ASANSOL

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদায়ে কয়লা মাফিয়া ! তৃণমূলের অভিযোগ, পাল্টা বিজেপির জবাব

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে বিদায় জানাতে পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্ডালে কাজি নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে কয়লা মাফিয়া জয়দেব খাঁ ! কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও তার হাত থেকে দলের প্রতীক পদ্মফুল নিচ্ছেন। শুক্রবার রাতের এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু বিতর্ক। নির্বাচনের দুদিন আগে এই ছবি নিয়ে কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির যোগসাজশের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। স্বাভাবিক ভাবেই চরম অস্বস্তিতে পড়েছে পদ্ম শিবির। শুক্রবার সন্ধ্যায় রানিগঞ্জ শহরের রোডশো শেষে অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তৃণমূলের অভিযোগ, সেখানে তাকে কয়লা মাফিয়া জয়দেব খাঁ সহ ১৬ জন বিজেপি নেতা ও নেত্রী ছিলেন। যারা অমিত শাহকে অন্ডাল বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে গেছিলেন। রাজ্যের শাসক দল রানিগঞ্জ বিধানসভার বকতারগরের বাসিন্দা জয়দেবকে কয়লা মাফিয়া বলে অভিযুক্ত করেছে। এই জয়দেবের বাড়িতে সিবিআইয়ের অভিযানও হয়েছে। অন্ডাল বিমানবন্দরে হাজির থাকার জন্য বিজেপির লেটারহেডে ১৬ জন বিজেপি নেতা ও নেত্রীর নাম সম্বলিত একটি তালিকা ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। সেই চিঠি ইতিমধ্যেই সোশাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছে। সব নামের শেষে একেবারে নিচে বিজেপি আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হিসেবে বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের স্বাক্ষর রয়েছে। তার নামের স্ট্যাম্পও রয়েছে। দেখা গেল সেই তালিকায় জয়দেবের নাম রয়েছে ৫ নম্বরে। বেঙ্গল মিরর তরফে এই চিঠির সত্যতা যাচাই করা হয় নি। এছাড়াও যে একটি ছবিও সামনে এসেছে, তাতে অমিত শাহকে অন্ডাল বিমানবন্দরে জয়দেবের হাত থেকে পদ্মফুল নিতে দেখা যায়। বেঙ্গল মিরর তরফে এই ছবির সত্যতা যাচাই করা হয় নি।

তৃণমূলের রাজ্য কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তথা আসানসোল পুরনিগমের কাউন্সিলর অশোক রুদ্র বলেন, বিজেপি নেতৃত্ব বারবার তৃণমূলকে কয়লা-বালি-লোহা মাফিয়াদের সঙ্গে জড়িয়ে নানা অভিযোগ এনেছে। কিন্তু ইডি বা সিবিআই কেউই সেইসব অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। অন্যদিকে, অন্ডাল বিমানবন্দরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বিদায় জানাতে বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা কমিটির তৈরি করা তালিকায় জয়দেব খানও রয়েছেন। অবৈধ কয়লা ব্যবসায়ী হিসেবে জয়দেবের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এখন বিজেপি নেতারা কি বলবেন? তৃনমুল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসুও এই নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, আসানসোলের গোটা দেশের মানুষেরা দেখুক, কাদের সঙ্গে কয়লা মাফিয়াদের বোঝাপড়া আছে।

তৃনমুল কংগ্রেসের এই অভিযোগ নস্যাৎ করেন বিজেপির রাজ্য কমিটির নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, জয়দেব খাঁ কবে কয়লা মাফিয়া হলেন? ২০১৯ এর আগে তো তিনি কয়লা মাফিয়া ছিলেননা। জয়দেব কলকাতায় বিজেপির রাজ্য অফিসে গিয়ে বিজেপি যোগ দেন। তিনি আরো বলেন, মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তৃণমূল শুধু আসানসোলে নয়, গোটা রাজ্যেই একই কাজ করছে। বাপ্পা বলেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে জয়দেবের বিরুদ্ধে কোনও কয়লার মামলা ছিল না। দিলীপ ঘোষের হাত ধরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে একাধিক কয়লা মামলা রয়েছে। তিনি অনেক মামলার মুখোমুখি। তিনি জানান, সিবিআইয়ের কাছে সমস্ত প্রমাণও হস্তান্তর করেছেন তিনি। আদালতে মামলা চলবে। জয়দেব আইনি লড়াই লড়ছেন। এখনও পর্যন্ত জয়দেবের বিরুদ্ধে এমন কোনও অভিযোগ পায়নি পুলিশ। জয়দেব যদি সত্যিই কয়লা মাফিয়া হয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে পুলিশ প্রমাণ সহ আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন বলে বিজেপির জেলা সভাপতি প্রশ্ন তোলেন। তার আরো দাবি, সিবিআই কারোর বাড়িতে অভিযান চালালে সে তো অভিযুক্ত হয়না।তবে যাই হোক না কেন এই জয়দেব খাঁ নিজের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। জয়দেব দাবি করেছেন যে স্থানীয় বিজেপি নেতা হিসাবে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে অন্ডাল বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন।

জয়দেব বলেন যে, আমি ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম। বর্তমানে আসানসোল সাংগঠনিক জেলা কমিটি এবং বিজেপির নির্বাচন কমিটির সদস্য। দলের তরফে তাকে এই দায়িত্ব দেওয়ায় তিনি অন্ডাল বিমানবন্দরে যান। এ ছাড়া তিনি দাবি করেন, ২০১৯ সালের আগে আমার বিরুদ্ধে কয়লা চোরাচালান বা কয়লা সংক্রান্ত কোনো থানায় কোনো মামলা ছিল না। বিজেপিতে যোগদানের পর আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কয়লা সংক্রান্ত বহু মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অফিস ভাঙচুর করা হয়। বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে। তাকে কয়লা মাফিয়া বলা সম্পূর্ণ ভুল বলেও দাবি করেন জয়দেব। এদিকে, শনিবার রাতে নির্বাচনের প্রচার শেষ হবার পরে আসানসোলের রাহালেনের তৃণমূল কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, কয়লা খনিতে নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনী সিআইএসএফের। তারা সরাসরি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে যখন সেই কয়লা চুরি হচ্ছে। বক্তারনগরে জয়দেব খাঁয়ের অনেক অবৈধ খনি আছে। যেসব ডিপো খোলামেলা চলছে। তার দাবি, কেন চলবে না? যখন জয়দেব খায়ের মতো লোকের মাথায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর হাত থাকে । নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেন, আমি ও আমার দল বেআইনি কয়লার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি ও চালিয়ে যাবো। আওয়াজ তুলছি। কিন্তু মুখ খুলছেন না বিজেপি নেতৃত্বে। এই সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক, রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু দাস, ব্লক সভাপতি তথা আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পারিষদ গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায়, যুব তৃণমূল জেলা সভাপতি পার্থ দেবসী, সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি মহঃ মনু, ছাত্র সংগঠনের জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায়।

 

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *