আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন ১২ এপ্রিল
সব দলের প্রার্থী নিয়ে শুরু জল্পনা, দৌড়ে অনেকেই গণনা ১৬ এপ্রিল
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১২ মার্চঃ ২০২১ সালের বিধান সভা নির্বাচনের ঠিক পরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো। তার ঠিক পরে গত অক্টোবর মাসের শেষ দিকে প্রথমে দল বদল করে তৃনমুল কংগ্রেসে যোগদান। পরের মাসে আসানসোলের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা।
এবার বাবুল সুপ্রিয়র ছেড়ে যাওয়া আসন আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে চলেছে আগামী ১২ এপ্রিল। গণনা হবে ১৬ এপ্রিল। শনিবার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এমনটাই জানিয়েছে।
তবে, এই নির্বাচনের আগে আগামী ২ এপ্রিল থেকে রাজ্যে শুরু হচ্ছে ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। ইতিমধ্যেই জয়েন্ট পরীক্ষার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার বেশ কয়েকটি পরীক্ষার দিন পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করা করে দেওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার নির্বাচন দপ্তরের আধিকারিকরা এই নিয়ে কিছু বলতে পারেননি। তবে তারা বলেন, গোটা বিষয়টি রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে।
এদিন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তা থেকে জানা গেছে, আগামী ১৭ মার্চ আসানসোল লোকসভা নির্বাচনের জন্য গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা হবে। সেদিন থেকেই প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারবেন। মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৪ মার্চ। পরের দিন ২৫ মার্চ জমা দেওয়া মনোনয়ন পত্রগুলি স্ক্রটিনি করা হবে। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৮ মার্চ। সেদিন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে।
এদিকে, উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই কোন দলের কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। ২০১৪ সালে বাবুল সুপ্রিয় আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়ে প্রায় লক্ষ ভোটে জিতে চমক দেন। তাকে কেন্দ্র প্রতিমন্ত্রী করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আবার বাবুল সুপ্রিয় প্রার্থী হন ও প্রায় ২ লক্ষ ভোটে জেতেন। কিন্তু ২০২১ এর বিধান সভা নির্বাচনে বিজেপির হার হওয়ার পরে সব রাজনৈতিক হিসাব বদলে যায়। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয় বাবুল সুপ্রিয়। দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি তিনি। প্রথমে দল ছাড়েন ও পরে সাংসদ পদ। যে কারণে ৬ মাসের মধ্যে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে চলেছে।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে আসানসোল লোকসভার অন্তর্গত ৭ টি বিধান সভার মধ্যে মাত্র দুটিতে জেতে বিজেপি। সেগুলো হলো কুলটি ও আসানসোল দক্ষিণ। বাকি ৫টি পায় তৃনমুল কংগ্রেস।
সদ্য হওয়া আসানসোল পুরনিগম নির্বাচনে বিজেপির তেমন কোন সাফল্য আসেনি। ১০৬ টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি পায় মাত্র ৭ টি ওয়ার্ড।
এমন পরিস্থিতিতে বিজেপির প্রার্থী কে হবেন তা চর্চার বিষয়। ২ বছর আগে প্রায় ২ লক্ষ ভোটে জেতা আসানসোল কেন্দ্রে কে হবে পদ্মের মুখ? বিজেপির অন্দরের খবর জিতেন্দ্র তেওয়ারি অবশ্যই দৌড়ে আছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে এদিন সন্ধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থী হওয়া ঠিক করবে। এখনই বলা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত আসানসোল কেন্দ্রে জয়ের স্বাদ পায়নি তৃনমুল কংগ্রেস। তাই তারা এবার পাখির চোখ করছে এই আসানসোলকে। ঘাসফুলের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে অনেকেই আছেন। যার মধ্যে অন্যতম সায়নী ঘোষ। সায়নী ঘোষ গত বিধান সভা নির্বাচন আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের কাছে হেরে যান। এখন তিনি দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী। দুবারের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের প্রার্থী করেন কিনা, তা কোটি টাকার প্রশ্ন।
রানিগঞ্জের বিধায়ক তথা আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান তাপস বন্দোপাধ্যায়ের নাম নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে অনেকেই চাইছেন বাইরে থেকে নয়, আসানসোলের পরিচিত কাউকে দেওয়া হোক দলের টিকিট। তাতে অনেকটা সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কথাও অনেকে মনে করাচ্ছেন।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের সভাপতি বিধান উপাধ্যায় বলেন, এখনো আলোচনা হয়নি। দল আমার কাছে কিছু জানতে চায়নি।