ASANSOL

আসানসোল জেলা আদালতে কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা, দূর্নীতির গন্ধে প্রতারণা চক্রের হদিশ সিআইডির, গ্রেফতার ২

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ আসানসোল জেলা আদালতে কর্মী নিয়োগের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বড়সড় দুর্নীতি চক্রের ফাঁস করার পথে প্রথম ধাপ এগুলো রাজ্য পুলিশের সিআইডি। চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি প্রতারণা চক্রের দুই পান্ডাকে নদীয়া থেকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার আনা হয় আসানসোলে। তাদের নাম হল হাঁসখালির প্রসেনজিৎ মন্ডল ও অন্যজন ধানতলার নিহার বিশ্বাস। ধৃত দুজনকে আসানসোল আদালতে তুলে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চায় সিআইডি। মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট তরুণ মন্ডল সেই আবেদনের ভিত্তিতে তাদের জামিন নাকচ করে ১০ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান সরকারি আইনজীবী মনোজ সিনহা।


তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালে আসানসোল জেলা আদালতের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বেনিয়ম ধরা পড়েছিল। ভুয়ো নথি বানিয়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অনেকেই উত্তরপত্র লিখেছিলেন। তখন বেশ কয়েকজন ধরা পড়েছিলো। আসানসোল দক্ষিণ থানা সহ একাধিক থানায় এই ঘটনা নিয়ে মামলা হয়েছিল। এরপর কলকাতার হাইকোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি সিআইডি এই মামলার দায়িত্ব তদন্ত শুরু করে। তারপর এই দুজনকে গ্রেফতার করে ১০ দিনের হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি।


প্রসঙ্গতঃ, স্টাফ সিলেকশন এক্সজামিনেশন অফ পশ্চিম বর্ধমান জজশিপ -২০১৯) পরীক্ষাটি হয় ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আসানসোল জেলা আদালতে ই স্টেনো ও চতুর্থ শ্রেণি পদে কর্মী নিয়োগের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। আসানসোল শহর সহ শিল্পাঞ্চলের একাধিক স্কুলে পরীক্ষার্থীদের থেকে একাধিক মোবাইল, ভ্যানিশিং কালি, এ্যাডমিট কার্ড সহ পরীক্ষার্থী দেওয়ার কারণে আটটি মামলায় ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেফতার হওয়া বেশিরভাগই ছিল নদীয়ার বাসিন্দা। প্রায় সাত সপ্তাহ পরে এরা সকলেই জেল থেকে জামিন পায়। পরে এই বিষয়টি নিয়ে জনৈক এক পরীক্ষার্থী রহস্য বার করার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। সেই মামলাতেই সম্প্রতি উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয় সিআইডিকে বিশেষ টিম গঠন করে এই মামলার তদন্ত করতে হবে। কলকাতা থেকে সিআইডির একটি বিশেষ দল তদন্ত শুরু করতে গিয়ে জানতে পারে নদীয়ায় একটি বড় চক্রের কথা জানতে পারে। যারা এইসব পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে পরীক্ষার হলে উত্তরপত্র মোবাইলের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলে।

প্রাথমিকভাবে সিআইডি এটা জানতে পারে যে নদীয়াতেই প্রধানতঃ সক্রিয় এই চক্র। চাকরি পরীক্ষার্থীরা হয় নিজেরা ওদের সাথে যোগাযোগ করেছিলোন, না হয় তারা নিজেরাই যোগাযোগ করে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে। টাকা পাওয়ার পর ঐ চক্র ভুয়ো পরিচয় পত্র বানিয়ে তার মাধ্যমে সিমকার্ড তৈরি করে। পরে সেই সিম কার্ড পরীক্ষার্থীদের দিয়ে দেয়। তাদের মোবাইলে তা লাগিয়ে পরীক্ষার হলে যাওয়ার জন্য বলে। পরীক্ষার হলে পৌঁছানোর পর প্রশ্নের উত্তর সরাসরি এরা তাদের কাছে পৌঁছে দেয়। এই চাকরির পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেবে এই নিশ্চয়তা দিয়ে এই চক্রটি টাকা আদায় করে। আসানসোল শিল্পাঞ্চলে যারা গত ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষা দিচ্ছিল তাদের মধ্যে ২৫ জন ধরা পড়ে। এদেরকে যারা পরীক্ষার হলে গার্ডে ছিলেন তারাই ধরে পুলিশকে জানান। আসানসোল দক্ষিণ থানা ও কুলটি থানার পুলিশ মোট আটটি মামলা করেছিল। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, শুধু নদীয়ার একটি চক্র রয়েছে এমনটা নয়। এই চক্রের সঙ্গে প্রভাবশালীদেরও যোগাযোগ থাকতে পারে। এখন সেটাই খুঁজে বার করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *