জেলা তৃনমুল কোর কমিটি রদবদল পরে কয়েক ঘন্টা, ২ জনকে ভাইস চেয়ারপার্সেন করে পুনর্গঠন আসানসোল পুরনিগমের প্রশাসক বোর্ড, বাদ পুরনো ৪ সদস্য, নতুন মুখ ৩, নেই কোন মহিলা
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৭ আগষ্টঃ মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধান। সোমবার বিকেলের পরে পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের কোর কমিটিতে বড়সড় পরিবর্তন করা হয়। আর রাতে নতুন করে পুনর্গঠন করা হলো আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক বোর্ড বা বোর্ড অফ এ্যাডমিনিস্ট্রেটার। রদবদলে পুরনো বোর্ড থেকে বাদ পড়েছেন ৪ জন সদস্য। যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলেন রাজ্যের আইন ও পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই বিদায়ী মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটক। তবে অভিজিৎ ঘটককে সোমবারই দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতি করা হয়েছে। ” এক ব্যক্তি, এক পদ ” নীতি সামনে রেখে দল ও প্রশাসনের কাজ চালানোর কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন।
সেইদিক থেকে অভিজিৎ ঘটককে পুর প্রশাসক বোর্ড থেকে সরানো ছিলো শুধু সময়ের অপেক্ষা। তার সঙ্গে পুর প্রশাসক বোর্ড থেকে সরানো হয়েছে বিদায়ী ডেপুটি মেয়র তবস্সুম আরা, মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায় ও অঞ্জনা শর্মাকে। তবস্সুম আরা বেশ কিছু দিন আগে স্বাস্থ্য কর্মী না হয়েও কুলটির নিষিদ্ধ পল্লীর এক মহিলাকে করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছিলেন। যা নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে। বিতর্কের জন্য তাকে আসানসোল পুরনিগমে আসতে মানা করা হয়। প্রশাসনিক মহল মনে করছে, শাসক দল ও রাজ্য সরকার গোটা বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি। সেই কারণে তবস্সুম আরাকে সরানো হয়েছে। তাকে পুর প্রশাসক বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে তবস্সুম আরা বলেন, দল যা ভালো মনে করেছে, তাই করেছে। আমার কিছু বলার নেই। পূর্ণশশী রায় ও অঞ্জনা শর্মাকে কেন সরানো হয়েছে, তা অবশ্য জানা যায়নি।
পুরনো ৪ জনের পরিবর্তে পুর প্রশাসক বোর্ডে নিয়ে আসা হয়েছে ৩ নতুন মুখকে। তারা হলেন বিদায়ী পুর বোর্ডের বিদায়ী বোরো চেয়ারম্যান মানস দাস, দূর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো রাজ্যে ” ফুড ম্যান বলে পরিচিত চন্দ্রশেখর কুন্ডু ও আসানসোল বিবি কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ অমিতাভ বসু। সোমবার রাতে রাজ্য সরকারের তরফে যে নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে আসানসোল পুরনিগমের বোর্ড অফ এ্যাডমিনিস্ট্রেটারে চেয়ারপার্সন হিসাবে থাকছেন বর্তমান চেয়ারপার্সন অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। বোর্ডে দুজন ভাইস চেয়ারপার্সেন হিসাবে থাকবেন মানস দাস ও ডঃ অমিতাভ বসু। বোর্ডের বাকি ৪ সদস্য হলেন চন্দ্রশেখর কুন্ডু, মীর হাসিম, শ্যাম সোরেন ও দিব্যেন্দু ভগৎ। শেষ তিনজন পুরনো বোর্ডেও ছিলেন।
তবে, পুরনো বোর্ড থেকে দুজন মহিলা সদস্যকে বাদ দেওয়া হলেও, নতুন বোর্ডে কোন মহিলাকে রাখা হয়নি। যা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
মানস দাস সরাসরি রাজনীতিতে রয়েছেন। বেশ কয়েক মাস আগে মন্ত্রী মলয় ঘটকের হাত ধরে চন্দ্রশেখর কুন্ডু তৃনমুল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। ডঃ অমিতাভ বসু সরাসরি রাজনীতি না করলেও, শিক্ষা মহলে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
প্রসঙ্গতঃ, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে আসানসোল পুরনিগমের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছিলো। সেই সময় নির্বাচন না হওয়া বোর্ড অফ এ্যাডমিনিস্ট্রেটার করা হয়। সেই সময় সেই বোর্ডের চেয়ারপার্সেন হিসাবে ছিলেন বিদায়ী মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে গত ১০ মাসে ৫ বার আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক বোর্ড সদস্যদের বদল বা পুনর্গঠন করা হলো। তারমধ্যে এই প্রথম বার বোর্ডের দুজনকে ভাইস চেয়ারপার্সেন করা হলো।
বোর্ড পুনর্গঠন প্রসঙ্গে মঙ্গলবার পুর প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, এটা স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে। দল হয়তো মনে করেছে, সরাসরি রাজনীতি করেন না, এমন মানুষদের পুর বোর্ডে রাখতে। দল যাদের নাম ঠিক করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছে, তাদের নামে অর্ডার হয়েছে। বুধবার নতুনদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ৪ জনকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে তার বক্তব্য, তাদেরকে হয়তো দল অন্য কাজে লাগাবে। প্রসঙ্গতঃ, তৃনমুল কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলার নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন কুলটির প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। এতদিন এই পদে ছিলেন আসানসোল উত্তর বিধান সভার বিধায়ক তথা রাজ্যের আইন ও পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী মলয় ঘটক। দূর্গাপুরের অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে দলের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে সেই জায়গায় বসানো হলো বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়কে। দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির নতুন জেলা সভাপতি করা হয়েছে অভিজিৎ ঘটককে। এতদিন আইএনটিটিইউসি জেলা সভাপতি পদে ছিলেন দূর্গাপুরের বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। এছাড়াও দলের মহিলা ও যুব সংগঠনের নতুন সভানেত্রী ও সভাপতি হয়েছেন মিনতি হাজরা ও কৌশিক মন্ডল।
একইভাবে, আসানসোল শহরের ( আসানসোল পুরনিগমের যেসব ওয়ার্ড রয়েছে) দলের কনভেনার বা আহ্বায়ক পদে রেখে দেওয়া হয়েছে ভি শিবদাসন তরফে দাসুকে। দাসু দলের রাজ্যের অন্যতম সম্পাদক পদেও রয়েছেন। রানিগঞ্জ টাউন বা শহর ব্লকের সভাপতি করা হয়েছে যুব সংগঠনের সভাপতির পদ হারানো রুপেশ যাদবকে। দূর্গাপুর শহরের কনভেনার বা আহ্বায়ক পদে বসেছেন মৃগেন্দ্র পাল।