জেলা হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, বিক্ষোভ ভাঙচুরের অভিযোগ
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় : ( Asansol latest news in bangla) : আসানসোল জেলা হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভের চললো তান্ডব। হাসপাতালের সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মরত নার্সদের স্কুটি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে মৃত রোগীর পরিবারের সদস্য ও পরিচিতদের বিরুদ্ধে। হামলাকারীদের মধ্যে আসানসোল জেলা হাসপাতালে বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্সের বেশ কয়েকজন চালকও রয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার রাত এগারোটার পরে এই ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি খবর দেওয়ার আধ ঘন্টা পরে হাসপাতালে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ আসে বলে অভিযোগ হাসপাতাল কতৃপক্ষের। এই ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স থেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি তারা কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিয়েও আতঙ্কিত।




ঘটনার সময় যে চারজন নার্সের স্কুটি মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার ডাঃ উত্তম রায়ের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে সুপার এদিন দুপুরে আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাতে সুপার সোমবার রাতের গোটা ঘটনার বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। হাসপাতাল কতৃপক্ষ ইতিমধ্যেই হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। প্রয়োজনে পুলিশকে তা দেওয়া হবে। আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন এক যুবকের মৃত্যু হয়, তারপরে উত্তেজিত জনতা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে সৃষ্টি করে, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নাশকতার অভিযোগ অস্বীকার করলেও দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে হাসপাতালে ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে।
আসানসোল দক্ষিণ থানার বুধার সুকান্ত পল্লীর বাসিন্দা মৃত যুবকের নাম কাঞ্চন বাউরি ( ২০)। মৃত যুবক পেশায় এ্যাম্বুলেন্স চালক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ তাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। সেই সময় সেখানে তখন চিকিৎসক হিসাবে ডিউটিতে ছিলেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার ডাঃ উত্তম রায়। তখন রোগীর পেটে ব্যথার সঙ্গে লুজ মোশান ও বমির সমস্যা ছিলো। সঙ্গে সঙ্গে তাকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মেল মেডিকেল ওয়ার্ডে ডাঃ সোমনাথ গুপ্তর অধীনে ভর্তি করা হয়। ঐ চিকিৎসক পরে পরীক্ষা করে বাড়ির লোকেদের বলেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। পুরনো কিছু সমস্যার জন্য তার সংকট বেড়েছে। সন্ধ্যা নাগাদ তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
কিন্তু, শাসক দলের এক নেতার ফোন আসায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাকে মেল মেডিকেল ওয়ার্ড থেকে নিয়ে আসা হয় পুরনো ভবনের সিসিইউতে। সেখানে চিকিৎসা করা হলেও, কিছু হয়নি। শেষ পর্যন্ত রাত দশটার পরে তার মৃত্যু হয়। এই খবর পেয়ে মৃত যুবকের পরিবারের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। ২৫/৩০ জনের একটা দল এরপর উন্মত্ত হয়ে পড়ে। মৃত যুবকের বাবা সূর্য বাউরি সহ অন্যদের অভিযোগ, চিকিৎসায় অবহেলা ও গাফিলতির কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর তারা হাসপাতাল ভাঙচুর শুরু করে। সিসিইউয়ের থাকে এমারজেন্সির সামনে পর্যন্ত চেয়ার, বোর্ড সহ সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হয়। পুরনো আউটডোরের কাছে থাকা হাসপাতালে নাইট শিফটে ডিউটি করা চারজন নার্সের স্কুটি ভাঙ্গা হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালের পুুলিশ ক্যাম্প থেকে একজন আসেন। তার সঙ্গে
হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীরা থাকলেও, তারা কিছু করতে পারেননি। তাদের সামনেই চলে তান্ডব। খবর দেওয়া হলে, বেশ কিছুক্ষুন পরে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ততক্ষণে হামলাকারীরা বেপাত্তা হয়ে যায়। তারপর পুলিশ কোনমতে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
রাতে যুবকের পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ নিয়ে যায়নি। মঙ্গলবার সকালে তারা আসেন। গাফিলতির অভিযোগ করায়, হাসপাতাল কতৃপক্ষের তরফে তাদেরকে লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু তারা তা করেনি। ময়নাতদন্ত ছাড়াই হাসপাতাল কতৃপক্ষ যুবকের মৃতদেহ তাদের দেয়।
পরে হাসপাতাল সুপার বলেন, যুবকের চিকিৎসায় কোন গাফিলতি ও অবহেলা করা হয়নি। সব চিকিৎসা করা হয়েছে। যুবকের পুরনো কিছু সমস্যায় থাকায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাকে বাইরে রেফারও করা হয়েছিলো। কিন্তু বাড়ির লোকেরা নিয়ে যেতে না চাওয়ায় তাকে সিসিইউতে আনা হয়। শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। তিনি আরো বলেন, এরপর পরিবারের সদস্যরা মারমুখী হয়ে উঠেন। তারা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন নার্সের স্কুটি ভাঙ্গে। এদিন আমি গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
এদিকে পুলিশ জানায়, সুপারের অভিযোগ মতো তদন্ত শুরু করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। খবর পেয়েও দেরীতে পৌঁছানোর অভিযোগ আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশের তরফে অস্বীকার করা হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করলেও তাদের বিরুদ্ধে হাসপাতালে ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে।নিহত যুবকের নাম কাঞ্চন বাউরী বলে জানা গেছে, সে বুধা বাউড়ি পাড়ার বাসিন্দা, তিনি নিজেই হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স চালাতেন।এই ঘটনার পর লোকজনের অভিযোগ, চিকিৎসায় অবহেলার কারণে তার মৃত্যু ঘটে, এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতালে বিক্ষোভ করে, এই সময় হাসপাতাল ভাংচুরের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়।