ASANSOL

চৈতালি তেওয়ারিকে জেরা করতে চায় পুলিশ, নোটিশ লাগানো হলো আবাসনের দরজায়

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও দেব ভট্টাচার্যঃ আসানসোল কম্বল কান্ডে এবার আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারির স্ত্রী বিজেপি কাউন্সিল তথা বিরোধী দলনেত্রী চৈতালি তেওয়ারিকে জেরা করতে চায় আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। এই মর্মে সোমবার একটি নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশের তরফে। এদিন দুপুর একটা নাগাদ আসানসোল উত্তর থানার এক মহিলা পুলিশ অফিসার সহ জনা চারেক পুলিশ কর্মী আসানসোল জিটি রোডের গোধূলি মোড় সংলগ্ন ঘনশ্যাম এ্যাপার্টমেন্টে আসে। তারা সেখানকার কেয়ারটেকারের কাছ থেকে জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও চৈতালি তেওয়ারি এই এ্যাপার্টমেন্টের কোন ইউনিটের, কত তলার আবাসনে থাকেন তা জানতে চান। কেয়ারটেকার তা বলায় পুলিশ কর্মীরা সেখানে যান। কিন্তু আবাসনের কোলাপ্সেবেল গেটে তালা লাগানো ছিলো। বেশ কিছুক্ষুন ডাকাডাকির পরে সাড়া না পেয়ে পুলিশ কর্মীরা আবাসনের দরজায় সেই নোটিশ লাগিয়ে চলে যান। তারা এ্যাপার্টমেন্টে ২০ মিনিটের মতো ছিলেন বলে কেয়ারটেকার জানান। তিনি বলেন, পুলিশ কর্মীরা বিশেষ কিছু আমার কাছে জানতে চাননি বা বলেননি। শুধু জানতে চান জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও চৈতালি তেওয়ারি কোথায় থাকেন।


যে নোটিশ লাগানো হয়েছে তাতে এই মামলার তদন্তকারী অফিসার বা আইও হিসাবে আসানসোল উত্তর থানার এসআই সুভাষ বন্দোপাধ্যায়ের নাম ও সই আছে। তাতে মামলা নম্বরের ( আসানসোল উত্তর থানা/ কেস নং ৫৫৭ /২০২২, তারিখ ১৫/১২/২০২২, ইউসি ৩০৪(২) /৩০৮/৩৪ আইপিসি) পাশাপাশি আজ মঙ্গলবার ২০ ডিসেম্বর সকাল দশটার সময় চৈতালি তেওয়ারিকে আবাসনে থাকতে বলা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী অফিসার তাকে গত ১৪ ডিসেম্বর বুধবার আসানসোলের রামকৃষ্ণ ডাঙালে শিব চর্চা ও মেগা কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে ঘটনা নিয়ে হওয়া মামলার তদন্তে জেরা করবে। একইসঙ্গে তাকে ঐ অনুষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য নিয়ে থাকতে বলা হয়েছে।


এদিকে এই নোটিশ দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, রবিবার সকালে এই কান্ড নিয়ে নিজের আবাসনে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে জিতেন্দ্র তেওয়ারি স্ত্রীকে কলকাতার উদ্দেশ্য রওয়া দেন। তখন তিনি বলেছিলেন, যাদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে বা অভিযোগ হয়েছে, তাদের পাশে থাকতে ও আইনি সহায়তা দিতে যাচ্ছি।
এদিন দুপুরে আবাসনে পুলিশের নোটিশ লাগানো নিয়ে জিতেন্দ্র তেওয়ারির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ফোনে তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যম থেকেই এটা জানলাম। পুলিশ আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি বা নোটিশ নিয়ে কিছু বলেনি। যা করার তা আইনের পথেই করবো। আমার স্ত্রী ঘটনার পাশাপাশি মৃত ও আহতদের নিয়ে খুবই চিন্তিত। তিনি আরো বলেন, সেদিন কি হয়েছে ও আর তাতে কার কি ভূমিকা ছিলো, তা সবার জানা। আসল কথা হলো, তৃণমূল কংগ্রেস আমাদের সঙ্গে পেরে উঠতে না পেরে পুলিশকে কাজে লাগিয়ে প্রতিহিংসামুলক আচরণ করছে।


জিতেন্দ্র তেওয়ারির এই অভিযোগ নিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃনমুল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু। তিনি বলেন, বিজেপির মতো আমরা কেন্দ্রীয় এজেন্সি নিয়ে রাজনীতি করিনা। সেদিন বিজেপির নেতারা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করেছে। যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ সেইমতো মামলা করে তদন্তে নেমেছে।
প্রসঙ্গতঃ, গত বুধবার বিকেলে আসানসোল পুরনিগমের ২৭ নং ওয়ার্ডে রেলপারের রামকৃষ্ণ ডাঙাল এলাকায় শিব চর্চার পাশাপাশি মেগা কম্বল বিতরণের অনুষ্ঠান হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপির রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব। শুভেন্দু অধিকারী অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই সেখানে কম্বল নেওয়া নিয়ে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তখন পদপিষ্ট হয়ে এক স্কুল পড়ুয়া নাবালিকা সহ তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হয় আরো ৬ জন। পরের দিন মৃত বৃদ্ধা ঝালি দেবী বাউরির ছেলে সুখেন বাউরির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ একটি এফআইআর করে। তাতে জিতেন্দ্র তেওয়ারি, চৈতালি তেওয়ারি, দুই বিজেপি কাউন্সিলর গৌরব গুপ্ত ও অমিত তুলসিয়ান সহ নির্দিষ্ট করে ১০ জন ও অঞ্জাত পরিচয়দের নাম রয়েছে। সেদিনই পুলিশ এফআইআরে নাম থাকা তিনজন সহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তারা ৮ দিনের পুলিশ হেফাজতে আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *