বর্ধমান সন্মার্গ চিটফান্ড মামলা : কালিপুজোও জেলে কাটাতে হবে হালিশহরের পুর চেয়ারম্যানকে
আবারও জামিন নাকচ রাজু সাহানির, পরবর্তী শুনানি ২৯ অক্টোবর
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ বর্ধমান সন্মার্গ চিটফান্ড মামলায় আবারও জামিন নাকচ হলো হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃনমূল কংগ্রেসের নেতা রাজু সাহানির। এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর তাকে আসানসোল জেলা আদালতের সিজিএমের এজলাসে তোলা হয়েছিলো। সেদিন তার জামিন নাকচ হওয়ায়, তাকে দূর্গাপুজো আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগারে কাটাতে হয়েছে। শনিবার তাকে আবার আসানসোল জেলা আদালতে সিজিএমের এজলাসে তোলা হয়। এদিনও দু’পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব শেষে আসানসোল জেলা আদালতের সিজিএম তরুণ কান্তি মন্ডল রাজু সাহানির জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন । আগামী ২৯ অক্টোবর এই মামলায় পরবর্তী শুনানি হবে বলে সিজিএম নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে, দূর্গাপুজোর পরে এবার কালিপুজোও আসানসোল জেলে কাটাতে হবে হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যানকে।
এদিন রাজু সাহানির হয়ে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় সহ একাধিক আইনজীবী তার জামিনের জন্য জোর সওয়াল করেন। তারা যেকোন শর্তে রাজুকে জামিন দেওয়ার আবেদন করেন।
অন্যদিকে, সিবিআইয়ের আইনজীবী শীবেন্দ্র সাচান জবাবে রাজু সাহানিকে প্রভাবশালী বলার পাশাপাশি বলেন, তিনি এই চিটফান্ড থেকে সুবিধা ভোগ করেছেন। আরো তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি সরাসরি এদিনও জামিনের বিরোধীতা করেন।
প্রসঙ্গতঃ, গত ৩ সেপ্টেম্বর বর্ধমান সন্মার্গ চিটফান্ড মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করে রাজু সাহানিকে। তাকে ৫ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছিলো এই মামলায় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সেই মেয়াদ শেষে গত ৮ সেপ্টেম্বর তাকে আসানসোল জেলা আদালতে পেশ করেছিলো সিবিআই। সেদিন রাজু সাহানির জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন এসিজেএম। সেই মতো গত ২২ সেপ্টেম্বর আসানসোল জেল থেকে তাকে এসিজেএমের এজলাসে তোলা হয়েছিলো। আগের দিনের মতো এদিনও সিবিআইয়ের তরফে তাকে আবার হেফাজতে নেওয়া বা জেলে গিয়ে জেরা করার জন্য কোন আবেদন করা হয়নি।
এদিন রাজু সাহানি এই চিটফান্ড সংস্থার সঙ্গে জড়িত যে রয়েছেন, তার তথ্য সিবিআইয়ের আইনজীবী শীবেন্দ্র সাচান আবারও বিচারকের সামলে তুলে ধরেন । তিনি আরো বলেন, এই মামলার এখনো তদন্ত চলছে। বিদেশেও তার কানেকশনও পাওয়া গেছে। তিনি খুবই প্রভাবশালী। এখন তাকে জামিন দেওয়া হলে, তদন্তে সমস্যা হবে। তাই তাকে জামিন না দেওয়া হোক।
প্রসঙ্গতঃ, এর আগের দিনই রাজু সাহানি এই চিটফান্ড সংস্থা থেকে যে ” বেনিফিট ” পেয়েছেন ও সুবিধা ভোগ করেছেন, তার কথা সিবিআইয়ের আইনজীবী বিচারকের সামনে রেখেছিলেন । ৯৫ লক্ষ টাকা সংস্থা থেকে তার একাউন্টে গেছে। তারমধ্যে ৭৮ লক্ষ টাকা ফেরত হয়েছে। আগের দিন সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়েছিলো রাজু’র থাইল্যান্ডে ব্যাঙ্ক একাউন্ট আছে। এছাড়াও বলা হয়েছিলে তার থাইল্যান্ড, হংকং ও ব্যাঙ্ককে তিনটি কোম্পানি ছিলো। রাজু তার ডিরেক্টর। চিটফান্ড সংস্থার সঙ্গে এই সংস্থাগুলোর কোন কিছু যোগসাজশ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ইন্টারপোলকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্তে দেখা, ফেরার থাকা এই চিটাফান্ড সংস্থার চেয়ারম্যান সৌম্যরুপ ভৌমিকের অনেক কিছু রাজুর ঠিকানায় ছিলো। তার প্রমাণ আছে।
যদিও, হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যানের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় সহ অন্য আইনজীবীরা সিবিআইয়ের আইনজীবীর দাবি মানতে চাননি। তারা বলেন, তিনি একটা পুরসভার চেয়ারম্যান। তার একটা সম্মান ও ইমেজ আছে। তাই যে কোন শর্তে আমাদের মক্কেলকে জামিন দেওয়া হোক। কিন্তু সিজিএম শেষ পর্যন্ত রাজু সহানির জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।