ASANSOL

আসানসোলের ব্যবসায়ী প্রতারণার শিকার একাউন্ট থেকে উধাও ১২ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ ( Asansol News Today ) কোন এ্যাপস্ ডাউনলোড করা হয় নি। খোলা হয় নি কোন মেল। করা হয়নি কোন লিঙ্ককে ক্লিক। দেওয়া হয় নি কাউকে কোন ওটিপি। তারপরেও আসানসোল শহরের এক ব্যবসায়ী সাইবার অপরাধীদের হাতে প্রতারণার শিকার হলেন। অভিনব উপায়ে প্রতারিত হলেন ঐ ব্যবসায়ী। আসানসোল দক্ষিণ থানার জিটি রোডের পুরনো রামকৃষ্ণ মিশন মোড়ে সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ল্যুব্রিকেন্ট ওয়েল ব্যবসায়ী রবীন্দ্র শর্মা নামে ঐ ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেলো ১২ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা। পাঁচদিন আগে গত ১৩ জুলাই এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার থানা সূত্রে জানা গেছে। তবে পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরে দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করায় ঐ ব্যবসায়ীর অসম ও কেরলের দুটি ব্যাঙ্কের একাউন্টে ৬ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকার সন্ধান পেয়েছে। এখানকার পুলিশ ঐ দুই রাজ্যের পুলিশের মাধ্যমে ঐ দুটি ব্যাঙ্কের একাউন্ট ” ফ্রীজ ” করে দিয়েছে। যাতে আর কোনভাবেই ঐ টাকার লেনদেন না হয়।


তবে, কোন কিছু ছাড়াই এইভাবেই প্রতারণার ঘটনা আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় প্রথম বলে জানা গেছে। মনে করা হচ্ছে, কোন প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সাইবার অপরাধীরা ঐ ব্যবসায়ীর গোটা ফোনটা ” হ্যাক ” করে নেয়। তারপরই ফোনের সিস্টেম ও তথ্য ব্যবহার করে তারা ঐ ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে প্রায় সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অনুমান। সেই কারণে এই ঘটনায় বেশ কিছুটা হলেও পুলিশ আধিকারিকরা হতচকিত ও চিন্তিত। গোটা বিষয়টি পুলিশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।


জানা গেছে, আসানসোল শহরের ব্যবসায়ী রবীন্দ্র শর্মা গত ১৩ জুলাই সকালে অন্যদিনের মতো ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার মোবাইল ফোনটি ” সুইচড অফ ” রয়েছে। যা দেখে তিনি চমকে যান। এরপর তিনি সুইচড অন করে ফোনটি চালু করেন। সঙ্গে সঙ্গে একটি ম্যাসেজ তার মোবাইলে ঢোকে। তাতে তিনি দেখেন ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে ১২ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ব্যবসায়ী পুলিশের কাছে দাবি করেন, তিনি কোন মেল খোলেননি। কোন ওটিপি আসেনি। কোন এ্যাপস্ ডাউনলোড বা লিঙ্ক ক্লিক করেননি। তবে তিনি বলেন, ১৩ জুলাইয়ের আগে তার মোবাইলে ” নেট ব্যাঙ্কিং, ” চালু করার জন্য ম্যাসেজ আসছিলো। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা বলেন ও জানান যে আমি নেট ব্যাঙ্কিং করিনা। ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ তাকে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ বা পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন। সেই মতো তিনি তা করেন। এরপরে ব্যবসায়ীর মোবাইল ফোনে টাওয়ারের সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। তারপরে এই ঘটনা।


গোটা বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তারা দেখে ব্যবসায়ীর টাকা ( দুভাগে ৭ লক্ষ ও ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার) ঝাড়খণ্ডের কোডারমার দুটি ব্যাঙ্কের একাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে প্রথমে। একটি একাউন্ট থেকে ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকার মধ্যে ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা অসমের একটি ব্যাঙ্কের একাউন্ট চলে গেছে। একইভাবে ৭ লক্ষ টাকার মধ্যে ৪ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা কেরলের একটি ব্যাঙ্ক একাউন্টে গেছে। আরো ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিহারের বিভিন্ন এটিএম থেকে একাধিকবারে তোলা হয়েছে। এরপর পুলিশ আরো সক্রিয় হয়ে অসম ও কেরল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেইসব রাজ্যের দুই ব্যাঙ্কের একাউন্ট দুটি ফ্রীজ করানোর ব্যবস্থা করে। ঐ দুটি ব্যাঙ্কের একাউন্টে সবমিলিয়ে ৬ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা ( ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার ও ১ লক্ষ ২০ হাজার) জমা আছে।
পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ঐ ব্যবসায়ী যাতে ৬ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা ফিরে পান তারজন্য আইনী প্রক্রিয়া চলছে। আর গোটা বিষয়টি কি করে ঘটলো, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই চক্র কতটা সক্রিয় রয়েছে কতদূর পর্যন্ত ছড়িয়েছে, তা গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *