ASANSOL

কাঠগড়ায় আসানসোল জেলা হাসপাতাল, জেলাশাসকের নির্দেশে তদন্ত শুরু, এইচআইভির ভুল রিপোর্ট, চরম হেনস্তার শিকার মহিলা ও তার পরিবার

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ এক মহিলার চারদিন আগে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ডিসচার্জ টিকিটে লিখে দেওয়া হলো এইচআইভি পজিটিভ। আর চার দিন পরে ঐ মহিলা বা তার স্বামীর জেলা হাসপাতালে রক্তের পরীক্ষা করে বলা হলো এইচআইভি নেগেটিভ। আর এই এইচআইভি পজেটিভ বলার কারণে শুধু আসানসোল জেলা হাসপাতাল নয়, কুলটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি ভর্তি হতে পারলেন না । আর এরজন্য ঐ মহিলা ও তার পরিবার সামাজিকভাবেও সমস্যায় পড়েছেন।
শেষ পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের রাঁচির রিমস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা করে তাকে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নেবার পরামর্শ দেয়। তারা জানিয়ে দেন, তার এইচআইভি পজিটিভ নয়। তার ঐ সংক্রান্ত কোন অসুস্থতা নেই বলে তারা দাবি করেছেন।



এমন একজন মহিলা রোগীর আসানসোল জেলা হাসপাতালে চরম হয়রানি ও মহিলার মায়ের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ,স্বাস্থ্য সচিব থেকে শুরু করে পশ্চিম বর্ধমানের জেলা শাসক ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচের কাছে। সেই চিঠির ভিত্তিতে জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ গোটা বিষয়টি নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে পাঠিয়ে তদন্ত করতে বলেন।


জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুস খান বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। পাশাপাশি জেলা শাসকের কাছ থেকে চিঠি পেয়ে তিন সদস্যের কমিটি তৈরি করে অবিলম্বে জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করতে বলেছি। দ্রুত আমার কাছে ঐ তদন্ত রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, পশ্চিম বর্ধমান জেলায় আসানসোলের সালানপুর ব্লকের জেমারি বাসিন্দা ২৬ বছরের এক মহিলা পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো হাসপাতালে গত ৯ জুলাই সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি হন। পরে তিনি সেখানে এক সন্তানের জন্ম দেন। ১১ জুলাই সদ্যোজাতকে নিয়ে তিনি সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরেন। এরপর গত ২৫ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে ঐ মহিলার আচমকা রক্তক্ষরণ হতে থাকে। রাত ন’টা নাগাদ তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে এমারজেন্সি বিভাগে তার মা নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে গাইনোকোলজি ওয়ার্ডে ভর্তি করার জন্য নির্দেশ দেন। অসুস্থ এই মহিলার সঙ্গে তখন তার প্রায় ৭ সপ্তাহে সদ্যোজাত শিশুও ছিলো ।


মহিলার ভাই অভিযোগে লেখেন, এরপর আমার বোনকে মা ঐ ওয়ার্ডে নিয়ে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে যান। সেখানে তার ভর্তি বা এ্যাডমিশন টিকিট দেখেই সংশ্লিষ্ট নার্স কড়া ভাষায় তাদের বলেন “বসতে বলছি, চুপ করে বস। বেশি ডিস্টার্ব করবে না। এদিক-ওদিক ঘুরবেনা। কাউকেই টাচ করতে হবে না। এই অবস্থায় বোন ও মা বুঝতে পারছিলেন না কেন তাদের সাথে এমন ব্যবহার করা হচ্ছে। তারপর তারা বাড়িতে খবর দিলে তাদের পরিবারের একজন পুরুষ সদস্য জেলা হাসপাতালে আসেন। তাকে বলা হয় নিজের ইচ্ছায় রোগী নিয়ে যাচ্ছি এটা লিখে রোগী নিয়ে চলে যাও। এরপর যখন ঐ রোগীকে তাদের হাতে জেলা হাসপাতালের যে সরকারি ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেন তাতে লেখা থাকে বড় করে ” এইচআইভি পজেটিভ “। মহিলার বাড়ির লোকেরা বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ডের নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু না বলেই চলে যেতে বলেন।


এরপর অসুস্থ মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় কুলটির এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে জেলা হাসপাতালের এই কাগজের এইচআইভি পজেটিভ দেখার পর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাকে আর ভর্তি করে চিকিৎসা করতে চাননি। এতে তারা যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় পড়েন। শেষ পর্যন্ত তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলে ২৭ আগস্ট ঐ যুবতীকে নিয়ে যাওয়া হয় ঝাড়খণ্ডের রাঁচির রিমস হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসক তার ইউএসজি সহ অন্যান্য চিকিৎসা করে তাকে ওষুধপত্র দিয়ে বলেন বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। ঐ হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এইচআইভি নিয়ে তাকে ভাবতে হবে না। কেননা এটা তার নেই।


রাঁচি থেকে ফিরেই ঐ পরিবার সিদ্ধান্ত নেন যে যুবতী ও স্বামীকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে আবার এইচআইভির পরীক্ষা করাবেন । সেই মতো ২৯ আগস্ট তারা জেলা হাসপাতালে পৌঁছান। এবং সেখানে তাদের সরকারিভাবে পরীক্ষা করে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই এইচআইভি নেগেটিভ বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
শুধুমাত্র একটা ভুল তথ্যর জন্য একজন সদ্যোজাত সন্তানের মাকে যেভাবে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতে হল চিকিৎসার জন্য যেতে হয়েছিল, এই গোটা ঘটনা তারা তদন্ত চেয়ে দোষী স্বাস্থ্য কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তার পরিবার। একই সঙ্গে তাদের যে সামাজিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তা নিয়েও তারা রীতিমতো দুশ্চিন্তায় আছেন।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুস খান মঙ্গলবার বলেন, সোমবারই এই বিষয় একটি অভিযোগ পেয়েছি। পাশাপাশি জেলাশাসকও তাকে অভিযোগ পাঠিয়ে তদন্তের কথা জানিয়েছেন। সেই মতো ৩ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, দোষী প্রমাণিত হলে কেউ ছাড় পাবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *