বাবুলের রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে কি বলছেন রাজনীতিক দলের আসনসোলের নেতারা
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল। ভারতীয় জনতা পার্টি থেকে বাবুল সুপ্রিয়র দল ছেড়ে দেওয়ার খবরে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে ওই দলের মধ্যেই প্রভাব পড়বে না বলেই নেতারা মনে করেন। অন্যদিকে সিপিএমের নেতারা মনে করেন তারা বারবারই বলেছিলেন দিল্লি বোম্বাই থেকে কেউ এখানে এসেই ভোটে জিতে সাংসদ হলেও এখানের মানুষের স্বার্থে কিছু করবেন না। সেটা আজও প্রমাণিত মাঝ পথেই তার ছেড়ে চলে যাওয়ায়। আর তৃণমূলের পক্ষ থেকে কেউ কেউ বলেন আসলে বিজেপি এই দুবারই নির্বাচনে হেরেছে। জিতেছে ব্যক্তি বাবুলের শিল্পী ইমেজ। সেই ইমেজ কে বিজেপি কাজে লাগিয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে দল থাকে যে তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং বারবার অন্তর্দ্বন্দ্ব বিভিন্ন কারণে প্রকাশ্যে এসেছে তার প্রমানও হয়ে গেছে তার দল ছড়ার মধ্যে দিয়ে।
![](https://bengalmirrorthinkpositive.com/wp-content/uploads/2024/05/img-20240520-wa01481045365085360283686-500x428.jpg)
![](https://bengalmirrorthinkpositive.com/wp-content/uploads/2024/09/img-20240909-wa00806721733580827251668.jpg)
![](https://bengalmirrorthinkpositive.com/wp-content/uploads/2024/12/fb_img_17339279922403722767543487143310-476x500.jpg)
![](https://bengalmirrorthinkpositive.com/wp-content/uploads/2021/07/FB_IMG_1627569285074-500x500.jpg)
বিজেপির জেলা সভাপতি এবং বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই বলেন আমি আমার স্নান খাওয়া ভুলে দু’বছর ওনার জন্য ছোটাছুটি ও পরিশ্রম করে তাকে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে রেকর্ড দু’লক্ষ ভোটে জিতিয়েছিলাম । স্বাভাবিকভাবেই আজ দুঃখ লাগছে ।যদিও এটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত এবং সিদ্ধান্ত। উনি অবশ্য নিজেই জানিয়েছেন আর কোন দল করবেন না বা দলে যোগ দেবেন না। নিজের পুরনো পেশায় ফিরবেন। বাকি বিষয়টা দলের উপর মহল দেখবেন। মানুষ বাবুল সুপ্রিয় কে ভোট দেয়নি, বিজেপির পদ্মফুল এবং নরেন্দ্র মোদিকে দেখে ভোট দিয়েছিল। তাই দলের মধ্যে তার এই ছেড়ে দেওয়ায় কোন ক্ষোভ কোন মহলেই হবে বলে আমি মনে করিনা।
বাবুল সুপ্রিয়র আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের ২০১৪ সালে প্রথম যখন নির্বাচন করতে এসেছিলেন সেই সময় তার প্রচার প্রমুখ হয়েছিলেন এই লোকসভা কেন্দ্রের প্রশান্ত চক্রবর্তী। তিনি জেলার নেতা। ২০১৯ এ প্রশান্ত ছিলেন দলের এই লোকসভা কেন্দ্রে অন্যতম প্রচার প্রমুখ। প্রশান্ত জানান তিনি বিষয়টি জানতেন না। বাবুল বাবুল তাদের সাথে কোন আলোচনা করেননি। তিনি খবরটি পান । প্রাথমিকভাবে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তিনি অনেকটাই ভেঙে পড়ার মতো হয়ে বলেন পাখির সঙ্গে যে পালক থাকে সেই পালক যদি চলে যায় তাতে যতটা মন খারাপ হয় আমার মন ততটাই খারাপ। কিন্তু এটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। যে কারণে তিনি হয়তো দু দুবার জেতার পর এবং মানুষের বিপুল সমর্থন পেয়েও তিনি দল ছাড়লেন বলে জানিয়েছেন ।
তবে যেহেতু আমাদের ক্যাডারভিত্তিক সংগঠিত দল, স্বাভাবিকভাবেই এতে দলের খুব একটা ক্ষতি হবে না। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং আসানসোল কেন্দ্রের প্রাক্তন সি পি এম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন এটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তিনি দলের সাথে ছিলেন বলেই হয়তো তাকে টিকিট দেয়া হয়েছিল। তবে আমার সাথে ওনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো থাকলেও একটা কথা অবশ্যই বলতে হয় উনি আসানসোলে ভোটে জেতার পর এখানকার কোন সমস্যা নিয়ে কখনো গভীরভাবে ভাবেন নি এবং তিনি সচেতন ছিলেন না রাজনৈতিকভাবে। এলাকার জন্য আমরা দেখেছি ওনার সময় এখানকার সবচেয়ে বড় দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান কেবলস এবং বান স্ট্যান্ডার্ড বন্ধ হয়েছে। হাজার হাজার কর্মীকে বেকার করেছেন উনারা । কিন্তু এগুলো চালু করার জন্য ওনাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে আমরা তার কোন প্রচেষ্টা দেখিনি ।
আসলে আমরা প্রথম থেকেই এটা বলে এসেছি দিল্লি ,বোম্বাই থেকে কেউ এসে ভোটে জিততে পারে। কিন্তু এখানে তিনি থাকবেন না ।এটা আজ প্রমাণিত। মাঝেমধ্যে তিনি এসেছেন খবরের কাগজে বা টেলিভিশনের ছবি তুলেছেন, আবার ফিরে গেছেন দিল্লী বোম্বে এসব জায়গায়। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাসু বলেন বাবুল সুপ্রিয় আসানসোলের জন্য কোনও কাজ করেননি ।বরং একের পর এক তার নেতৃত্বে বা তার সরকারের নেতৃত্বে কারখানা বন্ধ হয়েছে। কর্মীরা পথে বসেছেন। তিনি দুবারই যে ভোটে জিতেছেন সেটা বিজেপির জন্য নয় তার ব্যক্তিগত প্রভাবের জন্য।
যেহেতু তিনি একজন নামী শিল্পী মানুষ ছিলেন তাই তার সেই সত্তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি জিতেছিলেন।তার দল যে তাকে পছন্দ করছিল না দূরে সরিয়ে দিচ্ছিল, গত বিধানসভা নির্বাচনে তাকে কলকাতায় প্রার্থী করে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিল । সত্যিই যদি তাকে চাইতো তাহলে আসানসোলের কোন কেন্দ্রে তাকে প্রার্থী করতে পারত। যদিও এগুলো সম্পূর্ণ তাদের বিষয়। তবে মাঝপথে এরকমভাবে পালিয়ে যাওয়াতে এই অঞ্চলের মানুষ যারা তাকে ভোট দিয়েছিলেন তারা আগামীদিনে ভাববেন। করোনার সময় থেকেই শুরু করে এখানকার মানুষের সাথেও তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। এটাও মানুষ ভালো চোখে নেয় নি। হয়তো সেটাও তিনি বুঝতে পেরেছেন।
প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক প্রসেনজিৎ পইতুনডি বলেন ওনার মন্ত্রীত্ব যাওয়ার সাথে সাথে সেভেন স্টার কালচারের যে নিরাপত্তা, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তার চলে যাওয়া তিনি অনেকটাই হতাশ হন। আর বিগত বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই তার সাথে দলের যে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে ছড়াচ্ছিল সেটাও বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে। ফলে উনি হয়তো পেরে উঠলেননা। আর সর্বোপরি তিনি এখানকার মানুষের বিপদের দিনে কোন সময় পাশে ছিলেন না। তাকে নিয়ে নিখোঁজের পোস্টারও পড়েছিল।