ASANSOL

কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রারকে ” ডিসচার্জ ” করা নিয়ে অচলাবস্থা, পদত্যাগ দাবি করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ ( Asansol News Today In Bengali ) কাজ ” সন্তোষজনক ” না হওয়ায় মঙ্গলবার আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ( Kazi Nazrul University ) রেজিস্ট্রার ডঃ চন্দন কোনারকে চাকরি থেকে ” ডিসচার্জ ” বা সরিয়ে দিলেন ভাইস চ্যান্সেলার বা উপাচার্য ডঃ সাধন চক্রবর্তী। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এদিন সকাল থেকে সরগরম রইলো বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। উপাচার্যের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সরব হন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ অধ্যাপক, অধ্যাপিকা ও কর্মীরা। তারা রেজিস্ট্রারকে সরানোর বিরোধিতা করে, নির্দেশ প্রত্যাহার ও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধর্ণা বিক্ষোভে বসে পড়েন। আর এর ফলে কার্যত এদিন অচলাবস্থা তৈরি হয় কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। অধ্যাপক ও অধ্যাপিকারা ক্লাস না নিয়ে দিনভর আন্দোলন করেন। একমাত্র পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।


এদিকে, অভিযোগ দুপুরের পরে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেম্বারে তালা লাগিয়ে সেই চাবি রেখে দেন রেজিস্ট্রারের অফিসে। পাশাপাশি এও অভিযোগ করা হচ্ছে , আন্দোলনকারীদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট অফিসার ইনচার্জ এস্টেট অফিসার মহেশ্বর মালো দাস। যদিও আন্দোলনকারীরা তা অস্বীকার করেছেন। এদিন বিকেল চারটে নাগাদ উপাচার্য ও কয়েকজন কর্মী তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসক তার শারীরিক অবস্থার কথা ঠিক না থাকায় অন্য হাসপাতালে রেফার করেন। শেষ খবর, তাকে কলকাতায় কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


মঙ্গলবার সকালে এই গন্ডগোলের সূত্রপাত রেজিস্ট্রার ডঃ চন্দন কোনারকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে। এদিন সকালে কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডে উপাচার্য রেজিস্ট্রারকে একটি মেল করেন। তাতে বলা হয়, তার কাজ “সন্তোষজনক” নয়। তাই তাকে চাকরি থেকে ডিসচার্জ করা হচ্ছে। তারপরও অন্যদিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন রেজিস্ট্রার। তখন তাকে গেটে নিরাপত্তা রক্ষী আটকে দেন। বলা হয়, তার ঢোকায় নিষেধ আছে। এরপর তিনি বিশ্বিবদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট অফিসার ইনচার্জ এস্টেট অফিসার মহেশ্বর মালো দাসকে ফোন করেন। তিনি তাকে বলেন, হায়ার অথরিটির মানা আছে। এরপর রেজিস্ট্রার গেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের ফোন। সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন সেখানে আসেন ও তাকে জোর করে ভেতরে নিয়ে যান।


এইভাবে রেজিস্ট্রারকে চাকরি থেকে সরানো নিয়ে সরব হন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ অধ্যাপক ও কর্মীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই শ্লোগান দিতে থাকেন। তারা বলেন, আমরা জানিনা উপাচার্যের বর্তমান স্ট্যাটাস কি? তিনি কি ভাবে একজন রেজিস্ট্রারকে সরাতে পারেন? সেই ক্ষমতা আছে ইসি বা এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের? তারা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি ডেভেলপমেন্ট অফিসার বা ইনচার্জ এস্টেট অফিসার আছেন, তিনিও নিয়ম বহির্ভূত কাজ করছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসকে নিজের বাড়ি করে রেখেছেন। যা তিনি পারেন না। তাকেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার দাবি করছি। পাশাপাশি আমরা উপাচার্যের পদত্যাগ চাই। যতক্ষণ না এইসব দাবি মানা হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে। জানা গেছে, এই রেজিস্ট্রার গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।


এদিন রেজিস্ট্রার বলেন, আমি দূর্নীতি ধরে ফেলেছি। তাই আমাকে সরানো হয়েছে। আমি উপাচার্যের কথা মতো চলছি না, তাই আমার সঙ্গে এইসব করা হচ্ছে। উপাচার্য এমন কিছু কাজ করছেন, তা তিনি পদাধিকারবলে করতে পারেননা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফান্ড থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বাংলো ও গাড়ির টাকা নিয়েছেন। যা তিনি পাননা। আমি সরকারের গোচরে এইসব কিছু এনেছি। সরকারি আধিকারিকদের কথা মতো কাজ করছি।


যদিও, তার বিরুদ্ধে উঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন উপাচার্য ডঃ সাধন চক্রবর্তী। তিনি এদিন বিকেলে বলেন, আমি ই-হাজিরা চালু করার কথা বলায় সমালোচনার মুখে পড়েছি। ১০ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের দিন অনেকে আসেননি। তার রিপোর্ট আমি রেজিস্ট্রারের কাছে চেয়েছিলাম। তা তিনি এখনো দেননি। উপাচার্য বলেন, আর আমার বাংলো ও গাড়ির টাকা নিয়ম মেনে চাওয়া হয়েছে। এইসব কিছু সরকারি সম্পত্তি। রেজিস্ট্রারের কাজ “সন্তোষ জনক” নয়। তাই নিয়ম মেনে তাকে ডিসচার্জ করা হয়েছে।
জানা গেছে , এদিনের সব ঘটনা উপাচার্য রাজ্য সরকারকে জানাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *