মন্ত্রীত্ব চলে যাওয়াকে “অন্যায় জরিমানা” বলে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট বাবুল সুপ্রিয়র, পাল্টা কটাক্ষ জিতেন্দ্র তেওয়ারির, বাকযুদ্ধ চরমে
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২২ অক্টোবরঃ ফের সম্মুখ সমরে আসানসোলের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সাংসদ ও আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র। আবার বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে জিতেন্দ্র তেওয়ারির লড়াই শুরু হল সোশাল মিডিয়ায়।
বাবুল সুপ্রিয় যখন আসানসোল পুরনিগমের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তখন জিতেন্দ্র তেওয়ারি ছিলেন পান্ডবেশ্বরের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক ও আসানসোল পুরনিগমের মেয়র। এখন বাবুল দলবদল করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে। আর জিতেন্দ্র রয়েছেন কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিতে।
আবার শুরু হয়েছে যুযুধান দুই রাজনৈতিক দলের দুই নেতার লড়াই। একদিনেই আগে বাবুল সুপ্রিয় সোশাল মিডিয়া পোস্ট করে লেখেছিলেন, “যদি নিজের মন ও হৃদয় বলে অন্যায় না করেও দশ টাকা কেউ জরিমানা করেছে তবে সেই জরিমানার বিরুদ্ধে না আদালতে লড়াই করা উচিত”। এই পোস্ট থেকে ধরে নেওয়া যায়, বাবুল সুপ্রিয় তার মন্ত্রীত্ব চলে যাওয়াকে অন্যায়ভাবে জরিমানার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বাবুলের সেই পোস্টকে কটাক্ষ করে পাল্টা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি । “রামদেব বাবার সুপারিশে টিকিট পাওয়া ও মোদি হাওয়ায় বাবুলের জয়কে লটারিতে পুরস্কার পাওয়ার” সঙ্গে তুলনা করলেন আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি। বাবুল ও জিতেন্দ্রর পোস্ট, আর তার পাল্টা পোষ্ট নিয়ে শুরু হয়েছে সোশাল মিডিয়ায় জোর আলোচনা ।
বলতে গেলে, সেই ২০১৪ সাল থেকে বাবুল সুপ্রিয় ও জিতেন্দ্র তেওয়ারির কোনওদিনই সম্পর্ক সুমধুর ছিল না। বারবার একে অপরকে রাজনৈতিক আক্রমণ করেছেন। তা সত্ত্বেও বিজেপি ছাড়ার শেষের কয়েকদিন একই রাজনৈতিক দলের হয়ে গেছিলেন বাবুল সুপ্রিয় ও জিতেন্দ্র তেওয়ারি। ফলে সেই সময় তারা কাছাকাছি এসেছিলেন ও দুজনেরই সুর ও সম্পর্ক মধুর ও খানিকটা নরম হয়েছিল। কিন্তু সাংসদ হিসাবে বাবুল সুপ্রিয় দল ছাড়তেই ফের তাকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শানালেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি।
প্রসঙ্গতঃ, গত ১৮ সেপ্টেম্বর আচমকাই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন বাবুল সুপ্রিয়। তারপরই জানিয়েছিলেন সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা। সেই মতো একাধিকবার লোকসভার স্পিকারের সময় চাইলেও তা না মেলায় খানিকটা জটিলতা তৈরি হয়েছিল। অবশেষে গত ১৯ অক্টোবর সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন বাবুল। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপির প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দেন বাবুল। ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, শেষে দলে গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না। তা সত্ত্বেও কাজ করে গেছেন। তবে কোনদিন কোনও পরিস্থিতিতেই অন্যায় মেনে নিতে রাজি নন তিনি। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “ছোটবেলায় শুনেছিলাম, যদি নিজের মন ও হৃদয় বলে যে কেউ অন্যায়ভাবে তোমাকে দশ টাকা জরিমানা দিয়েছে তাহলে জরিমানাটা না দিয়ে আদালতে লড়াই করো, দরকার হলে একশো টাকা খরচ করে সেই জরিমানা revoke করাও। অন্যায় ভাবে করা জরিমানা, যে যাই বলুক, কখনই তা মেনে নেবে না। তাই আড়াই বছর বাকি থাকা সত্ত্বেও বিজেপির হয়ে জেতা সাংসদ পদ ছেড়ে দিতে একটুও দ্বিধা করিনি।”
আর এই পোস্টকে হাতিয়ার করেই এবার বাবুল সুপ্রিয়কে আক্রমণ করেছেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি। বাবুল সুপ্রিয়র পোস্টটি শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, “মন্ত্রীত্ব চলে যাওয়াটা যদি জরিমানা হয়। তাহলে বিনা পরিশ্রমে রামদেব বাবার সুপারিশে ও মোদিজির জনপ্রিয়তায় সাংসদ হওয়াটা লটারিতে প্রাইজ পাওয়ার মত নয় কি?” অর্থাৎ জিতেন্দ্র তেওয়ারির দাবি, স্রেফ রামদেবের সুপারিশ ও মোদির জনপ্রিয়তারও কারণেই সাংসদ পদ পেয়েছিলেন বাবুল। এই পোস্ট নিয়ে তীব্র বিতর্কও তৈরি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই জিতেন্দ্রর মন্তব্যের বিরোধীতা করেছেন। কেউ আবার সমর্থনও জানিয়েছেন। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবুল সুপ্রিয় নতুন করে কোন পোষ্ট করেননি।