ASANSOL

আসানসোল দূর্গাপুর জুড়ে অবাধে চলছে সরকারি খাসজমি দখল, অভিযোগ আসতেই টনক নড়লো জেলা প্রশাসনের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শিল্পাঞ্চল জুড়ে সরকারি খাস জমি লুটের একাধিক অভিযোগ উঠছে। শুধু তাই নয় যারা নানা ভাবে জমি বিক্রির জন্য প্লটিং করছে, তাদের মধ্যে অন্ততঃ ৪৪ টি সংস্থা আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডা ও আসানসোল পুরনিগম থেকে এনওসি বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নেয়নি। এর ফলে কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে যারা এইসব জমি কিনে বাড়ি করছেন তারাও ভবিষ্যতেও সমস্যায় পড়বেন।
এদিকে, সরকারি জমি লুঠের অভিযোগ উঠে আসায়, কোথাও জেলাশাসকের নির্দেশে কোথাও বা উচ্চ আদালতের নির্দেশে এখন তৎপর রাজ্য সরকারের ভূমি ও ভুমি রাজস্ব দপ্তর। যেখানেই খাস জমি চোখে পড়ছে সেখানেই ভূমি রাজস্ব দপ্তরের পক্ষ থেকে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভেস্টেড ল্যান্ড বা সরকারি জমির প্ল্যাকার্ড। শুধু তাই নয় ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে কুলটি থেকে আসানসোলের দিকে যাবার পথে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিন একরের বেশি দখল করা সরকারি জমির পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।


(আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আইনের হাত অনেক লম্বা। যারা ভাবছেন অন্যায় করে পার পেয়ে যাবেন তা সম্ভব নয়। ১০ বছর পর হলেও ধরা পড়বে। যারা অসাধু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল তারাই এখন জমি দখলের ব্যবসায় মত্ত। কারণ ভাবছেন যেমন তেমন ভাবে জমি দখল করা বোধ হয় খুব সহজ। আর মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তা বিক্রি করে দিচ্ছেন। এসব চলবে না। তিনি আরো বলেন, আড্ডা আসানসোলের ২৫ টি ও দুর্গাপুরের ১৯টি মোট ৪৪ টি সংস্থাকে এনওসি না নিয়ে এই ধরনের কাজের জন্য নোটিশ দিয়েছিল। তাদের মধ্যে দুর্গাপুরের ৫ টি সংস্থা ইতিমধ্যেই সরকারের যা কিছু নিয়ম আছে তা মেনে কাজ করার জন্য আবেদন জানিয়েছে। অপরদিকে বাকিদের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের পুর নগরোন্নয়ন দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে আইন মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমে তাদের ভেঙে দিতে বলতে হবে। তা নাহলে আড্ডা ব্যবস্থা নেবে।


আসানসোল পুরনিগমের চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এখানে অনেক জমি পুরোনো যাদের কিছু কিছু জমির কাগজও নেই। আবার প্রয়োজনে কিছু জমির কাগজ ছিঁড়ে ফেলাও হয়েছে। তাই জনগণের কাছে অনুরোধ জমি কেনা বেচার আগে সবকিছু দেখে নিন। দরকার হলে উকিল দিয়ে কাগজ সার্চ করিয়ে নিন। আসানসোলে কাগজ না থাকলে বর্ধমানে যান। তার সঙ্গে তিনি প্রমোটারের উদ্যেশ্যে বলেন, ভালো করে কাগজ দেখে কাজ করুন। সাধারণ মানুষ যাতে প্রতারিত না হয় এবং সরকারের রাজস্ব যাতে বঞ্চিত না হয় সেটা দেখতেই হবে।
যদিও বিরোধী দলেরা এই বিষয়ে শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসকে আক্রমন করেছে।


বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, সরকারি জমি দখল হয় কি করে ? এর পেছনে শাসক দলের হাত থাকতেই হবে। আমরা বহুবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এ নিয়ে আন্দোলনে নামবেন তারা বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসনের উচিত সরকারের সব জমি যেসব কারখানা বা প্রোমোটার দখল করেছে বা প্লটিং হচ্ছে সেগুলো উদ্ধার করা।
কংগ্রেসের রাজ্য নেতা প্রসেনজিৎ পৈইতুন্ডিও একই দাবি তুলেছেন।
এদিকে, আসানসোলের (সদর) মহকুমাশাসক অভিজ্ঞান পাঁজা জানান, ইতিমধ্যেই তারা তিন একরের কিছু বেশি সরকারি খাস জমি উদ্ধার করেছেন। একটি পুকুর ভরাট হওয়ার অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। সেটাও ভূমি রাজস্ব দপ্তর দেখছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *