আসানসোল শিল্পাঞ্চল জুড়ে পুজোর ৫ দিনে ৩৫ টিরও বেশি পথ দূর্ঘটনা
মৃত ১ শিশু সহ ৪, জখম ৬০ জন
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ ( Road Accidents During Durgapuja ) ষষ্ঠী থেকে দশমীর রাত। দূর্গাপুজোর এই ৫ দিনে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন থানা এলাকায় সবমিলিয়ে ৩৫ টিরও বেশি পথ দূর্ঘটনা ঘটেছে। এই পথ দূর্ঘটনায় এক শিশু সহ মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ২ জন রানিগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা। জখমের সংখ্যা সবমিলিয়ে ৬০ এরও বেশি। জখমদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী। আহতরা আসানসোল জেলা হাসপাতাল সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ষষ্ঠীর রাতে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ১ যুবকের। গুরুতর আহত হয় আরো ৩ জন। ষষ্ঠীর রাত ১১টা নাগাদ এই পথ দূর্ঘটনাটি ঘটে রুপনারায়নপুরের সামডি রোডের আমডাঙ্গা মোড়ে । সালানপুর থানার আছড়ার বাসিন্দা মৃত যুবকের নাম আকাশ মন্ডল (৩০)। আহত তিনজনের নাম হলো সালানপুর থানার কুসুমকানালির উজ্জল কর্মকার, আমডাঙ্গা বাগচি মোড়ের সন্তোষ চট্টোপাধ্যায় ও পিঠাকেয়ারির রাহুল পাল।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠীর রাতে এগারোটা নাগাদ আমডাঙ্গা দূর্গা মন্ডপ থেকে মোটর সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন উজ্জল কর্মকার ও সন্তোষ চট্টোপাধ্যায়। সেই সময় উল্টো দিক থেকে আসা আকাশ মণ্ডল ও রাহুল পালের মোটর সাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তাদের। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান পুজো কমিটির সদস্যরা ও রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির পুলিশ। তড়িঘড়ি আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় পিঠাকিয়ারির স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেখান থেকে নিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে আকাশ মন্ডলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আরো জানা গেছে, বাকি তিনজন সন্তোষ চট্টোপাধ্যায়, উজ্জ্বল কর্মকার ও রাহুল পালের আঘাত গুরুতর হওয়ায়, তাদেরকে পরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে, অষ্টমীর রাতে দূর্গাপুর থেকে ঠাকুর দেখে ফেরার সময় একটি গাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। আসানসোলের রানিগঞ্জ থানার মঙ্গলপুরের কাছে একটি গাড়ি ধাক্কা মারলে ঐ গাড়ি উল্টে যায়। সেই গাড়িতে থাকা একই পরিবারের শিশু সহ ৮ জন সদস্য আহত হয়। জখম অবস্থায় পুলিশ সবাইকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ৮ বছরের শিশু অংশ কুমার সাউকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অষ্টমীর রাতে আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের সিআইএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন সাঁতা ধর্মস্থান মন্দিরের বাসিন্দা বিশ্বকর্মা সাউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজের চারচাকা গাড়ি নিয়ে দূর্গাপুরে ঠাকুর দেখতে যান। দূর্গাপুর থেকে বাড়ি ফেরার সময় রানিগঞ্জের মঙ্গলপুরের কাছে কোন একটি গাড়ি পেছন থেকে সাউ পরিবারের গাড়িতে ধাক্কা মারে। তাতে ঐ চারচাকা গাড়ি উল্টে যায়। পুলিশ খবর পেয়ে দূর্ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ৮ বছরের ছেলে অংশ কুমারকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাকীদের রানিগঞ্জে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার নবমীর রাতে দুটি পৃথক পথ দূর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালকে দুই যুবকের মৃত্যু হয়। আরো একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রানিগঞ্জ থেকে আসানসোলের দিকে যাওয়ার সময় একটি ঘটনা ঘটে। অন্য একটি ঘটনা ঘটে আসানসোলের দিক থেকে রানিগঞ্জ যাওয়ার সময়। মৃত দুই যুবকের নাম হলো রানিগঞ্জ থানার টিরাট গ্রামের সুব্রত পাল ( ২৬) ও অশোক পল্লীর অভিজিৎ দাস ( ২৬)।বুধবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে দুই যুবকের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়।অন্যদিকে, আসানসোলের কুলটি থানার নিয়ামতপুরে বুধবার ভোররাতে পরপর চারটি গাড়ির সংঘর্ষ হয়। তাতে গুরুতর আহত ২জন। কুলটি থানা অন্তর্গত নিয়ামতপুর ফাঁড়ি এলাকার ইসকো বাইপাস রোডে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, পেছন থেকে একটি ট্রাক প্রথমে একটি স্করপিও গাড়িকে ধাক্কা মারে। সেই স্করপিও গাড়িটি আগে বা সামনে থাকা একটি মারুতি ভ্যানকে ধাক্কা মারে। পরে মারুতি ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাকের পেছনে গিয়ে ধাক্কা মারে । ঘটনায় গুরুতর আহত হয় দুইজন। তবে প্রথমে যে ট্রাকটি ধাক্কা মারে সে তার চালক সুযোগ বুঝে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় এলাকা ছেড়ে । ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ । আহতদের উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। পরে দুর্ঘটনা গ্রস্থ স্করপিও, মারুতি ভ্যান ও একটি ট্রাককে নিয়ামতপুর ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়।
জানা গেছে, বুধবার দশমীর সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে তেমন কোন পথ দূর্ঘটনা ঘটেনি। তবে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর রাতে। যদিও পুজোর দিনগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে গোটা আসানসোল শিল্পাঞ্চল জুড়ে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে একাধিক বন্দোবস্ত ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো।