ASANSOL

রেলের যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন, হাওড়া স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রুপনারায়নপুরের বাসিন্দা, দুই পরিচিতর হাতে উদ্ধার

বেঙ্গল মিরর, রুপনারায়ণপুর, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ আবারো রেলের যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো। আরপিএফের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রূপনারায়ণপুর পিঠাকিয়ারি নেতাজী পল্লীর বাসিন্দা বাবলু ওরফে স্বপন চট্টোপাধ্যায় (৪৬) হাওড়া স্টেশনের ৮ নম্বর প্লাটফর্মে অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিলেন। অভিযোগ, তিনি, এতক্ষণ ধরে প্ল্যাটফর্মে পড়ে থাকলেও, রেলের কোন নিরাপত্তা বাহিনীর তা চোখে পড়েনি। কেউ তাকে দেখতে পেলেন না। এইসব প্রশ্ন উঠছে এখন।
এদিকে, এই অভিযোগ উঠার পরে, গোটা বিষয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র। তিনি বলেছেন, অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
তবে সময় মত তাকে উদ্ধার না করা না হলে তার পরিণতি কি  হতে পারতো তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। কিন্তু কিভাবে বাবলু ওরফে স্বপন চট্টোপাধ্যায়কে উদ্ধার করা হলো?


জানা গেছে, শুক্রবার সকালে কাজের সূত্রে রূপনারায়ণপুর থেকে ট্রেনে হাওড়ায় গেছিলেন রূপনারায়নপুরের বাসিন্দা দুলাল বারিক ও অমিত দে। দুপুরে তারা ট্রেনে রুপনারায়নপুর ফেরার জন্য হাওড়া স্টেশনে আসেন। ট্রেন ধরতে তারা যখন ৮ নং প্ল্যাটফর্মে আসেন, তখন হঠাৎই তাদের নজরে পড়ে এক ব্যক্তি প্লাটফর্মে শুয়ে আছেন। পরনে একটি বারমুডা ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা কৌতূহল বশতঃ কাছে গিয়ে দেখেন যে ব্যক্তি শুয়ে আছেন, তিনি তাদেরই পরিচিত। নাম বাবলু ওরফে স্বপন চট্টোপাধ্যায়। যিনি পেশায় গাড়ি চালক। ঐ অবস্থায় বাবলুবাবুকে সেখানে পড়ে থাকতে দেখে তারা খানিকটা অবাকই হন। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি রূপনারায়ণপুরের সমাজকর্মী স্বপন দাঁকে ফোন করে জানান। তাকে ছবিও পাঠান। স্বপনবাবু সঙ্গে সঙ্গে তাদের বলেন যে কোন ভাবেই হোক বাবলুবাবুকে রূপনারায়ণপুরে ফিরিয়ে নিয়ে আনতে হবে। শেষ পর্যন্ত বেশ কিছুটা তারা সঙ্গে সঙ্গে জল এনে মুখে ছিটিয়ে সেবা শুশ্রূষা করেন। তাতে বাবলুবাবু খানিকটা ধাতস্থ হন। ‌সেই অবস্থায় দুলাল ও অমিতবাবু তাকে মিথিলা এক্সপ্রেসে রূপনারায়ণপুরে নিয়ে আসেন শুক্রবার রাতে। এদিকে স্বপনবাবুর কথা মতো বাবলু চট্টোপাধ্যায়ের এক আত্মীয় অনলাইনে টিকিট কেটে অমিতবাবুদের মোবাইলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যাতে তাদের ট্রেনে ফিরতে কোন অসুবিধা না হয়। ‌


রাতে রুপনারায়নপুর স্টেশনে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বাবলুবাবুর ছেলে সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বাবলুবাবুকে স্টেশন থেকে সোজা পিঠাইকেয়ারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তার প্রাথমিক চিকিৎসাও করা হয়। মেডিকেল রিপোর্টের পাশাপাশি করা হয় একটি ইনজুরি রিপোর্টও। 
আরো জানা গেছে, মাসখানেক আগে বাবলু চট্টোপাধ্যায় কলকাতায় তার দিদি ও জামাইবাবুর কাছে গেছিলেন। ‌সেখানেই গাড়ি চালানোর কাজ করছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতের দিকে তিনি হাওড়া স্টেশনে পৌঁছান রূপনারায়ণপুরে ফেরার জন্য। এরপর তার আর কিছু মনে নেই। ‌
অনুমান করা হচ্ছে, প্লাটফর্মে অপেক্ষা করার সময় কোন অপরিচিত ব্যক্তি তাকে মাদক জাতীয় কিছু খাইয়ে বেহুঁশ করে। তার পর তার সঙ্গে থাকা টাকা,  মোবাইল ফোন, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ অন্যান্য নথিপত্র যা সঙ্গে ছিল সবকিছুই হাতিয়ে নেয়। ‌ এমনকি বাবলু বাবুর পড়নের জামা প্যান্টও খুলে নেওয়া হয়। ‌

তবে, স্বপনবাবুকে এভাবে হাওড়া স্টেশন থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসায় দুলাল বারিক ও অমিত দেকে কুর্নিশ জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা।
শুধুমাত্র বারমুডা পড়া অবস্থায় হাওড়া মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম স্টেশনের ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তাকে পড়ে থাকতে দেখা গেলেও আরপিএফ বা রেল রক্ষী বাহিনীর চোখে পড়লো না।
অথচ, বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই রেলের তরফে রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হয়, স্টেশনে স্টেশনে যাত্রী নিরাপত্তায় তারা কি না করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *