ASANSOL

এলাহাবাদ থেকে ট্রেনে করে টিয়া পাখি এনে পাচার, দুই পাচারকারিকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ

বেঙ্গল মিরর, আসনসোল, দেব ভট্টাচার্যঃ এলাহাবাদ থেকে ট্রেনে করে টিয়া পাখি এনে আসানসোল ও বর্ধমানের বাজারে পাচার করার আগেই রেল সুরক্ষা বাহিনীর হাতে ধরাপরা দুই পাচারকারিকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত ।একই সঙ্গে আটক করা ওই ২৫০ পাখিগুলিকেও উড়িয়ে দেওয়ার জন্য আদালতের পক্ষ থেকে শুক্রবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত রেল সুরক্ষা বাহিনীর আসানসোল ডিভিশনের সিনিয়র সিকিউরিটি কমিশনার চন্দ্রমোহন মিশ্র এই সময়কে জানান তাদের কাছে গোপনে খবর ছিল বৃহস্পতিবার ডাউন শিপ্রা এক্সপ্রেসের দুজন প্রচুর টিয়া পাখি বেআইনিভাবে নিয়ে আসছে ।সেই খবরের ভিত্তিতেই আসানসোল আউটার সিগন্যাল থেকে শুরু করে আসানসোল স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত সব জায়গাতেই আরপিএফ কে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে আউটার সিগন্যালে ডাউন শিপ্রা এক্সপ্রেসের গতি ধীর হতেই দুটি ছেলে নামে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের ধরা হয় এবং সাধারণ যাত্রী বগি থেকে তিনটি লোহার খাঁচায় নাইলন ব্যাগে ভরা আড়াইশো টিয়া পাখি উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি তারা বনদপ্তরকে জানান ।বনদপ্তরের রেঞ্জ অফিসার চিরঞ্জিত সাহা আসানসোল স্টেশনের পৌছলে রেল সুরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে তার হাতে ওই আড়াইশো টিয়া পাখি সহ দুজনকে তুলে দেওয়া হয়।এরা হল আসানসোল উত্তর থানা এলাকার মহাম্মদ ওয়াসিম , ওকে রোডের বাসিন্দা ।অন্যজন মোহাম্মদ হাসনাইন। সেও মুৎসুদ্দি মহল্লার বাসিন্দা।


সিকিউরিটি কমিশনার আরো জানান বারবার এই ট্রেনেই টিয়া পাখি বারবার ধরা পড়ছে । গত মার্চ মাসেও এই ট্রেনেরই সাধারণ বগি থেকে খাঁচাবন্দি ১৬০ টি টিয়া পাখি উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া গত বছরের এপ্রিলে ২০৫,মে মাসে ২৩০, ও জুলাই মাসে ১৭০ টি সহ মোট ৬০৫ টি টিয়া তিনবার এই ট্রেন থেকেই তারা উদ্ধার করেন এবং পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সব ক্ষেত্রেই পাখিগুলো একই ট্রেনে এলাহাবাদ থেকে আনা হচ্ছিল।


বন দপ্তরের জেলার ডি এফ ও বুদ্ধদেব মন্ডল বলেন শুধু ট্রেনে নয় গত এক বছরে এই জেলায় অন্তত তিনবার বিহার থেকে কলকাতা গামি বাসে থেকে বেশ কিছু টিয়া পাখিকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। আসানসোলের রেল যে উদ্ধার করেছিল এবং যে দুজনকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিল আমরা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী মামলা করেছি এবং ওদের দুজনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে আমি সদ্য জেলায় এসেছি। উত্তরপ্রদেশ থেকে বারবার কেন এত টিয়া পাখি এখানে পাচারের জন্য আনা হচ্ছে সেটা অবশ্যই খোঁজ করার চেষ্টা করব। যদিও বনদপ্তরের রেঞ্জ অফিসার বলেন ওই এলাকায় সহজেই হয়তো টিয়া পাখি পাওয়া যায়। এবং তার ক্রয় মূল্য কম বলে মনে করা হচ্ছে।

রেল সুরক্ষা বাহিনীর এক আধিকারিক বলেন আমরা ওই দুজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তারা বলেন ওখানে এসব ক্ষেত্রে খুব একটা বনদপ্তর বাধা দেয় না ।তা ছাড়াও কম দামে পাখি পাওয়া যায়। এই পাখিগুলো ওরা আসানসোল এবং বর্ধমানের বিক্রি করার জন্য আনছিল। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাশন দাসু বলেন যোগী রাজ্যে তাহলে বনদপ্তর কি করছে। বাংলায় এসে ওদের শেখা উচিত।
রেঞ্জ অফিসার চিরঞ্জিব সাহা জানান ঐ দুজনের বিরুদ্ধে আমরা ১৯৭২ এর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ৩৯ ৪২ ৪৪ এবং ৪৯ ধারায় মামলা করেছি । শুক্রবার ওদের আসানসোল আদালতে পাঠানো হলে সেখান থেকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের নির্দেশ পেয়েছি, পাখিগুলিকে চিত্তরঞ্জনে গিয়ে উড়িয়ে দেব।

জানা গেছে, এদিন সকালে আসানসোল স্টেশনের ঠিক আগে আউটার সিগনালে ডাউন শিপ্রা এক্সপ্রেস থামে। সেই সময় মহঃ হাসনাইন ও মহঃ ওয়াসিম তিনটি নাইলনের ব্যাগ নিয়ে নামে। তাদেরকে দেখে সন্দেহ হওয়ায় আরপিএফের ওয়েষ্ট পোষ্টের জওয়ান ও সিআইবির আধিকারিকরা আটকান। ব্যাগ খুলে দেখা যায়, তিনটি খাঁচায় ২৫০ টিয়াপাখি আছে। এরপরই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *