ASANSOL

পাথর দিয়ে মাথায় মেরে নাবালককে খুনের চেষ্টায় দোষী সাব্যস্ত, ১০ বছরের কারাদণ্ড যুবকের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ রেশন দোকান থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খেজুর রস খাইয়ে অচৈতন্য করে মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে এক নাবালককে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ছিলো। শেষ পর্যন্ত সেই মামলায় শুক্রবার দোষী সাব্যস্ত যুবকের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হলো। সাজাপ্রাপ্ত যুবকের নাম মেহেতাব আলম ওরফে ছটু। তার বাড়ি আসানসোল উত্তর থানার রেলপার এলাকায়। শুক্রবার আসানসোল জেলা আদালতের এডিজে (২) বা অতিরিক্ত জেলা জজ ( দ্বিতীয়) শরণ্যা সেন প্রসাদ এই সাজা ঘোষণা করেন।


এই মামলার সরকারি আইনজীবী বা পিপি তাপস উকিল এদিন বলেন, বুধবার বিচারক ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই মামলায় গত বুধবার ভারতীয় দন্ডবিধির ৩২৬ নং ধারায় অভিযুক্ত যুবককে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। পুলিশ অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির আরো দুটি ধারা ( ৩০৭ ও ৩৬৪) মামলায় দিয়েছিলো। কিন্তু সেদুটি শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। এদিন বিচারক ১০ বছরের সাজা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ২ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার কথা বিচারক রায়ে বলেছেন। সেই জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছর সাজা অতিরিক্ত ভোগ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এই মামলায় চারজন চিকিৎসক সহ মোট ১৩ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য দান করেছেন। সাজাপ্রাপ্ত যুবকের জামিন তার গ্রেফতার হওয়ার পরে হয়নি। সে আসানসোল জেলেই আছে। সেই হিসাবে এটি কাস্টডি ট্রায়াল।


পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের ওকে রোডের বাসিন্দা ১৩ বছরের তৌসিফ আলম ২০১৬ সালের ৮ মে সকালে বাড়ির অদূরে রেশন দোকানে যায়। তার সঙ্গে একটি সাইকেল ছাড়াও ১২টি রেশন কার্ড ও ৫০ টাকা ছিলো। দোকানে ভিড় থাকায় সে লাইনে দাঁড়িয়েছিলো। সেই সময় ঐ এলাকারই বাসিন্দা বছর ৩৫ এর যুবক মেহেতাব আলম ওরফে ছটু তার কাছে আসে। তাকে সে বলে, দোকানে ভিড় আছে, চল আমরা ঘুরে আসি। এরপর ছটু তৌসিফকে ভুলিয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে ২ নং জাতীয় সড়ক লাগোয়া জামুড়িয়ার চাঁদার কাছে গুঞ্জন পার্কে নিয়ে যায়। সেখানে তৌসিফকে খেজুররস বা তাড়ি খাওয়ায়। তাতে সে অচৈতন্য হয়ে যায়। তখন ছটু তৌসিফকে বড় পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এরপর সে সেখান থেকে চলে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তৌসিফ সেখানে পড়েছিলো বেশ কয়েক ঘন্টা। পরে বৃষ্টি আসে। সেই বৃষ্টির জলে তৌসিফের সামান্য ঞ্জান ফিরে আসায়, সে কোনমতে পার্ক থেকে বেরোয়। রাস্তা পার হয়ে সে হাঁটতে হাঁটতে চাঁদায় জনৈক সমীর দত্ত নামে একজনকে বাড়ির সামনে এসে জল চেয়ে দরজায় ধাক্কা দেয়। কিন্তু ঐ ব্যক্তি দরজা খোলার আগেই তৌসিফ আবার অচৈতন্য হয়ে যায়। সমীরবাবু তাকে হতচকিত হয়ে যান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে জামুড়িয়া থানার শ্রীপুর ফাঁড়িতে খবর দিলো পুলিশ আসে। সেদিন রাত নটা পুলিশ অঞ্জাত পরিচয় হিসাবে তৌসিফকে জখম অবস্থায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। এর প্রায় ২৪ ঘন্টা পরে ৯ মে রাতে এক নাবালক জখম অবস্থায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে, খবর পেয়ে তৌসিফের বাড়ির লোকেরা সেখানে আসেন। তখন তৌসিফ কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলোনা।

তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় বাড়ির লোকেরা তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে দূর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেদিনই তৌসিফের বাবা মহঃ মুস্তাক গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে ৫/৬ জনের নামে সন্দেহবশতঃ আসানসোল উত্তর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৭, ৩২৬ ও ৩৬৪ ধারায় মামলা করে। পুলিশকে তাদেরকে গ্রেফতারও করে। এদিকে, দিন আটেক পরে চিকিৎসায় তৌসিফ কিছুটা সুস্থ হলে সে চিকিৎসককে জবানবন্দি দেয়। তখনই ছটু ওরফে মেহেতাব আলমের কীর্তি প্রকাশ্যে আসে। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আগে যাদেরকে সন্দেহবশতঃ গ্রেফতার করা হয়েছিলো, তারা খালাস পায়।
তবে কেন তৌসিফকে বাড়ি থেকে অতদূরে নিয়ে গিয়ে ছটু তাকে মারার চেষ্টা করেছিলো, তা পুলিশ জানতে পারেনি। বারবার জেরাতেও সে পুলিশকে তা জানায়নি। তবে অনুমান কোন আক্রোশ থেকেই ছটু এটা করেছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *