আসানসোল পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন, জেলা হাসপাতালের সিসিইউয়ে কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মীকে থানায় নিয়ে গিয়ে হেনস্তার অভিযোগ, সেনা জওয়ানকে অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত জড়িত থাকার সন্দেহ
সেনা জওয়ানকে যে গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়, তা দূর্গাপুরেই ধরা পড়ে, ঘটনাটি অপহরণেরও নয়
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় / সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত, আসানসোল, ১৩ জুনঃ শুধু মাত্র সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে, পানাগড় সেনা ছাউনির এক জওয়ানকে অপহরণ করা হয়েছে, এই সন্দেহের বশে আসানসোল জেলা হাসপাতালের সিসিইউ বা ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কর্মরত এক স্বাস্থ্য কর্মীকে আসানসোল দক্ষিণ থানার তুলে নিয়ে গিয়ে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠলো। শুধু তাই নয় কোন রকম প্রমাণ ছাড়াই হুগলি জেলার তারকেশ্বরের বাসিন্দা সুদীপ ধাড়া নামে ঐ কর্মীর বয়ান থানায় পুলিশের সামনেই জোর করে নেয় দুই সেনা অফিসার মোবাইলে রেকর্ডিং করেন। এমনকি তাকে অশ্রাব্য কথা বলে লকআপে ঢোকানোর হুমকি দেয় আসানসোল দক্ষিণ থানার এক পুলিশ অফিসার ও দুই সেনা অফিসার। প্রায় ৪ ঘন্টা পরে পুলিশ বুঝতে পারে যে, তাদের ভুল হয়েছে। তখন ঐ স্বাস্থ্য কর্মীর কাছে আসানসোল দক্ষিণ থানার আইসি কৌশিক কুন্ডু ক্ষমা চেয়ে, তাকে ছেড়ে দেন।
যদিও, পুলিশ কোন ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে, কোন প্রমান ছাড়া শুধু মাত্র একজনকে থানায় তুলে এনে তদন্ত করার নামে হেনস্তা করতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পুলিশ আধিকারিকরাও এখন এই ঘটনা কি ভাবে মিটিয়ে নেওয়া যায়, তার চেষ্টা করছেন।
শনিবার দুপুরে হওয়া এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
সোমবার আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাসের উপস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা এই ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের ডিএনবি কনফারেন্স রুমে একটি সভা করেন। তারা রীতিমতো সরব হন পুলিশের এহেন আচরণের বিরুদ্ধে। গোটা বিষয়টি নিয়ে তারা শেষ দেখে ছাড়বেন বলেও জানিয়েছেন। হাসপাতালের সুপারও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তিনি গোটা বিষয়টি পশ্চিম বর্ধমান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ শেখ ইউনুসকে জানিয়েছেন।
সিএমওএইচ এদিন বলেন, পুলিশ ঠিক কাজ করেনি। হাসপাতালে কর্মরত একজনকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো, অথচ আমাদের কিছু জানানো হলো না। তাও আবার সিসিইউয়ের মতো জরুরী ওয়ার্ড থেকে। চিকিৎসক ও কর্মীরা মঙ্গলবার আমার কাছে আসবেন। সব শুনে যা করার আমি করবো।
জানা গেছে, সুদীপ ধাড়া আসানসোল জেলা হাসপাতালে সিসিইউতে হসপিটাল এ্যাসিসটেন্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
তিনি এদিন বলেন, অন্যদিনের মতো আমি গত ১১ জুন শনিবার দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ তারকেশ্বর থেকে গাড়ি নিয়ে ডিউটিতে আসি। সেই সময় আমাকে আসানসোল দক্ষিণ থানার অফিসার বলে একজন ফোন করেন। তিনি জানতে চান, আমার গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছে কিনা? আমি বলি না। তখন তিনি, আমার গাড়ি কোথায়? কাগজ আছে কিনা। আমি বলি আমার সঙ্গে আছে। তখন তিনি বলেন আমরা আসছি। এরপর দুজন সিসিইউতে আসেন। আমি সব বলি। তারপর আমাকে বলেন, নিচে যেতে বড়বাবু আছেন। কথা বলবেন। আমি নিচে যেতেই, জোর করে ৪/৫ জন আমাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে থানায় চলে আসে।
আমি বলি, ডিউটিতে আছি। উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানাতে হবে। ওরা আমাকে কিছু করতে দেয়নি। আমি গাড়িতে যেতে যেতে ফোনে এক সহকর্মীকে বলি। তারপর আমার ফোন, মানিব্যাগ সব কেড়ে নেওয়া হয়। সুদীপবাবু বলেন, থানায় একটা ঘরে বসিয়ে আমাকে বলা, দুর্গাপুরের বাঁশকোপা টোলপ্লাজায় সিসি ক্যামেরায় ১২ টা বেজে ৪০ মিনিটে আমার গাড়ি দেখা গেছে। আমি বলি হ্যা। আমি সেই হাসপাতালে আসছিলাম। আমি বলার চেষ্টা করি যে, আমি গাড়ি কোথাও থামাই নি ও কাউকে চাপাইনি। তারপরেও পুলিশ আমার কথা শোনেনি। জোর করে দুই সেনা অফিসার আমার বয়ান মোবাইলে রেকর্ড করেন। এক পুলিশ অফিসার আমাকে লকআপে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অশ্রাব্য কথা বলেন। চার ঘন্টা ধরে এমন চলে। তারপর এক অফিসারের কাছে ফোন আসে। তারপর থানার আইসি বলেন, আমাদের ভুল হয়েছে। আপনার গাড়িতে কিছু হয়নি। বলে ক্ষমা চেয়ে আমায় ছেড়ে দেন।
সুদীপবাবুর প্রশ্ন, এই রকম হেনস্তা করার মানে কি? এই চারঘন্টা ডিউটিতে না থাকায় কোন রুগীর কিছু হলে, তার দায়িত্ব পুলিশ নিতো?
হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় এদিন বলেন, পুলিশের আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো। আমরা আইনকে শ্রদ্ধা করি। আমরা পুলিশকে সাহায্য করে থাকি সবসময়। তা বলে এই রকম আচরণ? ঠিক হয়নি। আমরা সুপার ও সিএমওএইচকে জানিয়েছি। কি হয় দেখি, তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।সুপার বলেন, আমি সিএমওএইচকে জানিয়েছি। আমার সঙ্গে পুলিশ কথা বলেছেন।
এদিকে, আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (সেন্ট্রাল) কুলদীপ সোনেয়াল এদিন বলেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো। সেনা অফিসাররা আমাদেরকে বলেছিলেন। তাই আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ঐ ব্যক্তিকে থানায় আনা হয়। সুপার বা স্বাস্থ্য আধিকারিককে না জানিয়ে এইরকম ভাবে কর্মরত কোন কর্মীকে হাসপাতাল থেকে জোর করে তুলে আনা যায় কিনা, তার উত্তর ডিসিপি দেননি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঐ সেনা জওয়ানকে যে গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়, তা দূর্গাপুরেই ধরা পড়ে। ঘটনাটি অপহরণেরও নয়।