ASANSOL

অবৈধ খনির জল ঢুকে উৎপাদন বন্ধ ইসিএলের খনিতে, কর্মীদের বদলির নির্দেশে নরসমুদা কোলিয়ারি বন্ধের আশঙ্কায় ক্ষোভ

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২১ আগষ্টঃ অবৈধ খনি দিয়ে জল ঢুকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ইসিএলের কয়লাখনি। এবার সেই খনির কর্মীদের বদলির নির্দেশ দেওয়া হলো ইসিএলের তরফে। আর সেই নির্দেশের জেরে বন্ধের আশঙ্কা তৈরি হল ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার নরসুমুদা কোলিয়ারির। বদলির নির্দেশে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।


প্রসঙ্গতঃ, গত তিন মাস ধরে জল ঢুকে যাওয়ায় আসানসোলের ইসিএলের নরসুমুদা কোলিয়ারির উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঐ কোলিয়ারির ১৪০ জন কর্মীকে অন্য জায়গায় বদলির নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আর এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন কোলিয়ারি কর্মীরা। তাদের আশঙ্কা, এই বদলির মধ্য দিয়েই কোলিয়ারি কর্মী শুন্য করে দিয়ে আস্তে আস্তে খনিটিকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার নরসুমুদা কোলিয়ারি থেকে ইতিমধ্যেই ডাইরেক্টর জেনারেল অফ মাইন সেফটির নির্দেশ মতো আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকবে। কারণ অবৈধ কয়লা খনির সঙ্গে যেভাবে ইসিএলের এই বৈধ কোলিয়ারির ভেতরে ভেতরে সংযোগ হয়েছে, তাতে চাসনালার মত বিপজ্জনক ঘটনা ঘটতে পারে যেকোনো দিন। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে আপাতত বন্ধ রয়েছে এই খনির উৎপাদন। এই কয়লাখনিতে দৈনিক কয়লা উত্তোলন হয় ১৫০ মেট্রিক টনের মতো। তারজন্য দৈনিক লাভ হতো ১ লক্ষ টাকা। এই কয়লা খনি থেকে এখনও কয়লা উত্তোলন করা যাবে সাড়ে ৪ মিলিয়ন টন। ফলে একদিকে কোলিয়ারির কয়লা উত্তোলন বন্ধ, অন্যদিকে খনির কর্মীদের বদলি।


এই দুইয়ের মধ্য দিয়ে শতবর্ষ প্রাচীন এই কয়লা খনিটির পুরোপুরি বন্ধের আশঙ্কা দেখছেন শ্রমিক সংগঠনগুলিও। এই কোলিয়ারি বাঁচাতে ও কয়লা মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সমস্ত শ্রমিক সংগঠনগুলি একজোট হয়ে আন্দোলনে নামলো।
সিটুর তরফে সূদর্শন প্রসাদ, ইনটাক নেতা প্রজয় মুসি, আইএনটিটিউসি নেতা হরেরাম সিং, আরএসএস বা সংঘ ঘেঁষা বিএমএসের নেতা দয়াচাঁদ নুনিয়ারা শনিবার এক সঙ্গে বলেন, এই খনির ভেতরে দিনের পর দিন জলে ডুবে দামি মোটর ও যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। হাইটেনশন মোটর আনলেই খনির জমা জল বাইরে বার করে আনা সম্ভব। কিন্তু সেই উদ্যোগ নিচ্ছে না খনি কর্তৃপক্ষ বা ইসিএল। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, এভাবে খনির উৎপাদন বন্ধ দেখিয়ে ভূগর্ভস্থ খনিটিকে বন্ধ করে দেওয়া। তাদের আরো অভিযোগ, যেভাবে কোলিয়ারি চত্বরে রমরমিয়ে বেআইনি কয়লা খাদান চলছিল সেই সময় রাজ্য পুলিশ ও খনি কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে এই বিপত্তি হতো না। যদিও কোলিয়ারির ম্যানেজার নন্দদুলাল সিংয়ের মত, কর্মীদের বসিয়ে না রেখে তাদের পাশের খনিতে অস্থায়ীভাবে বদলি করা হচ্ছে।এর মধ্যে অন্য কোনো কারণ নেই। খনি বন্ধ করার আশঙ্কা ভুল।


উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন অবৈধ কয়ল খনি দিয়ে জল ঢুকে পড়েছিল ইসিএলের নরসুমুদা খনিতে। চাষনালা খনি দুর্ঘটনার মতো বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে সেদিন বাঁচেন ইসিএলের নরসুমুদা কোলিয়ারির কর্মীরা। দ্রুততার সঙ্গে খনির ভেতর থেকে কর্মীদেরকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর বন্ধ হয়ে যায় এই কোলিয়ারির কয়লা উত্তোলন। এই খনিতে জল ঢুকে পড়ায় সমস্ত মেশিন জলের নিচে চলে যায়। যা পরিস্থিতি তাতে আগামী এক বছর পর্যন্ত এই খনি আর চালু করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *