ASANSOL

প্যারিসে গ্লোবাল টিচার অ্যাওয়ার্ড সম্মান নিয়ে ফিরলেন রাস্তার মাস্টার দীপনারায়ণ নায়েক

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল: ( Rastar Master Deep Narayan Nayak ) প্যারিসের কাছে ইউনেস্কোর অ্যাসেম্বলি হল থেকে সারা পৃথিবীর সেরা দশ জনের মধ্যে একজন গ্লোবাল টিচার অ্যাওয়ার্ড সম্মান নিয়ে ফিরলেন দেশের হয়ে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার জামুড়িয়ার ননডি গ্রামের বাসিন্দা দীপনারায়ণ নায়েক। জামুরিয়ার জবা গ্রামের তিলকা মাঝি আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিনি শিক্ষক। এটা তার পেশাদারী পরিচয় হলেও আসলে লোকে তাকে রাস্তার মাদটার বলেই চেনেন। করোনার সময় তিনি প্রথম অনুভব করেছিলেন গরিব দুঃস্থ আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে এন্ড্রয়েড ফোন নেই। ফলে তাদের অনলাইনে পড়ানো স্বপ্নই থেকে যাবে । সেই কারণেই তিনি একেবারে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রথমে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে পড়ানো আরম্ভ করলেন ।শুধু ছাত্রছাত্রী নয় তিনি বুঝলেন খুব সহজেই তাদের বাবা মা বা অন্যান্য অভিভাবকদের ন্যূনতম শিক্ষা দিয়ে শিক্ষিত করা যেতে পারে। সেজন্য স্কুলের ভবন ও ব্ল্যাকবোর্ড এর।দরকার নেই।

তিনি প্রথমেই আদিবাসী পাড়াগুলিতে রাস্তার ধারে ধারে বাড়ির দেওয়ালে রং দিয়ে কালো ব্ল্যাকবোর্ড তৈরি করলেন। আর সেখানেই পড়ানো শুরু হল ।এই কাজ করতে করতে গত কয়েক বছরে তিনি আমাদের রাজ্য ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ডের একাধিক জেলায় এই কাজ করছেন ।পড়ানোর সাথে সাথে তার ক্ষমতা মত বইপত্র দেওয়া, খাতা পত্র কিনে দেওয়া, কখনো কখনো বিশেষ অনুষ্ঠানে তার বেতন থেকে তাদের জামা কাপড় দেওয়া এসবও হল ।এই পড়ানোর টেকনিক এবং পুরো ব্যবস্থাটাই পৌঁছে গেল ভারতের দুয়ার ছাড়িয়ে ইউনেস্কোর দরবারে ইউ কের ভারুকি ফাউন্ডেশন এবং দুবাই কেয়ারসের হাত ধরে। সারা পৃথিবীর গ্লোবাল টিচারের জন্য ১৩০ টি দেশ থেকে ১০ জনকে বেছে নেয়া হলো। এই ১০ জনের মধ্যে ভারতের ছিল দীপ নারায়ণ। এই ১০ জনকে গ্লোবাল টিচার এওয়ার্ড দেওয়া হলেও এদের মধ্যে প্রথম হিসেবে ১ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয় পাকিস্তানে শিক্ষিকা সিস্টার জেফকে (জেফ)।


দীপনারায়ণ বলেন স্বপ্নে কোনদিন ভাবিনি সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষিত করে তোলার কাজ করতে গিয়ে পৃথিবীর অন্যতম সেরা জায়গায় এভাবে সম্মানিত হব। আমার রাজ্য এবং দেশের জন্য গৌরভবোধ করেছি। আমাদের একটি করে মেডেল,স্মারক এবং শংসাপত্র দেয়া হয়েছে। দেশের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে ওই এসেম্বলি হলে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছি। এটাও গর্বের। আমার কাজ নিয়ে আড়াই মিনিটের ভিডিও দেখানো হয়েছে ওই অ্যাসেম্বলি হলে। ইউনেস্কোর সমস্ত এলাকাটি আমাদের ঘুরিয়ে দেখানো হয় এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির সহযোগিতার চিহ্ন স্বরূপ প্যারিস শহরটি আমাদের দেখানো হয়। তবে এই সম্মানের সাথে সাথে আমার এই ধরনের কাজের দায়িত্ব আরো বাড়লো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *