RANIGANJ-JAMURIA

২১ ঘন্টা পরে ছাই সরিয়ে তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার লিখিত আশ্বাস কতৃপক্ষের

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ২৮ নভেম্বরঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রানিগঞ্জ থানার মঙ্গলপুর শিল্প তালুকের একটি বেসরকারি ইন্টিগ্রেটেড স্টিল ও পাওয়ার প্ল্যান্টে দূর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়া তিনজনের দেহ উদ্ধার হলো। দূর্ঘটনার প্রায় ২১ ঘন্টা পরে শনিবার রাত একটার পরে একে একে ভেঙে পড়া ফ্লাই এ্যাস বা ছাই রাখার কনটেইনার বা সেলোর ধ্বংসাবশেষ ও ছাই সরিয়ে তিনজনের মৃতদের উদ্ধার করে উদ্ধারকারী দল। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিলো একজনকে। শুক্রবার রাত প্রায় একটা নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটেছে ।

file photo


রবিবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে তন্ময় ঘোষ, দিলীপ গোপ ও শিবশংকর ভট্টাচার্যের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হয়।
প্রসঙ্গতঃ, শুক্রবার রাত একটা নাগাদ ঐ কারখানার ফ্লাই এ্যাস রাখার সিমেন্টের কনটেইনার বা সেলো ভেঙে পড়ে। তার তলায় চাপা পড়ে যাওয়া ৪ জন কর্মীর মধ্যে শিবনাথ রাম নামে এক কর্মীকে উদ্ধার করা গেলেও পূর্ব বর্ধমানের কালনার বাসিন্দা তন্ময় ঘোষ (৪২), অন্ডালের হরিশপুরের বাসিন্দা দিলীপ গোপ (৪৩) ও বাঁকুড়ার সোনামুখীর পলাশডাঙ্গা বাসিন্দা শিবশংকর ভট্টাচার্য্য (৩৬) সেলোর নিচে চাপা পড়ে যায়। গভীর রাতে এই ঘটনার খবর পুলিশ প্রশাসন ও দমকল বিভাগকে খবর দেওয়া হয়। রাত থেকেই তল্লাশি শুরু করে পুলিশ ও দমকল বিভাগ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ বিশেষ উদ্ধারকারী দল। এদিন সকালে তিন কর্মীর পরিবারের সদস্যরা ঘটনার খবর পেয়ে কারখানায় চলে আসেন। অধীর আগ্রহে তারা দূর্ঘটনাস্থলের অদূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত শনিবার রাত একটার পরে ঘটনার প্রায় ২১ ঘন্টা পরে প্রথম একজনের দেহ উদ্ধার করা হয়। পরে একে একে আরো দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই সেই সময় কারখানা চত্বরে থাকা তিন কর্মীর পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।


মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পরে কারখানার তৃনমুল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির শাখার নেতা নির্মল পাল ও আরো দুই নেতা কারখানার কতৃপক্ষের সঙ্গে ক্ষতি পূরণ নিয়ে বৈঠকে বসেন। দীর্ঘ আলোচনার পরে কারখানা কতৃপক্ষ ক্ষতি পূরণ দেওয়ার ব্যাপারে লিখিত আশ্বাস দেন।


পরে নির্মলবাবু বলেন, তিন কর্মীর পরিবারকে কারখানা কতৃপক্ষ ক্ষতি পূরণ দেবে বলে জানিয়েছে। কারখানার কর্মীদের পাশাপাশি রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দোপাধ্যায় সহ পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেস নেতৃত্বর দাবি ছিলো, কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার জন্য কারখানা কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর হওয়া উচিত।
যদিও, রবিবার বিকেল পর্যন্ত এই ঘটনা নিয়ে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি। এই প্রসঙ্গে নির্মল পাল বলেন, মৃত কর্মীর পরিবারের সদস্যরা এমন কোন পদক্ষেপ নেবে বলে জানা নেই।


কারখানা কতৃপক্ষের তরফে জিএম (এইচআর) সুমিত চক্রবর্তী আগেই বলেছিলেন, খুবই দুঃখ জনক ঘটনা। গাফিলতির যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত না করে এখনই বলা সম্ভব নয়। এই ঘটনা রাতে হয়েছে। কেন ঘটনা ঘটলো তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিন জেলা হাসপাতালে মৃতদেহ নিতে আসা তিন কর্মীর পরিবারের সদস্যরা বলেন, এমন ঘটনা ঘটবে তা আমরা ভাবতে পারিনি। কারখানা কতৃপক্ষ ক্ষতি পূরণ দেওয়ার লিখিত আশ্বাস দিয়েছে।
মৃত দিলীপ গোপের স্ত্রী ছাড়াও দুই মেয়ে আছে বাড়িতে। ১৪ বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করা শিব শংকর ভট্টাচার্য বাড়িতে মা, স্ত্রী ও ৪ বছরের ছেলে রয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের কালনার বাসিন্দা তন্ময় ঘোষের বাড়িতে মা ও এক ভাই ও বোন রয়েছে।


ঘটনার খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ কারখানায় যায়। পরে দমকলকর্মীরা সেখানে পৌঁছান। সকাল সাড়ে দশটার শেষ খবর দমকলকর্মীদের উপস্থিতিতে ক্রেন ও জেসিপি দিয়ে কনটেইনারের ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ চলছে।
আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের (এসিপি সেন্ট্রাল ২) তথাগত পান্ডে শনিবার সকালে বলেন, একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনজন তলায় চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে কারখানার অন্য কর্মীরা দাবি করেছে। উদ্ধার কাজ চলছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত একটা নাগাদ ঐ কারখানার ফ্লাই এ্যাস রাখার সিমেন্টের কনটেইনার বা সেলো ভেঙে পড়ে। তার তলায় চাপা পড়ে যাওয়া ৪ জন কর্মীর মধ্যে শিবনাথ রাম নামে এক কর্মীকে উদ্ধার করা গেলেও রানিগঞ্জের বল্লভপুর এলাকার বাসিন্দা তন্ময় ঘোষ(৪২), অন্ডালের হরিশপুরের বাসিন্দা দিলীপ গোপ (৪৩) ও বাঁকুড়ার পলাশডাঙ্গা বাসিন্দা শিবশংকর ভট্টাচার্য্য(৩৬) সেলোর নিচে চাপা পড়ে যায়। আহত কর্মীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গভীর রাতে এই ঘটনার খবর পুলিশ প্রশাসন ও দমকল বিভাগকে খবর দেওয়া হয়। রাত থেকেই তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ ও দমকল বিভাগ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ বিশেষ উদ্ধারকারী দল।
কারখানার শ্রমিকদের দাবি কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। যদিও এই ঘটনার ব্যাপারে শনিবার সকাল পর্যন্ত কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। তারা জানায়, এখন উদ্ধার কাজ চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *