চিরকুন্ডায় বেআইনি কয়লাখনিতে ধস, উদ্ধার করা যায় নি কাউকেই, এলাকা ভরাট করার সিদ্ধান্ত
বেঙ্গল মিরর,দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত, চিরকুন্ডা ( ঝাড়খণ্ড), ২২ এপ্রিলঃ বাংলার পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বরাকর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ডের চিরকুন্ডা থানার বিসিসিএলের চাঁচ ভিক্টোরিয়া এরিয়ার চাঁচ কোলিয়ারীর ডুমরিজোড় এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে অবৈধ বা বেআইনি কয়লা খনির কারণে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগকারী একটি রাস্তা সহ বিশাল এলাকা জুড়ে ধস নামে। ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিলো সেই ধসে চাপা পড়ে অনেক মানুষ তলায় রয়ে গেছেন। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার সেখানে উদ্ধারকার্যকে কেন্দ্র করে দিনভর নাটক চলল। একইসঙ্গে চললে রাজনৈতিক চাপান উতর।
এদিন ভারত কোকিং কোল লিমিটেড বা বিসিসিএলের ঐ কোলিয়ারির এজেন্ট প্রশান্ত বন্দোপাধ্যায় চিরকুন্ডা থানায় দুজন কয়লা মাফিয়ার নাম দিয়ে কয়লা চুরি এবং ধসের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই নিয়ে চলতি বছরে ঐ থানায় আটটির মতো অভিযোগ করা হয়েছে। গত ১৪ মার্চ শেষ অভিযোগ দায়ের হয় চিরকুন্ডা থানায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিসিসিএলের উদ্ধারকারী ১১ জনের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর একটি অবৈধ খাদানের মধ্যে দিয়ে কিছুটা নামে। পরে আবার তারা ফিরে আসে। তারা জানায়, প্রায় ৬০ ফুট এলাকা পর্যন্ত আমরা নেমেছিলাম। তারপর ধস নামায় কিছুটা রাস্তা বন্ধ হয়েছে। সামনে একটি অংশের জল তারা দেখতে পেয়েছেন বলেও জানান ।এরপর তারা অন্য দিকে ঘুরে উপরে উঠে আসেন। ঐ জায়গা মধ্যে তারা কাউকে দেখতে পাননি বলে এজেন্ট জানিয়েছেন । এর পরিপ্রেক্ষিতেই জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল খনি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে শুক্রবার সকাল থেকে তারা খনির পাথর মাটি দিয়ে সেখানে থাকা প্রায় ১০ টি অবৈধ খানি মুখ বন্ধ করবেন। সেই কাজ শুরুর জন্য ডাম্পার করে খনির বড় বড় বোল্ডার ও মাটি আনতেই স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ আটকে দেন।
এদিন বেলার দিকে এলাকায় আসেন বিজেপির বিধায়ক অপর্ণা সেনগুপ্ত। পরে আসেন বিজেপি রাজ্যসভার সদস্য ও ঝাড়খণ্ডের সভাপতি দীপক প্রকাশ। অপর্ণা দেবীও ভরাটের কাজ তখনকার মতো বন্ধ রাখতে বলেন। একইসঙ্গে তিনি পুলিশেট ডিসিপি ও বিসিসিএলের জি এম অপূর্ব দত্তকে ঘটনাস্থলে আসার দাবি জানান। তারা এসে পৌঁছানোর পর বলা হয় যে দুটি কুয়ো আকারের বেআইনি কয়লা খনি মুখ বন্ধ করা হয়েছে সেগুলি খুলে দেওয়া হোক। কোন মুখ বন্ধ করা যাবে না। উদ্ধারকার্য চালাতে হবে। অপর্ণা দেবী বলেন, এই এলাকার গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলেছি। তারা বলছেন বৃহস্পতিবার রাতেই নাকি একটি জায়গা থেকে তারা কিছু মানুষের আওয়াজ পেয়েছেন। সেই জায়গাটিকে তিনি চিহ্নিত করে ডিসিপি সন্দীপ সিং ও পুলিশের আধিকারিকদের বলেন যে জায়গা থেকে আওয়াজ পাওয়া গেছে, সেখানে মাটি খোঁড়ার ব্যবস্থা করুন।
সেইমতো শুক্রবার বিকেলে বিসিসিএলের এরিয়ার এজেন্ট প্রশান্ত বন্দোপাধ্যায় ও জেনারেল ম্যানেজার অপূর্ব দত্তর উপস্থিতিতে প্রায় ১২ফুট চওড়া চারিদিকে করা হয়। উপর থেকে উদ্ধারকারী দলের দুই বিশেষজ্ঞ বলেন তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। এরপরে পুলিশ প্রশাসন জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে রাতেই সমস্ত এলাকা ভরাটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কিন্তু রাত আটটার শেষ খবর, ভরাটের কাজ শুরু হয়নি বলে জানা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছিলেন ঠিকমতো উদ্ধারকার্য করতে হবে।
প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এখানকার কয়লা হার্ড কোক। যার বাজার মূল্য ১৪ হাজার টাকা টন। এই এলাকায় কয়লা চুরি ও বেআইনি কারবারের সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনের সকলেই যুক্ত।
অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য সভার সাংসদ বলেন, ধানবাদ নিরসা সহ সমগ্র ঝাড়খন্ডে অবাধে কয়লা লুট চলছে। এই ইস্যু নিয়ে আমরা সংসদে যেমন সোচ্চার হব তেমনি রাজ্য বিধানসভায় বিষয়টিকে তুলবেন বিধায়ক অপর্ণা সেনগুপ্ত ।