আসানসোলের ১২ যুবক অমরনাথ দর্শনে গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে
কোন মতে রক্ষা, প্রাণে বেঁচে বাড়িতে যোগাযোগ, উদ্বেগে পরিবারের সদস্যরা
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ অমরনাথ দর্শনে গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহরের একদল যুবক। আসানসোল গ্রামের শ্যামলেন্দু রায়, অমিত রায়, বাপ্পা সামন্ত সহ ১২ জন গেছেন অমরনাথ দর্শনে। এরা সকলেই আসানসোলের নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য। স্বাভাবিক ভাবেই যুবকদের পরিবার রয়েছেন উদ্বেগের মধ্যে। ছেলেরা বেড়াতে গিয়ে এমন দূর্যোগের মুখে পড়ায়, তারা কি করবেন সেটাই এখন বুঝে উঠতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। ঐ যুবকরা সেখান থেকে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কোনক্রমে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। তারা জানিয়েছেন কিভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েছেন সেখানে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে কোন মতে প্রাণে বেঁচেছেন তাঁরা। তবে সবার সঙ্গে থাকা টাকা জিনিসপত্র সবই খোয়া গেছে। দূর্যোগের শিকার হওয়া যুবকদের পরিবারের সদস্যদের চোখ এখন শুধুই টিভির পর্দায়। কারোর মোবাইলে চার্জ নেই। কারোর বা নেই নেটওয়ার্ক। তবু ঘন ঘন মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা। কেউ আটকে রয়েছেন ক্যাম্পে। কেউ বা হাঁটা পথে পাহাড় বেয়ে নেমে আসছেন বিপদ মুক্ত জায়গায়। তবে একটাই স্বস্তি ঐ ১২ জন আপাতত বিপদ মুক্ত। তবু বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত উদ্বেগেই রয়েছেন রায় পরিবারের সদস্যরা। একই অবস্থা বাকি সব পরিবারের।
১২ জনের মধ্যে অন্যতম শ্যামলেন্দু রায়ের দাদা বিমলেন্দু রায় , মা চায়না রায় , স্ত্রী মুনমুন রায় শনিবার জানান সেই ঘটনার কথা।
জানা গেছে, শ্যামলেন্দু রায় সহ বন্ধুরা শুক্রবার আগে অমরনাথ দর্শন করে বেরিয়ে লঙ্গরখানায় খাবার খাচ্ছিলেন। তখনই পাহাড় থেকে ধেয়ে আসে হড়পা বান। যখন পাহাড় বেয়ে সেই হড়পা বান নেমে আসছে নিচের দিকে তখন তাদের কানের কাছে শুধু একটাই আওয়াজ। শুনতে পাওয়া যায়, ” ভাগো ভাগো” । দ্বিগবিদ্বীক শূন্য হয়ে তারা তখন সেখান থেকে উঁচু জায়গায় দৌড়ানো শুরু করেন। তারপরেও তারা বানের জলে ভিজে যান। কেউ বা ছিটকে আছড়ে পড়ে যান। চোখের সামনে দেখেন পাহাড় থেকে নেমে আসা বান কিভাবে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সবকিছু। ভাসিয়ে নিয়ে গেল সেই লঙ্গরখানাকে। বহু পুন্যার্থী ভেসে গেল চোখের সামনে। আসানসোল গ্রামের রায় পরিবারের সদস্যদের এখন একটাই ভগবানের কাছে প্রার্থনা, গ্রামের ছেলেরা সুস্থ ও বিপদ মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
জানা গেছে, গত ৪ জুলাই আসানসোল থেকে এই ১২ জন যুবক রওনা হয়েছিলেন অমরনাথ দর্শণে। তাদের লে লাদাখ যাওয়ারও কথা ছিলো। সবকিছু দর্শনের পরে তাদের ফিরে আসার কথা ছিল আগামী ১৮ জুলাই। কিন্তু মাঝপথে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে আপাতত সব বাতিল হয়েছেন। এখন সকলেই সেখান থেকে বাড়ি ফেরার চেষ্টায় রয়েছেন। শনিবার বিকেলের শেষ খবর, শ্যামলেন্দু রায়েরা বালতালে নেমে গাড়িতে শ্রীনগরের দিকে রওনা দিয়েছেন। এরপর তারা সেখান থেকে ট্রেনে আসানসোলে ফেরা। সবকিছু ঠিক থাকলে, তারা দুদিন পরে আসানসোলে ফিরবেন। সেই ফেরার দিকে তাকিয়ে এখন পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের ডিপিআরডিও তমোজিৎ চক্রবর্তী বলেন, কারোর যদি অমরনাথ থেকে ফিরতে সমস্যা হয়, তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুক। আমরা নবান্নের মাধ্যমে জন্মু সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবো।