আসানসোল পুরনিগম নির্বাচন : ১০৬ টি ওয়ার্ডেই মনোনয়ন শাসক দলের, ১০২ টিতে বিজেপি, নির্দলদের সমর্থনের ভাবনা বাম ও কংগ্রেসের
বেঙ্গল মিরর,দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৩ জানুয়ারিঃ আসানসোল পুরনিগমের ১০৬ টি ওয়ার্ডে ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিলো সোমবার। আসানসোলের জিটি রোডের সেন্ট জোসেফ হাইস্কুলের মনোনয়ন কেন্দ্রে এদিন রাজ্যের আইন ও
পূর্ত দপ্তরে মন্ত্রী মলয় ঘটক ও জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ১০৬ টি ওয়ার্ডেই এদিন শাসক দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দেন। পরে মন্ত্রী ও জেলা সভাপতি বলেন, আসানসোলের মানুষেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন। তারা উন্নয়ন চান। তাই আমরা সবকটি ওয়ার্ডেই জিতবো। আমরাই প্রথমে থাকবো। বাকিরা দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ হওয়ার জন্য লড়াই করবে।
অন্যদিকে, এদিন মনোনয়ন কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার জন্য হাজির ছিলেন দলের জেলা সভাপতি দিলীপ দে ও প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি। বিজেপি ১০২ টি ওয়ার্ডে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে। আসানসোলের রেলপার এলাকার ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ডে বিজেপির তরফে কোন প্রার্থী দেওয়া হয়নি। একই ভাবে, রানিগঞ্জের ৩৫ নং ওয়ার্ডে পদ্মের প্রার্থী নেই। এদিন বিকেলের পরে জানা যায়, আসানসোলের রেলপারের ২৩ নং ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী অরবিন্দ তেওয়ারি মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু তিনি তা জমা দেননি। এই প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে ও জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ডে দল ভালো নির্দল প্রার্থী যার জেতার সম্ভাবনা আছে, তাকে সমর্থন করবে। ২৩ নং ওয়ার্ডে ঠিক কি হয়েছে, তা দলগতভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর রানিগঞ্জের ৩৫ নং ওয়ার্ডের বলতে গেলে সব ভোটার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তাই সেখানে প্রার্থী দেওয়া হয়নি।
এদিকে, বামেরা ১০৬ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯৫ টি ওয়ার্ডে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে। ৭৭ নং ওয়ার্ডে বামেরা প্রার্থী দেয়নি বলে জানা গেছে। এই ব্যাপারে পশ্চিম বর্ধমান জেলা সিপিএমের সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ৭৭ নং ওয়ার্ডে বামেরা নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করবে। এছাড়াও প্রার্থী দেওয়া হয়েছে, এমন কোন ওয়ার্ডে যদি আমাদের মনে হয়, কোন নির্দল প্রার্থী শক্তিশালী, তার জয়ের সম্ভাবনা আছে। তাহলে সেখানে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করবো। যাতে সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসকে হারানো যায়।
জানা গেছে, ৯৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে বামেদের বড় শরিক সিপিএম ৬৮টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে। তিন শরিক সিপিআই ৮ টি , আরএসপি ৬ ও ফরওয়ার্ড ব্লক ১৩ টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পেরেছে।
অন্যদিকে, ৬২টি ওয়ার্ডে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিলো কংগ্রেসের তরফে। কিন্তু জানা গেছে, ৫৯টি ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী এদিন বলেন, শাসক দলের তরফে দলের প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা বিশেষ করে কুলটি এলাকায় হয়েছে। সেই কারণে নাম ঘোষণার পরেও তিনটি ওয়ার্ডে প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেননি। আমরা ঝুঁকিও নিতে চাইনি। তিনি আরো বলেন, যেসব ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পারিনি, সেখানে দল নির্দলকে সমর্থন করবে।
এদিন, বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতা দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৮৯ জন নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। অন্যান্যরা রয়েছেন ৪ জন।
প্রশাসন সূত্রে এদিন বিকালে জানানো হয়, নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য ৫৬৯ টি ফর্ম তোলা হয়েছে। বিকেল তিনটের সময় মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ হয়েছে। এদিন ঠিক কতগুলো মনোনয়ন জমা পড়েছে, তা সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা যায়নি। জমা পড়া মনোনয়ন পত্রগুলি মঙ্গলবার পরীক্ষা বা স্ক্রুটিনি করা হবে। ৬ জানুয়ারি প্রত্যাহারের শেষ দিন। সেদিন বিকেলের পরে ১০৬ টি ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে।