বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে বিয়ে বাড়িতে মুম্বাই নিবাসী বাবা ও মেয়ে, ভাবতেই পারছি না, মিরাক্কেল ছাড়া কিছুই নয়
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২ মেঃ ( Andal Airplane Trouble ) এমন যে হতে পারে, তা ভেবেই উঠতে পারছেন। তারপর অক্ষত অবস্থায় বেঁচে থাকা। এমনই অনুভূতি বাবা মণীন্দ্র ভার্মা ও মেয়ে টিয়া ভার্মা। তারা মুম্বাইয়ে বাসিন্দা। সোমবার সকালে আসানসোলের এসবি গরাই রোডের একটি ম্যারেজ হলে, তাদের সঙ্গে যখন কথা বলা হচ্ছিলো, তখন তাদের দেখে মনে হয়, তারা আগের রাতের অভিজ্ঞতা ও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। বাবা ও মেয়ে বলেন, “মিরাক্কেল ” বলেই এখন এখানে।




রবিবার সন্ধ্যায় এই বলতে এই গরমে প্রথম কালবৈশাখি হয় পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল দূর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে। আর সেই কালবৈশাখির তাণ্ডবে মুম্বাই থেকে দুর্গাপুরের অণ্ডালের কাজি নজরুল ইসলাম বিমান বন্দরে রানওয়েতে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় স্পাইসজেটের বোয়িং বি ৭৩৭ বিমানকে। সন্ধ্যা সাতটার ঠিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে হওয়া ঝড় বৃষ্টিতে মুখে পড়ে এই বিমানে। প্রাকৃতিক এই দূর্যোগের মধ্যে তীব্র ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয় বিমানের মধ্যে। যাত্রীদের পাশাপাশি তাদের জিনিস পত্র বিমানের ভেতরে উলটপালট হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সেই ধাক্কা সামলে পাইলটের দক্ষতায় প্রায় ১৮৮ জন যাত্রী দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান ৷ সন্ধ্যা ৭টা বেজে ২৫ মিনিট নাগাদ সেই অন্ডাল বিমানবন্দরে নামে। এই ঘটনায় তিন বিমানসেবিকা সহ ৪০ জন যাত্রী হন। যার মধ্যে ২৩ জন সামান্য জখম হন ৷ বাকি ১৭ জনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদের অন্ডাল ও দূর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যাদের বিমানবন্দরে কতৃপক্ষের তরফে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
আর এই বিমানেই যাত্রী ছিলেন মুম্বাইয়ের মণীন্দ্র ভার্মা ও তার মেয়ে টিয়া ভার্মা ৷ তারা মুম্বাই থেকে অন্ডালের কাজি নজরুল ইসলাম বিমান বন্দরে নেমে আসানসোলের একটি বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ৷ সোমবার মণীন্দ্র ভার্মার এক ভাইপোর বিয়ে রয়েছে আসানসোলেই।
সোমবার সকালে তাদের মুখেই শোনা গেলো সোই ঘটনার ভয়াবহতার একটা ছবি ৷ মণীন্দ্র ভার্মা বলেন, বিমানে চাপা এই প্রথম নয়। অনেক বার বিমানে সফর করেছি। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যায় যা হলো, তা ভাবতেই পারছিনা। আর এটার জন্য আমি কেন, কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। এটা একটা দূর্ঘটনা। মুহুর্তের মধ্যে হয়েছে। তাই কিছু করার ছিলো না। এটা ভোলার। তবে তিনি যে তার মেয়েকে নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন, তাও বলেন। তার কথায়, কোন মিরাক্কেল হলেই, আমরা এর থেকে বেরোতে পারবো। যা শেষ পর্যন্ত হয়। টিয়ার কথায়, এই ঘটনার পরে বিমান চাপতে ভয় হবে। তার চোখের সামনে বারবার ভেসে আসছে বিমানের ভেতরকার ছবিটা।
আপাততঃ তারা সব ভুলে বিয়ের আনন্দে মেতে থাকতে চাইছেন।
অবতরণের ঠিক কয়েক মিনিট আগে কালবৈশাখির মুখে পড়লো মুম্বাই থেকে আসা মুম্বাই অন্ডাল স্পাইসজেটের বোয়িং বি ৭৩৭ বিমান। সেই বিমান রবিবার সন্ধ্যা ৬ টা বেজে ৫০ মিনিট নাগাদ মাঝ আকাশে ঝড়ের কবলে পড়ে। এই ঘটনায় বিমানে থাকা ৪০ জন মত আহত হয়। তারমধ্যে তিনজন বিমানসেবিকা রয়েছেন। স্পাইসজেটের এই বিমানে সবমিলিয়ে ১৮৮ জন ছিলেন। ঝড়ের দাপটে মাঝ আকাশে বিমান টলতে থাকে। অবতরণ করার সময় জোরে ঝটকা লাগে। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগেরই সেফটি বেল্ট ছিঁড়ে যায়। অনেকে আবার সেফটি বেল্ট না পড়ার কারণেই ছিটকে পড়ে আহত হন বলে জানা গেছে। ঝড়ের দাপট তৎপরতার সঙ্গে পাইলট সামাল দেন। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৭ বেজে ২৫ মিনিট নাগাদ কাজি নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে এই বিমান ।
রবিবার সন্ধ্যার দুর্ঘটনার পর সোমবার সকালে স্বাভাবিক হল অণ্ডাল বিমানবন্দরের পরিষেবা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ মুম্বই থেকে অণ্ডাল আসা যাত্রীবাহী বিমান ঝড়ের কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ৷ বিমানের ভিতরে থাকা যাত্রীদের সিট বেল্ট ছিঁড়ে তাঁরা ছিটকে যান ৷ এমনকি অনেকের তখন বেল্ট বাঁধাও ছিল না ৷
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ঝড়ের কারণে বিমানটি তড়িঘড়ি অবতরণ করানো হচ্ছিল ৷ সেই সময় তিন-চারবার বিমানটিতে ঝাঁকুনি হয় ঝড়ের কারণে ৷ যাত্রীরা এদিক ওদিক ছিটকে যান ৷ ফলে ৪০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন ৷
তারমধ্যে ১৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। পরে ১৪ জনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ বাকি ৩ আঘাত গুরুতর হওয়ায় তারা দূর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৷ ঘটনার পর বিমানবন্দরে পরিষেবা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল ৷ তবে, এদিন সকাল থেকে ফের স্বাভাবিক হয়েছে সব পরিসেবা বলে বিমানবন্দর কতৃপক্ষ জানায়।
এদিন হাসপাতালে ভর্তি আহতদেরকে দেখতে যান পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ ও আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা।