিন্তু মন্ত্রীর সেই ঘোষণার পরেই দূর্গাপুরের যে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে এই ইউনিটটি চালানোর চুক্তি হয় সেই হাসপাতালের তরফে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিলেো প্রত্যেক রোগীর প্রতিদিন ৩০০০ টাকা ও আইসিইউতে রোগী থাকলে ৫০০০ টাকা নেওয়া হবে। তার বিনিময়ে তাদের ওষুধ, অক্সিজেন ও খাবার দেওয়া হবে।

এরপরেই ইস্কোর আইএনটিইউসির সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক হরজিৎ সিং চিঠি লেখেন ইস্পাত মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় ও বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ও ইস্কোর সিইওকে। হরজিত সিং বলেন, ঐ চিঠিতে টাকা নেওয়ার কথা নিয়ে আমরা তীব্র প্রতিবাদ করেছি। কেন টাকা নিয়ে রোগীদের ভর্তি করা হবে । উদ্বোধনের মুহূর্তে আমাদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন এই হাসপাতাল দ্রুততার সঙ্গে কোটি টাকার বেশি খরচ করে সেইল কর্তৃপক্ষ পরিকাঠামো তৈরি করেছে । আরো বলা হয়েছিলো, এই হাসপাতালে কোনো টাকা লাগবে না। যে কেউ ভর্তি হতে পারবে। তাহলে কেন টাকা নেওয়া হবে পরে বেসরকারি হাসপাতালের তরফে বলা হলো? সেই চিঠির আমরা কিন্তু এখনো কোনো জবাব পাইনি। তিনি আরো বলেন, আমরা দেখলাম এই হাসপাতালটা এখন একটা সাদা হাতির মতো তৈরি হয়ে পড়ে থাকলো। অথচ এই এলাকার মানুষের এই মুহূর্তে এই হাসপাতালের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।

তিনি বলেন, একই ভাবে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার উদ্যোগে দূর্গাপুরে গত ৩১ মে এমন আর একটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়। সেটিও পড়ে আছে। আমরা বিষয়টি পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলাশাসককে জানিয়ে হস্তক্ষেপ দাবি করেছি। তিনি দ্রুত সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, যেখানে স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া হাসপাতাল তৈরীর জন্য যাবতীয় খরচ বহন করলো। তাহলে কেন রোগীদের টাকা দিতে হবে? অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু বলেন, ইস্কো কারখানা কতৃপক্ষ যখন উদ্যোগ নিয়ে পরিকাঠামোটা তৈরি করলো, তখন তাদের উচিত বিনামূল্যে এই হাসপাতাল চালু করা। তা না হলে এটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রত্যেকের একাউন্টে একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার মতোই হয়ে থাকবে।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ অশ্বিনী কুমার মাজি বলেন, আমাদের বলা হয়েছিল হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরীর পর দেখে দিতে। আমরা সেটুকু করে দিয়েছি। এবার এটা কিভাবে চালু করবে সেটা সেলের ভাবা উচিত । তবে রোগী পিছু কোনো টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। রাজ্য সরকারের তরফে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *