ইসিএল কর্মী বাবাকে চাকরির লোভে খুনের অভিযোগ, গ্রেফতার ছেলে
বেঙ্গল মিরর, অন্ডাল ( দূর্গাপুর) চরণ মুখার্জী ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ তিন মাস পরেই হবে বাবার হবে চাকরি থেকে অবসর। তারই মধ্যে বাবার কোনভাবে মৃত্যু হলে চাকরি পাওয়া যাবে। এই লোভেই বাবাকে খুন করার ছক কষে গুণধর কীর্তিমান ছেলে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সেই ছক ফাঁস হয়ে যায়। আর পুলিশের জালে ছেলে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার দূর্গাপুরের অন্ডাল থানার উখড়া ফাঁড়ির শ্যামসুন্দরের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার হওয়া ছেলের নাম আব্দুল হাকিম। খুন হওয়া ইসিএল কর্মীর নাম এতোয়ারি মিয়া।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি অন্ডালের শ্যামসুন্দরপুরের বছর ৫৯ এর ইসিএলের চনচনি কোলিয়ারির খনি কর্মী এতোয়াড়ি মিয়া কাজ থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। পরে তিনি বাড়ি থেকে বাজারে বেরোন। তারপর থেকেই আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না এতোয়াড়ি মিয়াকে। পরের দিন পরিবারের তরফে উখড়া ফাঁড়িতে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে একটি মিসিং ডায়েরিও করা হয়। তার ভিত্তিতে পুলিশ তার খোঁজ শুরু করে। দুদিন ধরে নিখোঁজ থাকার পরে ২২ জানুয়ারি শ্যামসুন্দরপুরের জঙ্গল থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয় এতোয়াড়ি মিয়ার দেহ। মৃতদেহ উদ্ধার করে তদন্তে নামে অন্ডাল থানার উখড়া ফাঁড়ির পুলিশ। ময়নাতদন্তের পরে পুলিশ জানতে পারে, ঐ খনি কর্মীকে খুন করা হয়েছে। প্রথমে তাকে গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করা হয়। তারপর তার মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়। সবশেষে গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। যাতে মনে হয় তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। এরপর তদন্ত শুরু করে অন্ডাল থানার উখড়া ফাঁড়ির পুলিশ। সেই তদন্তে জেরা করা হয় মৃত খনি কর্মীর পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু পুলিশের জেরায় ছেলে আব্দুল হাকিমের অসংলগ্নতা পাওয়া যায়। এরপর দীর্ঘ জেরার পরে পুলিশ গ্রেফতার করে আব্দুল হাকিমকে।
এরইমধ্যে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এতোাড়ি মিয়ার ছেলে আব্দুল হাকিম বাবাকে খুন করার ছক করছিল বহুদিন আগে থেকেই। তিন মাস পরেই চাকরি থেকে অবসর নেবেন এতোয়াড়ি মিয়া। সেইমতো শ্যামসুন্দরপুরের জঙ্গলে এতোয়াড়ি মিয়াকে শ্বাসরোধ করে খুন করে ছেলে আব্দুল হাকিম। যাতে চেনা না যায় সেজন্য ইঁট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় মুখও। এই ঘটনার পেছনে আরো কোন রহস্য রয়েছে কিনা, তা জানতে ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে আরো তদন্ত করতে চাইছে অন্ডালের উখড়া ফাঁড়ির পুলিশ।
পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, জেরায় নিজের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেছে খুন হওয়া খনি কর্মীর ছেলে। সে বাবার দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে এলাকায় আসে। সংবাদ মাধ্যমে কথাও বলে। সেই সময় তার মুখে ও কথাবার্তায় কোন সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায় নি।