ASANSOLKULTI-BARAKAR

আসানসোলের কুলটিতে শুটআউট, পর পর তিনটি গুলি করে খুন ইসিএলের বরখাস্ত হওয়া এক কর্মীকে

প্রতিবাদে ও দূষ্কৃতিকে গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ, এলাকায় চাঞ্চল্য

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য , আসানসোল, ১৯ জানুয়ারিঃ ( Asansol News Today ) পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের কুলটিতে সাত সকালেই ঘটলো শুটআউট ঘটনা ( Shootout at Kulti) । খুব কাছ থেকে বা পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে ইসিএলের বরখাস্ত হওয়া এক কর্মীকে পর পর তিনটি গুলি করে খুন করে এক দূষ্কৃতি। বুধবারের আর এই ঘটনার জেরে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আসানসোলের কুলটি থানার ডিসেরগড়ের শীতলপুরের তুলসীহিড়ের বাসিন্দা মৃতের নাম পরেশ মাঝি ( ৫০)। এদিন সকাল তুলসীহিড় এলাকায় বাড়ির অদূরে বড়নামোতে একটি ঝুপড়ি থেকে পরেশ মাঝিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছায়। পুলিশের সঙ্গে এলাকার বাসিন্দারা তাকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।

এই ঘটনার পরে গোটা এলাকার আদিবাসী সমাজের মানুষেরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তারা এই ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়ে নিয়ামতপুর ডিসেরগড় রোড বেলা বারোটার পর থেকে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। পরে আরো পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলাকায় আসেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পশ্চিম) অভিষেক মুদি।
জানা গেছে, পরেশ মাঝি শীতলপুরের তুলসীহিড় বাসিন্দা হলেও গত পাঁচ বছর ধরে স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়িতে থাকতেন না। তিনি দাদার কাছে থাকতেন। পরেশ মাঝি ইসিএলের শীতলপুর অতিথিশালার কর্মী ছিলেন। কিন্তু ঠিক মতো কাজ করতে না যাওয়ায় তাকে ইসিএল বরখাস্ত করে। এই ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।


হিরালাল সোনা পাউড়ি ও ব্রক্ষদেও পাসোয়ান নামে দুই স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, এদিন সকাল নটা নাগাদ অন্যদিনের মতো পরেশ মাঝি এখানে আসে। এলাকায় অনেক গাছ লাগানো হয়েছে। সেখানে সে এসে গরু বাছুর গুলিকে দেখাশোনা করতো আর একটি ঝুপড়ির মধ্যে বসে থাকতো। এক দুষ্কৃতি হেঁটে আসে ও ঝুপড়িতে পরেশকে দেখে পিস্তল বার করে তিনটি গুলি চালায়। দুষ্কৃতি হেঁটে চলে যাওয়ার সময় কয়েকজন তাকে ধরতে যায়। তখন সে পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। হিরালালবাবু আরো আরো বলেন, আদিবাসীদের উপরই শুধু কেন এমন আক্রমণ করা হচ্ছে। কিছু দিন আগেই নিখোঁজ এক আদিবাসীর মৃতদেহ নদী থেকে পাওয়া যায়। আর আজ এই ঘটনা। কুলটির পুলিশ প্রশাসন কি কাজ করছে? মৃত ব্যক্তির সাথে কারো তেমন কোনো শত্রুতাও ছিল না। এই রকম ঘটনা কেনো ঘটলো তা বুঝতে পারছি না।


মৃত পরেশ মাঝির স্ত্রী মঙ্গলী মেঝাইন বলেন, আমার স্বামী বাড়িতে আমাদের সঙ্গে থাকতো না। নদীর ওপারে দাদার বাড়িতেই থাকতো। প্রায় পাঁচ বছর ধরে মাঝে মাঝে এখানে আসতো, আবার চলে যেতো। শেষ বাঁধনা পরবের সময় এখানে এসেছিল। আমার স্বামী নেশা করতো। কিন্তু তার সাথে কারো কোন শত্রুতা ছিল না। কে তাকে মারলো তা বুঝতে পারছি না।
ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। যার জেটে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে তারা জানান, এখানে কেন অধিবাসীদেরকেই টার্গেট করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত করা উচিত। এই সব ঘটনার পেছনে যে বা যারা রয়েছে তাদের খুঁজে বার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে পুলিশ প্রশাসনকে। তবেই এইরকম ঘটনা বন্ধ করা যাবে। তা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন করবো।


এদিকে, এদিন বিকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালের গুলিবিদ্ধ দেহর ময়নাতদন্ত করা হয়। সেই সময় হাসপাতালে আসেন পরেশ মাঝির মেয়ে পারমিতা মাড্ডি। সে বলতে পারেনি যে, কে তার বাবাকে খুন করলো। তিনটি গুলি চিহ্ন মৃত ব্যক্তির শরীরে পাওয়া গেছে। একটি গুলি গলায় লাগে। বাকি দুটি দুহাতে। ঐ ঝুপড়ি থেকে পুলিশ তিনটি গুলির খোল উদ্ধার করেছে।
এই প্রসঙ্গে ডিসিপি (পশ্চিম) অভিষেক মুদি বলেন, পুলিশের কাছে খবর আসে শীতলপুরে মাঠের কাছে একটি ঝুপড়িতে এক ব্যক্তিকে গুলি করা হয়েছে। পুলিশ এসে ঐ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে মৃত বলা হয়। ব্যক্তির শরীরে তিনটি গুলি লাগার চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ একটি খুনের মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তদন্ত শেষে জানানো সম্ভব হবে যে কি কারণে এই খুনের ঘটনা।

অবৈধ কয়লা বোঝাই 14টি ট্রাক আটক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *