চালু হয়নি ৭ টি আরবান হেল্থ সেন্টার, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে চিঠি বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারির, পাল্টা আক্রমণ শাসক দলের
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ২২ জুনঃ দুদিন আগেই বাংলার অন্যতম পুরনিগম আসানসোল হলেও বঞ্চিত ও অবহেলিত আসানসোল। এই বলে টুইট করে বিতর্ক বাড়িয়েছিলেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি। তার জের কাটতে না কাটতেই এবার আসানসোল পুরনিগম এলাকায় ৭টি আরবান প্রাইমারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ( ইউপিএইচসি) চালু না হওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী ডাঃ হর্ষবর্ধনকে চিঠি লিখে নালিশ জানালেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি।
মঙ্গলবারই তিনি এই চিঠি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন। গোটা বিষয়টি জানার পরে পাল্টা জবাব দিতে দেরী করেনি জিতেন্দ্র তেওয়ারির পুরনো দল তৃনমুল কংগ্রেস। শাসক দলের রাজ্য সম্পাদক তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলার কো-অর্ডিনেটর ভি শিবদাসন তরফে দাসু ও আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় চিঠি দেওয়া নিয়ে জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে আক্রমণ করেছেন। প্রথমে টুইট ও পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চিঠি লেখা নিয়ে জিতেন্দ্র তেওয়ারির সঙ্গে আসানসোলের শাসক দলের নেতাদের বাকযুদ্ধ বিধান সভা নির্বাচনের পরে নতুন করে মাত্রা পেলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
প্রসঙ্গতঃ বিধান সভা নির্বাচনের আগে জিতেন্দ্র তেওয়ারি আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক পদের পাশাপাশি তৃনমুল কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতি ও পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক ছিলেন। নির্বাচনের ঠিক আগে তিনি আসানসোল উন্নয়নের টাকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ফিরহাদ ওরফে ববি হাকিমকে চিঠি লিখে পুর প্রশাসক ও দলের জেলা সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপি তাকে পান্ডবেশ্বরের টিকিট দেন। কিন্তু তিনি তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কাছে হেরে যান।
এদিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান দপ্তরের মন্ত্রী ডাঃ হর্ষবর্ধনকে লেখা চিঠিতে জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেছেন, আসানসোল পুরনিগ এলাকায় ৭ টি ইউপিএইচসি বা আরবান প্রাইমারি হেল্থ সেন্টারের ভবন নির্মাণ হয়ে থাকলেও, তা চালু হয়নি। আসানসোল পুর এলাকার জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জে ২টি করে ও কুলটিতে ৩ টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবন নির্মাণ হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু রাজ্য সরকার ও আসানসোল পুরনিগমের ” নেকলিজেন্সি ” বা ” গাফিলতি “র কারণে সেগুলি আজও ” নন অপারেশনাল ” হয়ে পড়ে আছে। তিনি মন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে আরো বলেছেন, এই ভবন নির্মাণের টাকা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যানের এনইউএইচএম ফান্ড থেকে এসেছে। আসানসোল পুরনিগম এলাকায় অনেক মানুষ কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন।
এই সেন্টারগুলি চালু হলো এখানকার মানুষেরা উপকৃত হতেন। মন্ত্রী হিসাবে আপনার কাছে আমার অনুরোধ গোটা বিষয়টি আপনি দেখে, সেন্টারগুলি চালু করার ব্যবস্থা করুন। এই চিঠির প্রতিলিপি আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কেও দেওয়া হয়েছে। জিতেন্দ্র তেওয়ারি এই প্রসঙ্গে বলেন, আসানসোল অবহেলিত ও বঞ্চিত। এটা আমি আগেও বলেছি। এখন বলছি। ভবিষ্যতেও বলবো। তার জন্য কেউ আমাকে গালাগাল বা আক্রমন করতেই পারে। তাতে আমার বলা থামবে না। তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার আসানসোল পুরনিগম এলাকার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা দেয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের বঞ্চনা ও উদাসীনতার জন্য আসানসোল সেই টাকা পাচ্ছেনা। তার জন্য পুরবাসীরা সমস্যায় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের টাকায় তৈরী হওয়া ভবন নির্মাণ হয়ে পড়ে আছে ৬ মাস হলো। আজও চালু হয়নি। সেই কথাই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান দপ্তরের মন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছি।
এই প্রসঙ্গে জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে আক্রমন করে আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, উনি তো ৪ মাস আগেও মেয়র ও পুর প্রশাসক ছিলেন। তিনি কি সেগুলো চালু করার পরিকল্পনা করেছিলেন? আর উনি তো কোন খবর রাখেন না। কুলটির বরাকর ও ডিসেরগড় এবং জামুড়িয়ায় চালু হয়েছে। বাকি গুলোও চালু করা হবে। অমরবাবু আরো বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারই বলছে সারা দেশের মধ্যে বাংলা করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সবার সেরা। যদি এইসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো চালু না থাকতো, তাহলে কি এমনটা হতো?
অন্যদিকে তৃনমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু বলেন, জিতেন্দ্র তেওয়ারি
তো ৫ বছর আসানসোলের মেয়র ছিলেন। তখন তিনি আসানসোলের বঞ্চনা ও অবহেলার কথা বলেননি কেন? অন্য দলে গিয়ে কি এখন মনে পড়ছে? আসল কথা হলো, হেরে গিয়ে সব হারিয়ে এখন কোন কাজ নেই। তাই এইসব কথা বলছেন। এবার তিনি জেলে যাওয়ার জন্য রেডি হন।