ASANSOL

সিআইডির জালে এক ইস্কো ও এক পোস্ট অফিস কর্মী

আসানসোল জেলা আদালতে কর্মী নিয়োগের পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ* আসানসোল জেলা আদালতে কর্মী নিয়োগের পরীক্ষায় জালিয়াতিতে সাহায্য করার চক্রের একের পর এক পান্ডার খোঁজ পাচ্ছে রাজ্য পুলিশের সিআইডি। এবার আসানসোল দক্ষিণ থানার মামলায় আরো দুজনকে গ্রেফতার করলো সিআইডি। তারা হলো সেল বা ইস্কো কর্মী পিন্টু সরকার ও ডাক বিভাগ বা পোষ্ট অফিস কর্মী বৃন্দাবন বাগচি। এরা নদীয়ার বাসিন্দা বলে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে। ধৃতদেরকে আসানসোল জেলা আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তুলে সিআইডি তদন্তের জন্য হেফাজতে চায়। বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে ৬ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন বলে জানান সরকারি আইনজীবী মনোজ কুমার সিং।
এর আগে সিআইডি গত ২৪ নভেম্বর এই মামলায় জালিয়াতি চক্রের অন্যতম মাথা হিসাবে কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের কর্মী সুজিত রায় ও রেল কর্মী শুভঙ্কর সমাজপতিকে গ্রেফতার করেছিলো। সিআইডি এই মামলায় আরো জিজ্ঞাসাবাদ জন্য আসানসোল আদালত থেকে এই দুজনকে ১২ দিনের হেফাজতে পেয়েছিলো। সেই হেফাজত শেষে বুধবার ঐ দুজনকে আসানসোল আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী অর্নব পাঁজা।


শুভঙ্কর সমাজপতি রেলের মালদা ডিভিশনের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী ও সুজিত রায় কলকাতা পুলিশে রিজার্ভ ফোর্সে কর্মরত রয়েছেন। তার মধ্যে প্রথম জনের বিরুদ্ধে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে উত্তরপত্র পাঠানো ও দ্বিতীয় জনের বিরুদ্ধে মোবাইলে বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করে উত্তরপত্র দেওয়ার কথা অভিযোগে বলা হয়েছে। এদের দুজনকে জেরা করে সিআইডি পিন্টু সরকার ও বৃন্দাবন বাগচির খোঁজ পায়।


রাজ্য সরকারের একটি কর্মী নিয়োগের পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রে একের পর থেকে সরকারি কর্মীদের জড়িত থাকার খবরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
এখনো পর্যন্ত যে সরকারি কর্মীরা গ্রেফতার হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলেন বনগাঁ এলাকার বাগদার পোষ্ট মাস্টার শুভঙ্কর মোদক। তার কাজ ছিলো পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়েই তাড়াতাড়ি তার উত্তর তৈরী করে চক্রের অন্য পান্ডাদের দেওয়া। পরে হাত ঘুরে মোবাইলের মাধ্যমে, তা চলে যেতো হলে বসা পরীক্ষার্থীদের কাছে।
প্রসঙ্গতঃ, আসানসোল জেলা আদালতের স্টাফ সিলেকশন অফ এক্সজামিনেশন অফ পশ্চিম বর্ধমান ২০১৯ র মাধ্যমে ই স্টেনো ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী নিয়োগ করার কথা ছিলো। তার জন্য একটি পরীক্ষা হয়েছিল ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। সেই পরীক্ষার সময় একটি প্রতারণার চক্র ভুয়ো সিমের মাধ্যমে তিন লক্ষ টাকার বিনিময় পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র তাদের মোবাইলে মাধ্যমে বা বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করে পৌঁছে দেয় বলে অভিযোগ। আবার কোন কোন পরীক্ষার্থীকে তাদের ফোনে এসএমএসে উত্তরপত্র পাঠানো হয় ।


আসানসোল শহর সহ শিল্পাঞ্চলের একাধিক স্কুলে পরীক্ষার্থীদের থেকে একাধিক মোবাইল, ভ্যানিশিং কালি, ভুয়ো এ্যাডমিট কার্ড সহ একাধিক সামগ্রী পুলিশ উদ্ধার করে। এইসব নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কারণে আটটি মামলায় ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতার হওয়া বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী ছিল নদীয়ার বাসিন্দা। প্রায় সাত সপ্তাহ পরে এরা সকলেই আদালত থেকে জামিন পায়।
এরপর কলকাতা হাইকোর্টে এক প্রার্থী এই নিয়ে মামলা করেন। পরবর্তী কালে গুরুত্ব বুঝে কলকাতা হাইকোর্ট সেই মামলার তদন্তের দায়িত্বভার রাজ্য পুলিশের সিআইডির হাতে তুলে দেয়। সিআইডি তদন্তে নেমে প্রথমেই নদীয়ার জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে। যারা এই প্রতারণা চক্রের অন্যতম নায়ক। কিভাবে তারা চক্র চালাতো সেটাও সিআইডি তাদের হেফাজতে নিয়ে জানতে পারে। সেই তিনজনের মধ্যে অন্যতম নদীয়ার তেহট্টের অতনু ভক্ত। অন্য দুজন হল নদীয়ার হাঁসখালির প্রসেনজিৎ মন্ডল ও ধানতলার নিহার বিশ্বাস। এরপরেই শুরু হয় চক্রের পর্দা ফাঁস। এখনো পুলিশের করা তিনটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ৪০ জনকে। সিআইডির দাবি, এই চক্রে আরো কয়েকজন আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *