দূর্গাপুরে নারী পাচারের চক্রের হদিশ, গ্রেফতার তিন
বিয়ে দেওয়ার নাম করে নিয়ে এসে পাচারের অভিযোগ, বসিরহাট জেলা পুলিশের তদন্তে
বেঙ্গল মিরর, দূর্গাপুর, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ* রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মেয়েদের ভুল বুঝিয়ে নিয়ে আসা হতো। অভিযোগ তাদেরকে ” বিয়ে দেওয়া হতো। তারপরে তাদের ভিন রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এই ধরনের একটা চক্র চলতো পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের বেনাচিতি সংলগ্ন ধুনরাপ্লটের ভাড়া বাড়ি থেকে। এই চক্রের মূল অভিযুক্ত সেপকো টাউনশিপের রঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলে অভিযোগ । এই ঘটনা জানাজানি হতেই রঞ্জন মুখোপাধ্যায়কে ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা গণপিটুনি দেয়।
জানা গেছে, আড়াই মাস আগে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের মিনাখাঁ এলাকা থেকে বছর আঠারোর এক ছাত্রী নিখোঁজ হয়। বসিরহাট থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্ত শুরু করে বসিরহাট থানার পুলিশ। তারই মধ্যে ঐ ছাত্রীর বাবাকে ভুয়ো আইনজীবীর পরিচয় দিয়ে মেয়ের বিয়ের রেজিস্ট্রির জন্য জন্ম শংসাপত্র পাঠানোর কথা জানানো হয়।
অভিযোগ রঞ্জন মুখোপাধ্যায় নিজেকে সেই ভুয়ো আইনজীবীর পরিচয় দিয়ে নিঁখোজ মেয়েটির বাবাকে ফোন করে। সেই শংসাপত্র না পাঠালে তার মেয়েকে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। মেয়ের বাবার মনে সংশয় তৈরি হওয়ায় সেই সব কিছুই পাঠাননি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেন পুলিশের সাথে। এর পর থেকে ঐ ছাত্রীর মোবাইল ফোনও বন্ধ হয়ে যায়। তদন্ত চালাচ্ছিল বসিরহাট জেলা পুলিশ। কয়েকদিন আগে মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে দুর্গাপুরের ধুনরাপ্লটের নাম উঠে আসে। বসিরহাট জেলা পুলিশের একটি দল ঐ ছাত্রীর বাবাকে নিয়েই সোমবার রাতে হাজির হয় দুর্গাপুরে। মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হয় তল্লাশি। দীর্ঘ সময় পর মঙ্গলবার বিকেলে ধুনরা প্লটের ঐ ভাড়াবাড়িতেই হানা দেয় দুর্গাপুর থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বসিরহাট জেলা পুলিশ। তখন ভাড়া বাড়ির ভেতরেই ছিল রঞ্জন মুখোপাধ্যায়। সেপকো টাউনশিপের বাসিন্দা এই রঞ্জন মুখোপাধ্যায় নিজেকে হিউম্যান রাইটসের যুগ্ম সম্পাদকের পরিচয় দেয়। তিনিই কি এই চক্র চালাতো?
বসিরহাট জেলা পুলিশের আধিকারিকরা তাকে জিজ্ঞাসা করে ঐ ছাত্রী কোথায় গেল? তার কাছ কোন উত্তর না পেয়ে গ্রেফতার করা হয় তাকে। এই ঘটনা জানাজানি হতেই স্থানীয়রাও রঞ্জনের ওপর চড়াও হয়। শুরু হয় গণপিটুনি। ততক্ষণে ভাড়া বাড়ির মালিক নাটু গরাই এবং যে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার কথা জানিয়েছিল প্রবীর দাস নামের আরও এক স্থানীয় ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করে।
সূত্রের খবর, এই রঞ্জন মুখোপাধ্যায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেয়েদের ভুল বুঝিয়ে এই ভাড়া বাড়িতে নিয়ে আসতো। তারপর তাদের বিয়ে দেওয়া হয় বলে পুলিশ সুত্রে পাওয়া খবর। তারপর এই ভাড়া বাড়ি থেকে নববিবাহিত দম্পতিকে বিভিন্ন রাজ্যে পাচার করে দেওয়া হতো। তিনজনকেই গ্রেফতার করে মঙ্গলবার রাতে বসিরহাটে নিয়ে যায় বসিরহাট জেলা পুলিশ। ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে ঐ ছাত্রীর সন্ধানে তল্লাশি চালানো হবে বলেও বসিরহাট পুলিশ জানায়। পাশাপাশি এই ঘটনার সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা ধৃতদের জেরা করে তদন্ত চালানো হবে।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, বসিরহাট জেলা পুলিশে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে তদন্ত করা হচ্ছে । এই চক্রে দূর্গাপুর ও তার আশপাশের এলাকার কেউ জড়িত আছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।