Bengali NewsDURGAPUR

নাবালিকার বিয়ে রুখলো পুলিশ, ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ

বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ: বিয়ে বাড়ির বাজছে সানাই, বাজছে নানান বাদ্য, একটি দিকে তৈরি হচ্ছে নানান রকম খাদ্য হইচই আর চেঁচামেচি আসছে লুচির গন্ধ…….. না। সোমবার রাত্রে আর বিয়ে বাড়ির ভোজ এর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো না, দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের জেমুয়া এলাকায় নাবালিকার বিয়েতে বাদ সাধল পুলিশ প্রশাসন। রোববার সকালেই প্রশাসন সদর্থক ভূমিকায় এক বছর 14 র নবম শ্রেণীর নাবালিকা ছাত্রীর বিয়ে রুখে দিল প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। কিছুদিন আগে বাল্যবিবাহ রোধ করার লক্ষ্যে পড়ুয়াদের নিয়ে এলাকা জুড়ে সচেতনতা প্রচারে নেমেছিল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্কুল পড়ুয়ারা। উদ্দেশ্য শুধু একটাই সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পড়ুয়াদের সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে সরকারের তরফে।

নাবালিকার  বিয়ে রুখলো পুলিশ

এসকল সরকারি সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে পড়ুয়ারা তাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্যে দিয়ে পঠন-পাঠন চালিয়ে গিয়ে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে তারপরই আগামী জীবনের চিন্তাভাবনা করবে বলে প্রচার চালানো হয়। কিন্তু সে সকল প্রচারকে নজর আন্দাজ করে চলছিল নাবালিকা ছাত্রীর বিয়ে দেওয়ার জন্য জোর তোড়জোড়। সোমবার রাত্রিতে রয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠান তাই সকাল থেকেই চলছিলো রান্নাবান্না আয়োজন, ঠিক তখনই চাইল্ড লাইনের সদস্যরা ও পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকেরা হাজির হয়ে নাবালিকা পাত্রীর বিয়ে রুখে দেয়। জানা গেছে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাভুক্ত ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেণীর ছাত্রী সে।

এই খবর ব্লক প্রশাসনের কাছে পৌঁছতেই তারা নিউটাউনশিপ থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে লাউদোহার জয়েন্ট বিডিও প্রসেনজিৎ সামন্ত নেতৃত্বে চাইল্ড লাইন এর সদস্যদের সঙ্গে গিয়ে বিয়ে রুখে দেয়। তারা জানিয়ে দেয় ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ । কেন তা অপরাধ যোগ্য তার কার্যকারণ বোঝানো হয় পরিবারের সদস্যদের। জানা গেছে ওই নাবালিকার লাউদোহা রাঙ্গামাটি এলাকায় এক যুবকের সাথে জেমুয়ায় বিয়ে হচ্ছিল, গোপন সূত্রে এই খবর পৌঁছে যায় লাউদোহা ব্লকের জয়েন্ট বিডিও প্রসেনজিৎ সামন্তর কাছে,

তিনি তড়িঘড়ি চাইল্ড লাইন ও নিউটাউনশীপ থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে পৌঁছেযান নবম শ্রেণীর ঐ ছাত্রীর বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে, ডেকে পাঠানো হয় ঐ নাবালিকা, ও তার বাবা মা কে, দেখতে চাওয়া হয় নাবালিকার বয়সের প্রমানপত্র ও আঁধার কার্ড। সব কিছু দেখার পর শেষ পর্যন্ত ঐ নাবালিকাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের জেরা শুরু করেন লাউদোহার জয়েন্ট বিডিও প্রসেনজিৎ সামন্ত ও চাইল্ড লাইনের সদস্যরা, তখনি তারা স্বীকার করে নেয় নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার ঘটনা। এরপরেই অবিলম্বে বিয়ে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে। পরিবার-পরিজনেরা বাধা দিতে এলে লাউদোহা ব্লকের জয়েন্ট বিডিও প্রসেনজিৎ সামন্ত সাফ জানিয়েদেন, সরকারী কাজে বাঁধা দিতে এলে আইনমাফিক ব্যবস্থা নিতে তারা বাধ্য থাকবেন। শেষমেশ ঐ নাবালিকার সাথে তার বাবা মা কেও নিউটাউনশীপ থানায় নিয়ে যায় প্রশাসনিক আধিকারিক। নাবালিকার বিয়ে দিয়ে অন্যায় করছিলেন স্বীকার করে নেন নাবালিকার বাবা।

ওই পরিবারের সদস্যদের মাঝে নাবালিকা ওই ছাত্রীর দাবি তাদের পরিবার অত্যন্ত গরিব তাই বাধ্য হয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসছিলো সে।স্থানীয় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি জানিয়েছেন প্রশাসন তার নিজের মতোই কাজ করেছে, নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় বলেই জানিয়েছেন তিনি। জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জয়নুল হক জানান ওই পড়ুয়া কন্যাশ্রীর আওতাভুক্ত, এছাড়াও রাজ্য সরকারের একাধিক সুযোগ-সুবিধা পায় সে তারপরও কেন এ ধরনের পদক্ষেপ তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। লাউদোহা ব্লকের জয়েন্ট বিডিও প্রসেনজিত সামন্ত জানান, নাবালিকার বিয়ে চলছে এই খবর পেয়ে তারা পৌঁছেছেন এই বিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই নাবালিকার আগামীর ভবিষ্যৎ যাতে সুনিশ্চিত হয়, সে যাতে তাঁর সুন্দর জীবন যাপন ও স্বাভাবিক জীবন ছন্দ, ফিরে পাই তার ব্যবস্থা করার জন্য তারা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলেই জানিয়েছেন।

তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে এটাই যে বেশ কিছু মানুষজনদের বারংবার নাবালিকাদের বিবাহ বন্ধের আরজি জানালেও কোন কথায় তারা ভ্রুক্ষেপ করে না। তা এদিনের ঘটনাতে আরো একবার স্পষ্ট হয়েছে। কিছুদিন আগেই এই ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা বাল্যবিবাহ রুখতে গোটা এলাকা জুড়ে সচেতনতার প্রচারে নেমেছিল। এর মাধ্যমে প্রান্তিক ওই এলাকার মানুষজনকে সচেতন করা হয়। পড়াশোনা চালানোর জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে সেগুলিও বোঝানো হয়, কিন্তু তারপরও এ ধরনের নাবালিকা গোপনে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ দেখে মনে হতেই পারে সমস্ত প্রচারই বিফল হয়েছে এই অংশে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আজ বাংলার ঘরে ঘরে ছাত্র ছাত্রীদের পঠন-পাঠন থেকে শুরু করে তাদের সব রকম সহায়তা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, কিন্তু তারপরও কেন এই বাল্যবিবাহ, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *