আসানসোল জেলা হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করার সময় পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালালো এক অভিযুক্ত, শুরু বিভাগীয় তদন্ত
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৩০ এপ্রিলঃ( Asansol News Today ) এক যুবতীকে অপহরণ করার পরে গণধর্ষণের অভিযোগে ধৃত দুই অভিযুক্তর মধ্যে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালালো একজন। শনিবার দুপুরে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোল জেলা হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগের কাছে। পালিয়ে যাওয়া আসামির নাম জয়কান্ত কুমার। বছর ২৬ এর ঐ আসামির বাড়ি বিহারের লক্ষীসরাইয়ে। ধৃত অন্য আসামি গুল ফারাজ শেখ ( ৩২) ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বাসিন্দা। এই ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ হাসপাতালে ছুটে আসেন। বেশ কয়েকটি পুলিশের গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়া আসামির খোঁজে জোর তল্লাশি শুরু হয়। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে আসানসোল উত্তর ও আসানসোল দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, আসানসোল জেলা হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগ ও তার আশপাশে লাগানো সিসি ক্যামেরা গত ১০ দিন ধরে বিকল হয়ে রয়েছে। সেই কারণে এমারজেন্সি বিভাগের সামনে থেকে বেরিয়ে ঐ আসামি ঠিক কোন দিকে পালিয়েছে, তার কোন ফুটেজ পাওয়া যায়নি। তবে পরে পুলিশ এমারজেন্সি বিভাগের সামনে থাকা হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষী ও বাইরে কয়েকজনকে জেরা করে জেনেছে, এক যুবক দুপুর একটা নাগাদ এমারজেন্সি বিভাগের বাইরে দৌড়ে বেরিয়েছিলো। তারপর সে হাসপাতালের গেট দিয়ে বেরিয়ে এসবি গরাই রোডে এসে রামসায়ের ময়দানের দিকে পালায়। পুলিশ এখন হাসপাতালের বাইরে এসবি গরাই রোডে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ঐ আসামির গতিবিধি জানার চেষ্টা করছে।
এই ঘটনা নিয়ে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (সেন্ট্রাল) কুলদীপ এস এস বলেন, অপহরন করে গণধর্ষণের অভিযোগের ভিত্তিতে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ দুই যুবককে গ্রেফতার করেছিলো। শনিবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করানোর সময় জয়কান্ত কুমার নামে একজন পালিয়ে যায়। তার খোঁজ শুরু হয়েছে। যারা তাদের নিয়ে গেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের বাবুয়াতলার এক যুবতীকে অপহরণ করে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিলো গত ২৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে জয়কান্ত কুমার ও গুল ফারাজ শেখকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৩ ও ৩৭৬ নং ধারায় মামলা হয়। আদালতের নির্দেশ মতো শুক্রবার আসানসোল জেলা হাসপাতালে যুবতীর মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে ধৃত দুই যুবককে আসানসোল উত্তর থানার এএসআই কাজল সাহা ও এক কনস্টেবল ও এক সিভিক ভলেন্টিয়ার মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসেন জেলা হাসপাতালে। এমারজেন্সি বিভাগের কাছে ১৫ নং রুমে চিকিৎসকের চেম্বারে তাদের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য চিকিৎসক নমুনা সংগ্রহ করেন। চেম্বারের বাইরে বেঞ্চে দুই আসামিকে নিয়ে বসেছিলেন কনস্টেবল ও সিভিক ভলেন্টিয়ার।
এএসআই চিকিৎসকের সঙ্গে চেম্বারে কাগজ ঠিক করছিলেন। সেই সময়ই এই ঘটনাটি ঘটে। আরো জানা গেছে, চিকিৎসকের চেম্বারের বাইরে দুই আসামিকে নিয়ে বসে থাকা কনস্টেবল ও সিভিক ভলেন্টিয়ার মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তা দেখে, সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দরজার দিকে বসে থাকা জয়কান্ত কুমার উঠে তিনটি দরজা পার করে হেঁটে আসে। তারপর এমারজেন্সি বিভাগের মেন গেট দিয়ে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দৌড়ে পালায়। আসামি পালানোর কথা জানতে পেরে মিনিট খানেক পরে পুলিশ কর্মীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। কিন্তু ততক্ষণে আসামি বেপাত্তা হয়ে গেছে।
পুলিশ কর্মীদের একাংশ দাবি, আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো।
এদিকে, সিসি ক্যামেরা বিকল প্রসঙ্গে হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানায়, যে কোম্পানি তা লাগিয়েছে, তাদেরকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারা সারাই করেনি।