ASANSOL

শত্রুঘ্ন সিনহার ৫ বিধানসভায় লিড, সবার আগে পান্ডবেশ্বর

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ ২০২১ এর ভোটে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধান সভার মধ্যে পাঁচটি  থেকে জয় পেয়েছিলেন তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। মাত্র দুটিতে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারনা ছিলো যে, এবারের লোকসভা নির্বাচনে রকম ফের কিছুটা হলেও হতে পারে। রাজ্যের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেস তাদের প্রার্থী বদল না করলেও, কেন্দ্রের শাসক বিজেপি আসানসোল পুনরুদ্ধারে অন্য প্রার্থী দেয়।
কিন্তু, সব হিসেবনিকেশ ভুল প্রমাণিত হয় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে। দেখা যায়, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের মতো আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের সাত বিধান সভার মধ্যে পাঁচটিতে লিড পেলেন শাসক দলের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা। এই পাঁচটি বিধানসভা হলো আসানসোল উত্তর, বারাবনি, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া ও পান্ডবেশ্বর। এই পাঁচটিতে ২১ র বিধানসভা ভোটে তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থীরা জিতেছিলেন। ২১ এর ভোটে জেতার অঙ্কের সঙ্গে ২৪ এ লিড পাওয়ায় কমবেশি হয়েছে। কিন্তু হাতছাড়া হয়নি। একইভাবে, বাকি দুটি বিধানসভায় লিড পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। সেই দুটি হলো আসানসোল দক্ষিণ ও কুলটি। ২১ এর ভোটে এই দুটিতে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা।


আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা এবারে সবচেয়ে বেশি লিড পেয়েছেন পান্ডবেশ্বর থেকে। এই বিধানসভার বিধায়ক হলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এখানে শাসক দলের প্রার্থী লিড পেয়েছেন ৪০ হাজার ২৫ ভোটের। এর পরে রয়েছে বারাবনি। আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায় এই বিধানসভার বিধায়ক। এখানে লিড হয়েছে ২৫ হাজার ৫২৩ ভোটের। তারপরে রয়েছে জামুড়িয়া। দলের কয়লাখনি সংগঠনের নেতা হরেরাম সিং এখানকার বিধায়ক। এই বিধানসভায় শত্রুঘ্ন সিনহার লিড ১১ হাজার ৮৭১ ভোটের। এরপরে লিড পাওয়ার হিসাবে রয়েছে রানিগঞ্জ ও আসানসোল উত্তর বিধান সভা। রানিগঞ্জ ও আসানসোল উত্তরে শাসক দলের প্রার্থী লিড পেয়েছেন যথাক্রমে ৪ হাজার ৪৫২ ও ৪ হাজার ৩৬৭ ভোটের। রানিগঞ্জের বিধায়ক হলেন আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান তাপস বন্দোপাধ্যায়। আসানসোল উত্তরের বিধায়ক হলেন রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক। তবে সরাসরি রাজ্য সরকার বা প্রশাসনিক কাজে যুক্ত থাকা দুই হেভিওয়েট নেতা বিধায়কের বিধানসভায় দলের প্রার্থী কম ভোটের লিড পাওয়ায় কমবেশি কিছুটা হলেও চিন্তায় শাসক দলের রাজ্য নেতৃত্ব।

আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া কুলটি বিধান সভা থেকে লিড পেয়েছেন ১৫ হাজার ৫৩ ভোটের। আর আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভায় বিজেপি প্রার্থীর লিড ১২ হাজার ১৫৭ ভোট। এই দুই বিধানসভার দুই বিজেপি বিধায়ক হলেন ডাঃ অজয় পোদ্দার ও অগ্নিমিত্রা পাল। অগ্নিমিত্রা পালকে বিজেপি এবার মেদিনীপুর থেকে প্রার্থী করেছিলো। কিন্তু তিনি সেখান থেকে জিততে পারেননি।
২০২১ এর বিধান সভা ও এই লোকসভা নির্বাচনের মাঝে ২০২২ সালে আসানসোল কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। সেই উপনির্বাচন হওয়ায় কারণ আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র দল ছাড়া। ঐ উপনির্বাচনে তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। তিনি প্রায় তিন লক্ষ ভোটে হারিয়েছিলেন বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালকে।
এবারের ভোটে বিজেপি নেতৃত্বর আশা ছিলো প্রার্থী বদল করে উপনির্বাচনের দলের হারের ধাক্কা সামলে ২০১৪ ও ২০১৯ এর ফলে পুনরাবৃত্তি হবে। কিন্তু তা হয়নি। তবে ব্যবধান অনেকটাই কমানো গেছে। ঠিক কি কারণে এই হার তার ময়নাতদন্ত করবে বিজেপি নেতৃত্ব বলে জানা গেছে।

পোস্টাল ব্যালেটেও এগিয়ে তৃনমুল কংগ্রেসের শত্রুঘ্ন সিনহা

এবারের লোকসভা নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালেটে ভোট দেওয়ার জন্য বিগত বছরগুলোর থেকে কিছু আলাদা বন্দোবস্ত করেছিলো। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি সহ ভোটের কাজে যারা সরাসরি যুক্ত থাকবেন, তাদেরকে পোস্টাল ব্যালেটে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হওয়ার পরে জানা গেছে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে ৫৪৫১ টি পোস্টাল ব্যালেটে ভোট পড়ে। গণনার সময় তার মধ্যে ২৪৩ টি বাতিল করা হয়। বৈধ পোস্টাল ব্যালট হয় ৫১৪৬ টি। তারমধ্যে ২৫৪০ টি ভোট পান আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের জয়ী তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা। পরাজিত হওয়া বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া পেয়েছেন ২০০৪ টি পোস্টাল ব্যালেটের ভোট। সিপিএমের প্রার্থী জাহানারা খান পেয়েছেন ৫১০ টি ভোট। লড়াইয়ে থাকা অন্য চার প্রার্থীকে পেছনে ফেলে পোস্টাল ব্যালেটে ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ” নোটা “। তার প্রাপ্ত ভোট ৬২।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *