ASANSOL

শিশু মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, নাম বিভ্রাট, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা তদন্ত কমিটির

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ দুদিন আগে গত রবিবার সকালে দু বছরের এক শিশু মৃত্যুতে আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিলো। সেই কারণে শিশুর পরিবারের সদস্যরা জেলা হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। অভিযোগের তদন্ত করতে সেদিনই তিন সদস্যর একটি কমিটি তৈরী করেছিলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুস খান।

file photo


মঙ্গলবার দুপুরে জেলা হাসপাতালের ডেপুটি সুপারের চেম্বারে সেই তদন্ত কমিটির তিন সদস্য জেলার ডিএমওসিএইচ ডাঃ স্বপন দাস, ডেপুটি সিএমওএইচ ডাঃ বিশ্বজিৎ জানা ও শিশু চিকিৎসক ডাঃ অমিয় ঘটক মৃত শিশুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। অন্যদের মধ্যে ছিলেন জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার ও ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক। মৃত শিশুর জ্যাঠা মহঃ ফিরোজ , ঠাকুমা রাবিয়া খাতুন সহ পরিবারের সদস্যরা তাদের অভিযোগ তদন্ত কমিটির সদস্যদের বলেন। এদিনও তারা আগের দিনের অভিযোগে অনড় থাকেন। তারা বলেন, এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসকের লেখা সিরাপ খাওয়ার পরে শিশু অচৈতন্য হয়ে পড়ে বাড়িতে। তারপর হাসপাতালে আনা হলে, তাকে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে রিপোর্ট সিএমওএইচের কাছে পাঠানো হবে।


সোমবারই সিএমওএইচ জানিয়েছিলেন, চিকিৎসায় কোন গাফিলতি হয়েছে এমন প্রমান প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া যায়নি। এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ অনিন্দ্য রায় শিশুটিকে পরীক্ষা করেন। বাড়ির লোকেরা বলেন, তার একদিনের জ্বর আছে। সেই মতো চিকিৎসক প্যারাসিটামল সিরাপ লিখে দেন। কি করে তা খাওয়াতে হবে, তাও বলা হয়। কিছুক্ষুন পরে বাড়ির লোকেরা শিশুটিকে অচৈতন্য অবস্থায় এমারজেন্সি বিভাগে আনেন। তখন চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে জানান। হাসপাতালে তার কোন চিকিৎসাই হয়নি। বাড়িতেই কোন কারণে তার গলায় কিছু আটকে গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে।


প্রসঙ্গতঃ, ঘটনার দিন লিখিত অভিযোগ করার সময় জানা গেছিলো আসানসোল দক্ষিণ থানার বুধার চমন তলার বাসিন্দা মৃত শিশুর নাম মহঃ সাদ্দাম। সেদিনই এমারজেন্সি বিভাগ ঔষধ লেখার টিকিটে শিশুর নাম লেখা হয় মহঃ সাদাব। আবার পরে বার্থ সাটিফিকেট দেখা যায়, মৃত শিশুর নাম মহঃ হোসেন। রবিবার দুপুরে শিশুর মৃত্যুর পরে বাড়ির লোকেরা এমারজেন্সি বিভাগে তান্ডব চালায়। কাঁচের গার্ড ভাঙ্গার পাশাপাশি জরুরি খাতা, ঔষুধ সহ চিকিৎসার সামগ্রী মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। শতাধিক মানুষ কার্যত এমারজেন্সি বিভাগ দখল করে নেয়। সাড়ে তিন ঘন্টার মতো এমারজেন্সি বিভাগ বন্ধ থাকে। বিকেল চারটের পরে পাশে অর্থোপেডিক আউটডোর থেকে রোগী ভর্তি চালু করতে পারে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। অনেক রাতে এমারজেন্সি বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়। তবে ঘটনার পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাসপাতালে দুই এসিপি হাসপাতালে এলেও এমারজেন্সি বিভাগ খালি করতে পারেননি। যে কারণে সেদিন পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।


মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলার সিএমওএইচ বলেন, মৃত শিশুর নাম বিভ্রাট হয়েছিলো। এক নামে এমারজেন্সি বিভাগের টিকিট, এক নামে অভিযোগ। পরে জানা যায় নাম অন্য। তা ঠিক করে পরিবারের সদস্যদের নতুন করে অভিযোগ লিখতে বলা হয় সোমবার। এদিন ডেকে তাদের কথা তদন্ত কমিটি শুনেছেন। আমাকে তারা চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টও খতিয়ে দেখা হয়েছে। সবকিছু একটা রিপোর্ট আকারে আমি স্বাস্থ্য দপ্তরের ডিএইচএসকে পাঠিয়ে দিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *