স্বাস্থ্য সচিব ও জজের নামে ফোনে সুপারকে হুমকি, চিকিৎসা করানোর জন্য প্রতারণার অভিযোগ, গ্রেফতার দম্পতি
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব বা হেল্থ সেক্রেটারির নামে সুপারকে হুমকি ফোন। পাশাপাশি আসানসোল জেলা বা ডিস্ট্রিক্ট জজের ড্রাইভার কাম পিএ পরিচয় দিয়ে চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার হলো এক দম্পতি। বৃহস্পতিবারের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আসানসোল জেলা হাসপাতালে। একইসাথে আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপারের মতো গেজেটেড পদমর্যাদার এক অফিসারের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটায় জেলা প্রশাসনিক মহলেও শোরগোল পড়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতদের নাম সৌরভ দাস ও শিখা দাস। তাদের বাড়ি আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের চাঁদমারি রেল কলোনি এলাকায়।
এদিন বিকেলে আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস গোটা ঘটনার কথা আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।




হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় ২০ দিন ধরে আসানসোলের বাসিন্দা দম্পতি সৌরভ দাস ও শিখা দাস চিকিৎসার জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালে আসছে। প্রথম দিকে সবকিছু ঠিক থাকলেও, দিন কয়েক পরে সৌরভ দাস নিজের খেলা শুরু করে। একদিন সে সুপারের কাছে গিয়ে নিজেকে আসানসোল জেলা বা ডিস্ট্রিক্ট জজের ( সিবিআই) গাড়ির ড্রাইভার বা চালক কাম পিএ বলে পরিচয় দেয়। যদি জেলা জজ হিসাবে সৌরভ রাজীব চক্রবর্তীর নাম বলেছিলো। যদি এই নামে কেউ বর্তমানে আসানসোল আদালতে কোন জেলা জজ নেই। সিবিআই হিসাবে রাজেশ চক্রবর্তী আছেন।
এরপর একদিন সকালে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব বা হেল্থ সেক্রেটারি নারায়ণ স্বরুপ নিগমের নাম করে সুপারের কাছে ফোন আসে। সুপারকে বলা হয়, তিনি যেন নিজে উদ্যোগী হয়ে দাস দম্পতির সবরকমের চিকিৎসার ব্যবস্থা জেলা হাসপাতালে করেন। এইভাবে বলতে গেলে প্রতিদিন সকালে দুটি নম্বর থেকে সকালে সুপারকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়। স্বাভাবিক ভাবেই সুপার দাস দম্পতির চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরপর সুপার টানা কয়েকদিন ধরে জেলা হাসপাতালে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে দাস দম্পতিকে নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখান ও নানা ধরনের পরীক্ষা করেন। চিকিৎসা যাতে আরো ভালো করে হয়, তারজন্য সুপার বুধবার রাতে এক সহকারী সুপারকে বলে একটি মেডিকেল বোর্ড তৈরি করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সুপারের চেম্বারে সেই বোর্ডের চিকিৎসকেরা সৌরভ দাসকে পরীক্ষা করেন। অভিযোগ, সেই বোর্ডে থাকা এক চিকিৎসক সৌরভকে মুখে পড়ে থাকা মাস্ক খুলতে বলেন। তখন সৌরভ ঐ চিকিৎসকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন। এরপর বোর্ডের পরামর্শ মতো এদিন দুপুরে সুপার নিজে এ্যাম্বুলেন্স করে শহরের একটি বেসরকারি প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবে নিয়ে গিয়ে তার ইকো করান। এরপরই সৌরভের আসল রুপ বেরিয়ে পড়ে। জেলা হাসপাতালে ডেপুটি সুপার কঙ্কন রায়ের চেম্বারে থাকা এক কর্মী সৌরভকে চিনে ফেলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ডেপুটি সুপারকে বিষয়টি বলেন। ডেপুটি সুপার সব শুনে সুপারের চেম্বারে এসে সৌরভের পরিচয় জানতে চান। তখন সে আমতা আমতা করা শুরু করে। এরপর খোঁজ শুরু হয়।
জানা যায়, ২০২০ সালে করোনার সময় এই সৌরভ দাস ” সৌরভ মুখোপাধ্যায় ” নাম নিয়ে একই ঘটনা ঘটিয়েছিলো। যার তথ্য হাসপাতালের কাছে আছে। এরপর যেসব ফোন নম্বর থেকে স্বাস্থ্য সচিব ও জেলা জজের নাম করে ফোন করা হয়েছিলো, সেগুলি পরীক্ষা করা হয়। তখন দেখা, তার মধ্যে একটি নম্বর সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের নামে আছে। অন্যটি ভুয়ো। সবকিছু ধরা পড়ে গেছে, বুঝতে পারার পরেই সৌরভ শারীরিক অসুস্থতার ভান করে নাটক শুরু করে। তখন সুপার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলেন। এরপর যখন তাকে এমারজেন্সিতে আনা হচ্ছিলো যে, সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে। তখন তাদেরকে আটক করে আসানসোল দক্ষিণ থানায় খবর দেওয়া হয়।
এরপর পুলিশ আসে ও দাস দম্পতিতে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
বিকেলে সুপার বলেন, গোটা ঘটনার কথা লিখিত ভাবে পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিক। তবে চিকিৎসার নামে যা হলো তা ঠিক নয়।
পুলিশ জানায়, সুপার অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হচ্ছে।
আরো জানা গেছে, এই সৌরভ দাসের নামে পুলিশের কাছে প্রতারণা করার অভিযোগ আছে। পুলিশ এখন এইসব কিছু খতিয়ে দেখছে।