পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে চর্যাপদের মদনকান্ড
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত* : পরিপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে নাটক মঞ্চস্থ হওয়া একটা আলাদা মাত্রা এনে দেয় এটা বলাই বাহুল্য। এমনই কাজ করে দেখালেন আসানসোলের নাট্যগোষ্ঠী তথা সাংস্কৃতিক সংস্থা “চর্যাপদ” – র কলাকুশলীরা। টানা এক ঘন্টা কুড়ি মিনিট, দর্শকদের পলক ফেলার অবকাশ ছিলনা। নাটকের নানা দিক নিয়ে লেখবার আগে বলে রাখা ভাল মঞ্চের পিছনের মাইক্রোফোনের সামনে সমস্যা কে বাদ দিলে নাটক দর্শকদের মন জয় করে নেয়। আসানসোলের রবীন্দ্র ভবন প্রেক্ষাগৃহে গত ২৩ শে ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হয় নাটক “মদন কান্ড”।
মনোজ মিত্র রচিত দুটি নাটককে আশ্রয় করে নির্মান হযেছে আসানসোল চর্যাপদের নবতম প্রযোজনা ‘মদন কান্ড’। নাটকের শুরু হয় এক অদ্ভুৎ পদ্ধতিকে আশ্রয় করে, যা শুরুতেই চমকিত করে উপস্থিত দর্শকমণ্ডলিকে। সঙ্গে সঙ্গেই করতালি মুখরিত হয়ে ওঠে প্রেক্ষাগৃহ। সেটাই শুরু। তারপর ক্রমাগত তালি ও হাসির রোল ওঠার উপক্রম। কিন্তু অর্ধেক সময় অতিবাহিত হতেই শুরু উলটপুরান।
একটি আদ্যোপান্ত সিরিয়াস নাটক হযে ওঠে সেটি।
নাটকে রেডিও নিয়ে ঢোকা চরিত্রটি পরিচালকের সংযোজন। সেই চরিত্রের যখনই উদ্ভব হয় তখনই যেন এক একটা এপিসোডের সমাপ্তি ঘোষনা। এই চরিত্রে বিশ্বজিৎ দত্ত দারুণ অভিনয় করেন। এবার মদন চরিত্র প্রসঙ্গে আসা যাক। এই চরিত্রের অভিনেতা রুদ্র প্রসাদ চক্রবর্তী অর্থাৎ এই নাটকের পরিচালক অনেকগুলি চরিত্রকে মঞ্চস্থ করেন৷ মহিলা চরিত্রে তার অভিনয় অনবদ্য। মদন চরিত্র যত এগিয়েছে তত চরিত্র গভীরতা খুঁজে পায়। অনবদ্য অভিনয় গুনে দাপটের সাথে সম্পন্ন হয় শেষ পর্যন্ত।
অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন, ঐশী কর, ঐন্দ্রিলা তালুকদার, রাজেশ পাত্র, দেবাঞ্জলি দত্ত, বিশ্বরূপ চক্রবর্তী, অনুষ্কা দে, অনুরাধা সরকার, শঙ্খ চ্যাটার্জি প্রমুখরা।
আলোর খেলা হল নাটকের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আলোক প্রক্ষেপণে শুভদীপ চৌধুরীর, ভাষ্যে সায়ন্তী চ্যাটার্জি,
মেকআপ ও পোষাক সহায়তা- প্রিয়াঙ্কা দে,
মঞ্চে বৃহতাকার পটচিত্র আঁকেন পার্থ সারথী কর, ঐন্দ্রিলা তালুকদার। প্রযোজনা সহায়তা কৌশিক মন্ডল, সোমনাথ দে, পল্লব গোস্বামী, ইন্দ্রদীপ কোনার, সোমা কর, কৃষ্ণা দত্ত।
ব্যাবহার হয়েছে স্বর্ণযুগের গান বা তার প্যারোডি। গানের কথা- রুদ্র প্রসাদ চক্রবর্তী, শঙ্খ চ্যাটার্জী, মুকুল দত্ত প্রমুখ। সুর দিয়েছেন লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল, ও.পি.নাইআর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখরা।
কন্ঠ- বিপিন রায়, রাজেশ পাত্র, ঐশী কর, ঐন্দ্রিলা তালুকদার, রৌনক প্রমুখ। ব্যাবহার হয়েছে নানা গানের রেকর্ড।
পরিসমাপ্তিতে বলতে গেলে , এক অনবদ্য প্রযোজনার সাক্ষী থাকলো আসানসোলের দর্শকেরা। নাচে গানে অভিনয়ে, আনন্দে কান্নায় একটি কমপ্লিট থিয়েটার দেখতে পেলেন তারা। আসানসোল “চর্যাপদ” নাট্য জগতে তাদের শৈল্পিক ভাবনাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে যে প্রয়াস করে চলেছে তা শিল্পাঞ্চল তথা রাজ্যের সাংস্কৃতিক পরিবেশকে আরো পরিপাটি করে গড়ে তুলবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।