Bengali NewsFEATUREDKULTI-BARAKAR

জিতেন্দ্র তেওয়ারির দলবদলে রাজনীতির শিকার দুঃস্থ সংগীত শিল্পী, অবশেষে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করলো আসানসোল পুরনিগম

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৫ জুনঃ মাত্র ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকায় তৈরী করা হবে একটি সাধারণ বাড়ি। আর সেই বাড়ি তৈরির শিলান্যাস হল দু দুবার। প্রথম শিলান্যাস করেছিলেন আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পদে থাকাকালীন বর্তমান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি। ফের ঘটা করে মঙ্গলবার নারকেল ফাটিয়ে সেই বাড়ির শিলান্যাস করলেন আসানসোল পুরনিগমের বর্তমান পুরপ্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও প্রশাসক বোর্ডের বোর্ডের সদস্য অভিজিৎ ঘটক সহ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা।

আর এই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন আসানসোল পুরনিগমের কুলটি পুর এলাকার ডিসেরগড়ের বাসিন্দারা। এই বাড়িটি হলো শিল্পাঞ্চলের দুঃস্থ সঙ্গীত শিল্পী দুর্গা রানার।


ঠিক কি হয়েছিল গোটা ঘটনা ? এবারের বিধান সভা নির্বাচনের ঠিক আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে দলবদলে বিজেপিতে যান আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র পুর প্রশাসক জিতেন্দ্র তেওয়ারি। আর সেই দলবদলের ফলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় দুঃস্থ সঙ্গীত শিল্পী দূর্গা রানাকে। মেয়র থাকাকালীন জিতেন্দ্র তেওয়ারি লকডাউনে কাজ হারা দুঃস্থ সঙ্গীত শিল্পী দুর্গা রানার বাড়ি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ঘটা করে নতুন বাড়ি তৈরির শিলান্যাস করেছিলেন তিনি।

সেই মত ভেঙে ফেলা হয়েছিলো শিল্পীর পুরানো জরাজীর্ণ বাড়িটি। কিন্তু জিতেন্দ্র তেওয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করতেই আটকে যায় বাড়ি তৈরির কাজ। রাজনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে শেষ সম্বল বলতে মাথার ছাদটুকুও হারিয়েছিলেন ঐ শিল্পী। শিল্পীর এই অবস্থার কথা জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসে আসানসোল পুরনিগমের বোর্ড। অবশেষে একবছর পর ফের সেই বাড়ি তৈরীর কাজে হাত দিল পুরনিগম। এদিন নতুন করে বাড়ি তৈরির শিলান্যাস করলেন পুরপ্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্য অভিজিৎ ঘটক।


যদিও এই বাড়ি তৈরি না হওয়ার জন্য প্রাক্তন মেয়রকেই দায়ি করলেন বর্তমান পুর প্রশাসক বোর্ডের প্রশাসক ও সদস্যরা। তাদের দাবি দূর্গা রানার বাড়ি তৈরির কাজটি ওয়ার্কঅর্ডার ছাড়াই শুরু করেছিলেন প্রাক্তন মেয়র।
যদিও ওই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন আসানসোল পুরনিগমের ১০৫ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন বিজেপি কাউন্সিলর জিতেন্দ্র তেওয়ারি ঘনিষ্ঠ অভিজিৎ আচার্য্য। তার দাবি, প্রতিহিংসা করতেই ও রাজনীতি করার জন্যই দুঃস্থ শিল্পীর বাড়ি তৈরির কাজ আটকে দিয়েছিলেন বর্তমান পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্যরা।


“করোনা কেড়েছে জলসা”। এক সময়ের বেতাজ বাদশা কিশোর কণ্ঠী অসুস্থ দূর্গা রানাকে অর্থসংস্থান করতে হয় সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করে। কিন্তু সেই কাজও এখন বন্ধ। অথচ আসানসোল, দূর্গাপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ধানবাদ, পাটনায় গায়ক দুর্গা রাণাকে কে চেনেন না? সেই সময় “ডি রাণা নাইট” অনুষ্ঠান হয়নি এমন কোন পাড়া নেই। ৮০ বা ৯০ এর দশক থেকে এমনকি ২০১০ সাল পর্যন্ত চুটিয়ে গানের অনুষ্ঠান করেছেন এই শিল্পী। এখন বয়স হয়েছে। ফাইলেরিয়ায় আক্রান্ত তবু আজও পায়ের ব্যাথা জলসায় এখনও গান করতে যান। কিন্তু গত বছরে শুরু হয় লকডাউন। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে কোনও আয় নেই। একদিকে আর্থিক অনটন অন্যদিকে দিনগুজরান করতে হয় দশ ফুট বাই দশ ফুটের ভাঙাচোরা ঘরে। সেই ঘর মেরামত করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি। সেই মত কাজও শুরু হয়েছিল।

কিন্তু জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও স্থানীয় কাউন্সিলর দল বদল করতেই সেই কাজ আটকে যায়। এরমাঝে পুরবোর্ডের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। বিধানসভা ভোট চলে আসে। চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েন দূর্গা রানা। সংবাদ মাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায় শিল্পীর এই দুর্দশার কথা ভাইরাল হতেই শেষ পর্যন্ত বর্তমান পুরবোর্ড বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করলো। পুরপ্রশাসন ও ইঞ্জিনিয়ারদের তৎপরতা দেখে খুশি দুঃস্থ শিল্পী। শুধু বাড়ি তৈরি নয় তার চিকিৎসারও ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুর প্রশাসক। তাই আপততঃ যে স্বস্তি পেলেন দূর্গা রানা, তা বলাই যেতে পারে।

read also एक जुलाई तक पाबंदियों का निर्देश सरकार ने किया जारी, जानें कहां क्या मिली है राहत

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *